প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ফার্স্ট হানড্রেড ডেজ’

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৫, ১২:১৫ , অনলাইন ভার্সন
দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিন ৩০ এপ্রিল পূর্ণ হয়। যেকোনো প্রেসিডেন্টের পারফরম্যান্স বিচারের মাপকাঠি হিসেবে তার প্রথম ১০০ দিনের কর্মতৎপরতা বিশেষ গুরুত্ববহ। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি করে প্রযোজ্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে-পরে ট্রাম্প মার্কিন জনগণকে সর্বক্ষেত্রে উন্নততর জীবন উপহার ও দেশকে সোনালি অধ্যায় তথা সমৃদ্ধির এক অভূতপূর্ব নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখান। হোয়াইট হাউসে তার প্রথম ১০০ দিনে এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি কীভাবে অগ্রসর হন, সেটা দেখার জন্য সব মহলে ব্যাপক কৌতূহল ও আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প তার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বহুসংখ্যক (প্রায় ১১১টি) এক্সিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেন, যার দু-একটি (বার্থরাইট সিটিজেনশিপ বাতিল, ইউএসএইড সংস্থার বিলুপ্তি ইত্যাদি) তার নির্বাহী ক্ষমতাবহির্ভূত হওয়ায় আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে কোর্ট কর্তৃক স্থগিত হয়।
ইমিগ্রেশন তথা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের দেশ থেকে অবিলম্বে বিতাড়নের ঘোষণা ছিল ট্রাম্পের অ্যাজেন্ডার শীর্ষে থাকা অন্যতম একটি ইস্যু। অন্য শীর্ষ ইস্যুর মধ্যে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ ও কতিপয় ফেডারেল সংস্থার বিলোপ সাধন করে কর্মী ছাঁটাই ও লে-অফের মাধ্যমে ফেডারেল ব্যয় সংকোচন ইত্যাদি।
ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই ব্যাপক তৎপরতা শুরু করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ লক্ষ্যে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে গ্রেফতার ও তাদের অনেককে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট বিতাড়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ বহুলাংশে হ্রাস পাওয়ায় ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রতি সাধারণভাবে মার্কিন নাগরিকদের সমর্থন রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে ট্রাম্পের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে একাধিক ফেডারেল সংস্থার বিলুপ্তি ও বিপুলসংখ্যক কর্মচারীর লে-অফ ও চাকরিচ্যুতির ঘটনায় মার্কিন ফেডারেল প্রশাসনে একধরনের অস্থিরতা ও ত্রাসের সঞ্চার হতে দেখা যায়। কর্মচারী ছাঁটাই, বাজেট কমানো ও একাধিক সংস্থার বিলুপ্তি ও আকার হ্রাসের ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কিছুসংখ্যক সোশ্যাল সিকিউরিটি ও মেডিকেইড অফিস বন্ধ করে দেওয়ায় আগামী দিনে সোশ্যাল সিকিউরিটি ও মেডিকেইড সুবিধা হ্রাস করা হতে পারে বলে জনমনে ব্যাপক শঙ্কার সৃষ্টি হতে দেখা যায়, যদিও এসব ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সুবিধা হ্রাসের সম্ভাবনা নেই বলে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ফেডারেল প্রশাসন-সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাম্পের বিশেষ প্রিয়ভাজন কর্মকর্তা ইলন মাস্ক প্রশাসন সংক্রান্ত তার কর্মকাণ্ডের জন্য বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি নিন্দিত ও সমালোচিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, যার বহিঃপ্রকাশ তার আশু অপসারণের দাবিতে সারা দেশে চলমান প্রতিবাদ বিক্ষোভ থেকে আন্দাজ করা যায়। কার্যত ট্রাম্প প্রশাসনে তিনি একধরনের ভিলেন হয়ে উঠেছেন, যার প্রভাব তার ব্যবসার ওপর পড়তে দেখা যায়। তার টেসলা গাড়ির ব্যবসা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। টেসলার স্টকের মূল্যে ব্যাপক ধস নামা ছাড়াও তার গাড়ির বেচা-বিক্রি বর্তমানে একরকম স্থবির হয়ে গেছে বলা যায়। জনরোষের জেরে ইতিমধ্যে বেশ কিছু টেসলা গাড়ি ও এই গাড়ির ডিলারশিপ প্রতিষ্ঠান বিক্ষুব্ধ জনতা কর্তৃক ভাঙচুরের শিকার হয়। ট্রাম্প সমর্থকদের অনেকে অবশ্য বিভিন্ন সংস্থায় প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার অপচয়ের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করতে সক্ষম হওয়ায় তার প্রশংসা করেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ট্রাম্প কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চলমান ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হবেন বলে জোর প্রচার চালান। ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও এসব রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধে তেমন কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্পের এ-সংক্রান্ত বক্তব্য নেহাত বাগাড়ম্বর (Rhetoric) বলে প্রতিপন্ন হওয়ায় তার অন্যান্য প্রতিশ্রুতি মার্কিন নাগরিকদের অনেকের কাছে বহুলাংশে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
