ফালুর ঈদ

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ১১:২৩ , অনলাইন ভার্সন
বৈশাখ মাস শেষ হতে আর কয়েকটা দিন বাকি। খুব বেশি গরম পড়ছে। ইছাপুর গ্রামের সর্বশেষ বাড়িটা ফালুর, কুশিয়ারা নদীর কাছাকাছি। প্রচুর গাছের ছায়ায় চার ভাইয়ের চারটা মাটির ঘর, আর এক চিলতে উঠান। জোসনা রাতে গাছের ছায়ায় কী ছবি আঁকে বৈশাখী বাতাস। ফালুর বয়স কত হবেÑপঞ্চাশ বা এর কাছাকাছি। চার ভাইয়ের মাঝে ফালুর অবস্থা ভালো।

ফালুর দুই মেয়ে জরি, পরি আর ওর বউ জয়তুন। এ নিয়ে তার সুখের সংসার বললে ভুল হবে, কারণ এদের সাথে আরও আছে একটা গাই গরু, একটা বাছুর আর দুইটা বলদ। ফালুর বিয়ের সময় জয়তুনের বাবা গাভিন গাই দিয়েছিলেন। সেই গাই গরু থেকে শুরু, এখন পর্যন্ত এই গরু দিয়ে চলছে গরুর দুধ বিক্রি, দুই বলদ দিয়ে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ। সব মিলে খুব ভালোভাবে চলে যায় ফালুর সংসার। বলদ দুইটারে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসে। ফালু দুই বলদের দুইটা নাম রেখেছে-মধু আর মাল। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এরা বোবা প্রাণী হলে কী হবে, নাম ধরে ডাকলে দৌড়ে কাছে আসে।

গত কয়েক রাতের মতো আজও ফালুর চোখে ঘুম নেই। সে সারা রাত মধু আর মালের কাছে বসে থাকে। যখন অবচেতন মনে চোখ বুজে আসে, সে অনুভব করে, মধু কী এক পরম ভালোবাসায় তাকে আদর করছে। তবে কি এই বোবা প্রাণী বুঝে গেছে, আসছে হাটে তাদের বিক্রি করে দেবে ফালু। এমন করে আধো ঘুমে ভোর হয়। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। জরির এসএসসি পরীক্ষার ফি দিতে হবে। আর এ বছর না হলেও একদিন তো বিক্রি করতেই হবে।

ফালু, জয়তুন, জরি-পরি সবার চোখে জল। আজ বিকেলে মধু ও মালকে নিয়ে ফালু হাটে যাবে। জয়তুন জোহরের আজানের আগেই ভাত বেড়ে রেখেছে, কিন্তু ফালু এখনো ঘরে আসেনি, সেই যে সকাল থেকে মধু আর মালকে গোসল করিয়ে তেল দিয়ে দিয়েছে। এর পর থেকে গোয়ালঘরে ওদের পাশে বসে আছে। এবার জয়তুন স্বামীর কাছে গিয়ে পিঠে হাত রাখতেই চমকে উঠে জয়তুনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। জয়তুন আর ফালুর কান্না শুনে সবাই এল। সবার সাথে মধু-মালের চোখেও কান্না। ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে সরু পথ, যেন কোনো এক কিশোরী লম্বা চুলে দুই বেণি বেঁধেছে। আর সোজা সিঁথি দুই ভাগ করে দিয়েছে মাথার চুল। এই সিঁথি পথে আসা-যাওয়া, যে হাসি ঠোঁটের কোণে লেপ্টে থাকে, আজ তা একেবারে ম্লান। মধু আর মাল আগে হাঁটছে, ঠিক পেছনে হাঁটছে, ফালু। আর একেবারে পেছনে জয়তুন, জরি, পরি, ফালুর ভাই, ভাইদের বউ, তার ভাতিজা-ভাতিজি। সবাই সমসুরে কাঁদছে। এ যেন এক শবযাত্রা। কোরবানির ঈদের আর মাত্র চার দিন বাকি। পশুর হাট ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট। প্রায় ৩০০ গরু আজকের পশুর হাটে। মধু, মালের চেয়েও অনেক বড় বড় ষাঁড় উঠেছে। কিন্তু সব ক্রেতার দৃষ্টি মধু আর মালের দিকে। ফালুর মন ভালো নেই, তাই দাম হাঁকছে-দুই লাখ বিশ। এর চেয়ে এক টাকাও কম না। ফালুর এই দাম হাঁকা নিয়ে সবাই মন্দ কথা বলছে। সেদিকে ফালুর মন নেই। এমন টিকা-টিপ্পনীর মাঝে ফালুর চোখকে অবাক করে দিয়ে অপরিচিত এক লোক গরু দুটি কিনে নিল। অশ্রুসিক্ত নয়নে ফালু মধু ও মালের রিসিট করে দিল। টাকা হাতে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে ফালু।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078