ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৫, ১২:১৮ , অনলাইন ভার্সন
চরম বৈরী, তিন-তিনটি যুদ্ধ করা, পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী, দুটি বিপরীতমুখী ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে একটি সন্ত্রাসী ঘটনায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে; সামান্য ভুল সিদ্ধান্ত বা আত্মগরিমায় পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হিরোশিমা ও নাগাসাকির মতো মানবতাবিরোধী আরেকটি বীভৎসতা ঘটে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন। নিউইয়র্ক টাইমস ও অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন রিপোর্ট করেছে, কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোল সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যরা ইতিমধ্যেই গুলি বিনিময় শুরু করেছে। ভারত বলেছে ওরা গুলি শুরু করেছে, ভারত তার কড়া জবাব দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক উভয় দেশকে শান্ত থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। ইরান দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। আমেরিকার পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র শুধু সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। একজন ভারতীয় সাংবাদিকের বারবার উসকানিমূলক প্রশ্নের জবাবে ওই মুখপাত্র ভারত, পাকিস্তান কারও পক্ষ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
বিতর্কিত কাশ্মীর ও বর্তমান ঘটনা : ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগাভাগির সময় ব্রিটিশ শাসকেরা কাশ্মীরকে বিতর্কিত রেখেই চলে যায়। মূল কথা ছিল মুসলমান অধ্যুষিত অংশ যাবে পাকিস্তানে এবং বাকিটা হবে ভারতের অংশ। কিন্তু ব্রিটিশরা মুসলমান অধ্যুষিত কাশ্মীরের প্রশাসক নিয়োগ দেয় একজন হিন্দু রাজা হ্যারি সিংকে, যিনি কৌশল করে ভাগাভাগির সময় বলেন, তিনি কোনো অংশেই যাবেন না, স্বাধীন থাকবেন। কিন্তু কাশ্মীরের সিংহভাগ মুসলমান জনগোষ্ঠী হিন্দু রাজার অধীনে থাকতে চায়নি। ফলে পাকিস্তান ও কিছু কাশ্মীরি মিলিশিয়া মিলে ওই রাজার বিরুদ্ধে আক্রমণ করলে রাজা ভারতের সাহায্য চান। ভারত সামরিক সাহায্য দিয়ে রাজাকে বিপদমুক্ত করলে ওই রাজা ভারতের অংশ হতে চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু পাকিস্তান কখনোই কাশ্মীরের দাবি থেকে সরে আসেনি। পরে ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন অনুযায়ী ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ সীমারেখা মেনে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতি মেনে চলে। এই কাশ্মীর নিয়ে সংঘাত শুধু পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, চীনও এই বিতর্কে জড়িত। বর্তমানে ভারত কাশ্মীরের ৫৫%, পাকিস্তান ৩০% এবং চীন ১৫% নিয়ন্ত্রণ করে। চীনের অংশে জনবসতি খুব থাকায় চীন ও ভারতের মধ্যে মাঝেমধ্যে হাতাহাতি বা লাঠালাঠির যুদ্ধ হয়। তবে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী কিছু গোষ্ঠী এবং পাকিস্তানের মদদপুষ্ট কিছু জঙ্গি সংগঠন বিভিন্ন সময়ে চোরাগোপ্তা হামলাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে এবং ভারতও তাদের ‘র’ ব্যবহার করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে পিছিয়ে নেই। ২০২৪ সালের আগস্টে ওয়াশিংটন পোস্ট একটি খবর ছাপে। ওই খবরে বলা হয়, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে ৬ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করে, যা ইসলামাবাদ ওয়াশিংটনের সঙ্গে শেয়ার করেছে, কিন্তু ওয়াশিংটন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। গত মাসে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে একদল সন্ত্রাসী শতাধিক যাত্রীসহ একটি ট্রেন হাইজ্যাক করে। পরে সামরিক বাহিনীর ঝটিকা আক্রমণে তা নিয়ন্ত্রণে আনলেও বহু লোক হতাহত হয়। গত এক বছরের মধ্যে ভারতের ‘র’ কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় একজন শিখ নেতাকে হত্যা এবং আমেরিকার মাটিতে আরেকজন শিখ নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে, যা আমেরিকা হাতেনাতে ধরে ফেলে।
বর্তমান উত্তাপের সূত্রপাত কাশ্মীরের ভারতশাসিত অঞ্চলের একটি নৈসর্গিক দৃশ্যে ভরপুর পহেলগাম পর্যটন কেন্দ্রে, যেখানে ৪ জন জঙ্গি ২৬ জন ভারতীয়সহ একজন স্থানীয় মুসলমান কাশ্মীরি পর্যটন সহকারীকে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড অন্যান্য সময়ের চেয়ে এবার একটু ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার আলোকে। ভারত ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়া পাকিস্তানকে দায়ী করে কিছু পদক্ষেপ ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানও পাল্টা কিছু পদক্ষেপসহ কড়া জবাবের প্রতিশ্রুতিসহ সামরিক স্থাপনাগুলোকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো কখনোই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তেমন প্রচার পায় না, কিন্তু ভারতের মাটিতে কিছু ঘটলেই তা ব্যাপক তোলপাড় হয়। এই পহেলগামের ঘটনাটি এমন সময় ঘটল, যখন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমস ডেভিড ভ্যান্স ভারত সফর করছিলেন।
নেপথ্যের কারণ : পহেলগামের এই ঘটনা পাকিস্তানের মধ্যে বা ভারতের কোনো রাজনৈতিক কৌশলের কারণে ঘটেছে কি না, তা বলা খুবই দুষ্কর। কিন্তু ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাটি গত মাসে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে দুই সপ্তাহ অন্তর দুটি রিপোর্ট ছাপে। প্রথম রিপোর্টে লেখা হয়, ১৯৮৩ সালে ভারত ও ইসরায়েল যৌথভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পটি ধ্বংস করার পরিকল্পনা আঁটে। কিন্তু সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে পাকিস্তান আমেরিকার মিত্র থাকায় সিআইএ সে পরিকল্পনা ফাঁস করে দিলে ভারত-ইসরায়েলের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। দ্বিতীয় রিপোর্টে লেখা হয়, বাইডেন প্রশাসন থেকে শুরু করে বর্তমান প্রশাসন পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং কীভাবে সেটা ধ্বংস করা যায়, তা নিয়ে নানামুখী পরিকল্পনা চলছে। ওদিকে চীনের সঙ্গে আমেরিকার একটি বোঝাপড়া নিয়ে ভারত কী ভূমিকা পালন করে, তা নিয়ে ওয়াশিংটনে আছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ভারত যদি চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার পাশে দাঁড়ায়, তাহলে হয়তো পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্প বিলীন করতে ভারতের খুব একটা বেগ পেতে হবে না। ট্রাম্পই ভরসা : পহেলগামের ঘটনা নিয়ে ভারত যা করেছে, তাতে মনে হয়, ভারত সামরিক পদক্ষেপে যাবে না। তবে সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ পাকিস্তানের জন্য জীবন-মরণ সমস্যা। ভারত যদি এ থেকে সরে না যায়, একটি সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। আবার পাকিস্তানও ১৯৭২ সালে ইন্দিরা-ভুট্টোর শিমলা চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছে, যা দুই দেশকে আবারও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ইরান দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলেও বাস্তবে কোনো ফল বয়ে আনতে পারবে না। এখন শান্তি না যুদ্ধ, তা একমাত্র নির্ভর করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর।
-নিউইয়র্ক.
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078