ট্রাম্পের গৃহীত যে পদক্ষেপটি সবচাইতে বেশি বিতর্কিত, সব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা। ট্রাম্প মনে করেন, বিগত দিনে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো তাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নামমাত্র শুল্কে বিক্রির সুযোগ পেলেও সেসব দেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করায় সেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। ট্রাম্প এই অসম অবস্থার আশু অবসানের জন্য ২ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে শুল্ক হার কার্যকরের ঘোষণা দিয়ে দিনটিকে ‘লিবারেশন ডে’ বলে উল্লেখ করেন। তার ঘোষণার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ চীনসহ বেশ কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি বর্ধিত হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে বিশ্ব অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিপর্যয়কর বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা হয়, যে কারণে অনেকে ওই দিনটিকে ‘লিবারেশন ডে’র পরিবর্তে ‘Day of Ruination’ বলার প্রয়াস পান। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ঘটনায় অর্থনীতিতে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় বিশ্বব্যাপী স্টক মার্কেটে স্টকের ব্যাপক দরপতন ঘটে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ সর্বত্র শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন, যে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ট্রিলিয়ন ডলার বলে মনে করা হয়। অনেক মার্কিন নাগরিকের রিটায়ারমেন্ট সেভিংসের (401K) মূল্যও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যানসহ বহু অর্থনীতিবিদ, এমনকি ট্রাম্পের নিজ দলের অনেক নেতা (সিনেটর টম টিলিস, টেড ক্রুজ, র‌্যান্ড পল প্রমুখ) বাছবিচারহীন এহেন শুল্ক আরোপের ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মুদ্রাস্ফীতি ও জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি হবে বলে এর সমালোচনা করেন। শুল্ক নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া, স্টক মার্কেটের ফ্রি ফল ও নিজ দলের অনেক নেতার সমালোচনা ও বিরোধিতার মুখে, বিশেষ করে মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ট্রাম্প ৯ এপ্রিল চীন ছাড়া অন্য সকল দেশের ওপর বর্ধিত হারে শুল্ক আরোপ কার্যকরের ঘোষণা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করা হয়। চীনের ব্যবসায়িক নীতি-কৌশল পরিবর্তন, বিশেষ করে চীন থেকে মৃত্যুঘাতী মাদক ফ্যান্টানলের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ রোধে চীনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতার কারণে চীনের ওপর অতি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয় বলে জানানো হয়। চীন পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তিন মাস সময়ের মধ্যে দর-কষাকষি ও আলোচনার মাধ্যমে অন্য দেশগুলোর ওপর শুল্ক হার নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সেসব দেশের ওপর বিশ্বজনীন ১০ ভাগ শুল্ক হার বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ বহু দেশ শুল্ক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ দেখিয়েছে। সাম্প্রতিক একাধিক জনমত জরিপে ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিনের কর্মতৎপরতা অধিকাংশ মার্কিন নাগরিকের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তাদেরকে হতাশা ও অসন্তোষ ব্যক্ত করতে দেখা যায়। ট্রাম্পের স্বর্ণযুগ ও সমৃদ্ধির বার্তা বহুলাংশে তাদের কাছে নিছক গালগল্প বলে প্রতিপন্ন হয়। জন-অসন্তোষের এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরের ৩ নভেম্বরের মিড টার্ম নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পরাজয়কে ঠেকানো বেশ কঠিন হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। লেখক : কলামিস্ট
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078