স্বপ্ন অধরা রেখেই পৃথিবীর মায়া ছাড়লেন মোহাম্মদ সাদ

প্রকাশ : ১৮ অগাস্ট ২০২৩, ১১:১৬ , অনলাইন ভার্সন
মোহাম্মদ সাদের স্বপ্ন ছিল একদিন ইলন মাস্ক কিংবা মার্ক জুকারবার্গের মতো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হবেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। মাত্র ১৮ বছর স্বপ্ন অধরা রেখেই পৃথিবীর মায়া ছাড়লেন মোহাম্মদ সাদ বয়সে তাকে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হলো। বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল তার। গত ৭ আগস্ট রাতে জ্যামাইকার ১৬৮ স্ট্রিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে মারা গেছেন।
মোহাম্মদ সাদের পারিবারিক সূত্র জানায়, তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। অত্যন্ত মায়াবী চেহারা। মেধাবী এই তরুণ চলতি বছর হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। এ বছরের ফল সেশনে তার কলেজে ক্লাস শুরু করার কথা ছিল। কলেজে যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। মোহাম্মদ সাদের এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। তার বাবা একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন।
সাদের শখ ছিল স্কুটার চালানো। এ জন্য স্কুটারও কিনেছিলেন। মাঝেমধ্যে তিনি স্কুটার চালাতেন। দুর্ঘটনার দিন তিনি নিজের নয়, তার বন্ধুর স্কুটার চালাচ্ছিলেন। তিনি বন্ধুর বাসা থেকে নিজের বাসায় ফিরছিলেন। জ্যামাইকার ১৬৮ স্ট্রিটে যেখানে দুর্ঘটনার শিকার হন, এর পাশেই তার বন্ধুর বাসা। রাত আটটার দিকে সাদ তার বন্ধুর বাসা থেকে বিদায় নিয়ে নিজ বাসার উদ্দেশে রওনা হন। যাওয়ার পথে জ্যামাইকায় একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তার স্কুটারের।
সূত্র জানায়, ১৬৮ স্ট্রিটে যে রাস্তায় তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন, গাড়িটি ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে না। সেটি অন্য রুটের গাড়ি ছিল। ঘটনার সময় বাসে কোনো যাত্রী ছিল না। কেন বাসটি ওই রাস্তায় গিয়েছিল, সেটি খতিয়ে দেখছে এমটিএ সংশ্লিষ্টরা। এদিকে এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না তা বলতে পারেননি সাদের পরিবারের ওই সূত্র। তিনি বলেন, ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেখানে গাড়ির স্পিড লিমিট ২০-২৫ এর বেশি হওয়ার কথা নয়। যদি সে স্কুটার নিয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়েও যায়, তাহলে তার মারা যাওয়ার মতো আঘাত পাওয়ার কথা নয়। বড়জোর আহত হতে পারে। জানা গেছে, ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়ার পর সাদ উঠে বসেছিলেন অল্প সময়ের জন্য। এরপর আবার হেলে পড়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ঘটনার দিন রাত আটটা থেকে সাদের বাবা-মা সন্তানের ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। ফিরতে দেরি হওয়ায় তারা ছেলেকে ফোন দেন কিন্তু ফোন পিকআপ করেননি সাদ। ছেলের ফিরতে দেরি দেখে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু তারা জানতেও পারেননি ততক্ষণে তাদের প্রিয় আদরের বড় ছেলেটি আর নেই।
এভাবেই রাত ১১টা পর্যন্ত ছেলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন বাবা-মা। রাত ১১টার পরপরই সাদদের বাসায় কলিং বেল বাজে। বাবা-মা মনে করেন, ছেলে বুঝি ফিরেছে। কিন্তু সেই কলিং বেল একবার নয়, পরপর তিনবার বাজে। এ কারণে তারা দরজা খোলেননি। কারণ, সাদ তিনবার দরজায় বেল বাজান না, একবারই বাজাতেন। তারা দরজা না খুলে অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর দরজায় বারবার জোরে জোরে নক করার কারণে বাবা-মা দরজা খুলে দেখেন বাইরে পুলিশ দাঁড়িয়ে। পুলিশ তাদেরকে ছেলের মৃত্যুর মর্মান্তিক খবরটি দেয়। সন্তানের মৃত্যুসংবাদে মুহূর্তেই পুরো পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন মা-বাবা।
মোহাম্মদ সাদের মরদেহের পোস্টমর্টেম শেষে ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে তার মরদেহ ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে সাদের মৃত্যুর পর তার মা তাহমিনা আক্তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘জ্যামাইকা এলাকাবাসী নিউইয়র্ক। আসসালামু আলাইকুম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, ইন্না লিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল রাত নয়টার দিকে আমার বড় ছেলে মোহাম্মদ সাদ, ১৮ বছর বয়স, এমটিএ বাসের সাথে এক্সিডেন্ট করে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেছে। এমটিএ বাসের সাথে আমাদের এলাকার ১৬৮ স্ট্রিট এন্ড হিলসাইড, ইকনা মসজিদের কর্নারে এক্সিডেন্ট সংঘটিত হয়, আমার ছেলেটা বিশ পাড়ার হাফেজ ছিল, আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করেন, তার ওপর রহম করেন, তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে দাখিল করেন। আমার ছেলের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন এবং তার জানাজায় অংশগ্রহণ করবেন। তার জানাজা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে হবে, পরবর্তী পোস্টে আমি টাইমটা জানিয়ে দেব, ইনশাল্লাহ।’
পারিবারিক সূত্র জানায়, সাদ ছিলেন অনেক মেধাবী। কোরআন শরিফের ২০ পাড়া তার মুখস্থ ছিল। ঘটনার দিন তিনি সেদ্ধ ডিম খেয়ে বাইরে গিয়ে জিম করেন। তারপর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে থেকে আগে আগে ফিরবেন বলে আটটার দিকে রওনা হয়ে গেছেন। নিজের স্কুটার না নিয়ে বন্ধুর স্কুটার নিয়ে গেছেন সেটা বেশি জোরে চলত বলে। যদিও তাকে তার বাবা-মা স্কুটার চালাতে নিষেধ করতেন। তিনি স্কুটার চালালেও তার বাবা-মা ভয়ে ভয়ে থাকতেন।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041