আব্বার কথা

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ১১:২৫ , অনলাইন ভার্সন
আমার বাবার বাইপোলার ডিসঅর্ডার ছিল। বছরে দু-তিন মাসের মতো সময় যেত ওনার ‘পাগলামি’ দিয়ে। সেই শব্দটা তখন জানতাম না, শুধু বুঝতামÑবছরে কয়েক মাস বাবার আচরণ বদলে যেত। তিনি রেগে যেতেন, একা একা কথা বলতেন, হঠাৎ খুব হাসতেন, আবার হঠাৎ কেঁদে ফেলতেন। সেই সময়টুকু আমাদের পরিবারের জন্য ছিল ঝড়ের মতো-উথালপাতাল, অনিশ্চয়তা আর চোখের জলে ভেজা।
তবে সেই কয়টা মাস বাদ দিলে আমার বাবা ছিলেন অন্য রকম। অদ্ভুত রকম মায়াবী, দয়ার মতো। বাড়ির সবার জন্য বাবার ভালোবাসা, মায়া ছিল দেখার মতো। তখন আমাদের ঘরে টানাটানি, মায়ের চোখে ভয়ের ছায়া, দাদির মুখে একরাশ চিন্তা। শুধু সেই সময়টুকু সরিয়ে দেখলে, আমার বাবা ছিলেন ঠিক উল্টো মানুষ। বাড়ির মুরব্বিরা অভিযোগ দিতেন, অসুস্থ হলে বউকে বেশি যন্ত্রণা দাও, তাই তুমি বউয়ের কাছে মাফ চাইবায়। তাই বাবা সব সময় মায়ের সামনে অপরাধীর মতো থাকতেন। আমি দেখেছি, বাবা যখন ভালো থাকতেন, তখন মাকে চোখের মণির মতো দেখতেন। মাকে হাতের তালুতে রাখতেন। বাসার কাজে সাহায্য করতেন। পুকুর থেকে মায়ের কাপড় ধুয়ে এনে উঠানে দড়িতে ঝুলিয়ে দিতেন। মা হয়তো রান্না করছেন, আর বাবা এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরছেন।

মাকে নিয়ে তার ভালোবাসার প্রকাশ এতটাই সরল আর সাহসী ছিল, যেটা হয়তো এই যুগেও অনেকেই লুকিয়ে রাখে।
আমার চোখের সামনেই তিনি মাকে চুমু খেতেন। মা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলেও বাবার চোখে থাকত গর্ব। দাদি মাঝেমধ্যে দেখে হাসতে হাসতে বলতেন, ‘বউয়ের পায়ের নিচে পড়ে থাকিস তুই, এমন ছেলে আমি দেখি নাই!’
বাবা হেসে উঠতেন। আরও জোরে জড়িয়ে ধরতেন মাকে। নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলতেন, ‘আমি জানি না রে আমার কী হয়? কেন তোকে কষ্ট দিই? তুই আমার বাচ্চাগুলারে দেখে রাখিস, ওদের মানুষ বানাস। এত এত ঔষধ খেতে হয়... আমি মনে হয় বেশি দিন বাঁচব না।’
আব্বা কথা রেখেছিলেন।

আর আম্মাও। আমাদের নিয়ে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে আমাদের মানুষ বানানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা চার ভাইবোন আজ নিজেদের মানুষ ভাবতে পারিÑমানবিক, সংবেদনশীল আর শ্রদ্ধাশীল।
আমার বাবার সমস্ত অসুস্থতার পরেও তার ভালোবাসা ছিলো নিখাঁদ। আর মা? তিনি বরাবরই সেই ভালোবাসার প্রতিদিনের সাক্ষ্য। দাদির চোখে ছেলের জন্য কষ্টের হাসি ছিল, মায়ের চোখে ধৈর্য আর বাবার চোখে ছিল অপরাধবোধে মেশানো অগাধ ভালোবাসা। আজ বাবা দিবসে মনে পড়ে, আমার বাবা নিখুঁত ছিলেন না। কিন্তু ভালোবাসায় তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, মানসিক রোগ একজন মানুষকে ছোট করে না। একজন মানুষ কষ্টের মাঝেও ভালোবাসতে পারে, হাসাতে পারে, গড়তে পারে।
আর মা? মা বরাবরই সেই মাটির মতো, যেখানে ভালোবাসা জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে।
আমার বাবার হাতে হয়তো আমাদের জন্য দামি উপহার ছিল না, কিন্তু ছিল একরাশ ভালোবাসা। আর মা ছিলেন সেই ভালোবাসার পাহারাদার। এই বাবা দিবসে, আমি আমার আব্বাকে মনে করি গর্ব আর ভালোবাসার সাথে।

বাবা দিবসে তাই আজ মনে পড়ে যায়, বাবা শুধু একজন পিতা ছিলেন নাÑতিনি ছিলেন আমার ভালোবাসা শেখার প্রথম শিক্ষক।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078