বাবার স্মৃতি ‘দুটি বই’

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ১১:২৭ , অনলাইন ভার্সন
বাবা আমাদের পড়াতেন। সপ্তাহে একদিন আমাদের নিয়ে বসেন। গ্রামার পড়ান। ট্রান্সলেশন (Translation) শেখান। অনেকদিন হয়েছে। বাবা ডাকছেন না। তিন ভাই-বোন চোখাচোখি করি। কারণ বুঝতে পারছি না। ছোট তিন ভাই-বোন ভয় পাচ্ছি। একসময় ডাকলেন। বইটি খুঁজে পাচ্ছি না। গ্রামার বইটির নাম ভুলে গেছি। বাবা আলটিমেটাম দেন। মাসখানেক হয়ে গেছে। ভাই-বোনের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ছোট মামা আমাদের বয়সী। মায়ের ছায়ায় থাকতেন। একই সঙ্গে স্কুলে যাই। ছোট মামা মুচকি হাসছে। সবাই বুঝতে পেরেছি। এটা ছোট মামার কাজ। বইটি লুকিয়ে রেখেছে। অনেক অনুরোধ করলাম। বইটি পেলাম না। একসময় বাবা বইটির কথা ভুলে যায়। আমাদের কাছে অষ্টম আশ্চর্য। বাবা ভুলে যেতে পারেন না। মামাকে জিজ্ঞেস করলাম- বাবা, কীভাবে ভুলে গেলেন? কী করে সম্ভব?
ছোট মামা বলেন- আমি জাদু করেছি?
-কোথায় সে জাদু পাওয়া যায় মামা?
- আমি বলব না।
কেন মামা?
বলব না! কারণ- একদা আমার পিঠে বেত্রাঘাত চালাবে। কোনদিনও বইটি দেবো না।
-কেন মামা?
-আমি গ্রামার ভালো বুঝি না। বুঝতেও চাই না। ছোট মামার অনেক দুষ্টুমি ছিল। এবারও তার দুষ্টুমি বুঝতে পারি।
বাবা অবসর নেন। গ্রামে চলে যান। দু’জন ছেলে পড়তে আসত। গ্রামার শেখান। হাতে হ্যারিকেন। তখন ইলেকট্রিসিটি থাকলেও সব বাড়িতে ছিল না। বাবা ওদের উপর খুব রাগ করেন। পড়াও শেখান। মাকে বলতেন- কেন আসে? মা বলেন- ইংরেজি শিক্ষক কোথায় পাবে? তবে ছেলে দুটি খুশি। ইংরেজি শিখছে। পড়ে জানতে পারি। একজন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়েছে।

তখন আমি নবীন ল’ইয়ার। ভাগ্নেও ল ইয়ার। বাবার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন। আমাকে ধরিয়ে দেন। অনেক কথা বলেন। বাবার খোঁজ নেন। বাবার সঙ্গে কথা বলতে চান। তখন মোবাইল ছিল না। বাবাকে বলতে ভুলে গেছি। কোনও দিনও সে বন্ধুর কথা বলিনি।

আমি সচরাচর কিছু ভুলি না। কিন্তু সে ঘটনা বাবাকে বলিনি। বন্ধুর নামও ভুলে গেছি। অনুশোচনা হয়েছে। কেন ভুলে গেলাম?
সকালে দুজনে রেডি হচ্ছি। কাজে যাবো। হঠাৎ একটি ফোন। বুঝতে দেরি হয়নি। গ্রামে ছুটে গেলাম। অনেক আত্মীয়স্বজন। অনেকেই অনেক কথা বলছেন। রক্তের বাইরেরও অনেকে ছিলেন। সবাইকে চিনি না। গ্রামে বড় হইনি। কোন বাড়ির সদস্য? আজও জানি না। তবে শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। কেউ কেউ বলেনÑ উনি (বাবা) আমাদের মায়া করতেন। আমারও তাকে (বাবা) মায়া করতেম। মায়া দিয়ে গেছেন। মায়া নিয়ে গেছেন।

কষ্টকর ব্যাপার। ঢাকা ফিরে যাবো। বাস্তবতায় ডুবে যাবো। স্বামী সন্তান-জন ইত্যাদি। মনে হলো- বাবার স্মৃতি নিয়ে যাই। আবার ভাবি- কি লাভ নিয়ে? বাবাই যখন নেই। বাবার রুমে ঢুকি। শূন্য গৃহ। তারপাশে চোখ বুলাই। বাবার শোয়ার খাট। খাটের পাশে ছোট টেবিল। টেবিলের ওপর দুটি বই। বাবা নিয়মিত পড়তেন। কিছুই নিলেম না। কিছুই নেয়ার নেই। সঙ্গে করে নিয়ে এলাম- বাবার স্মৃতি- ‘দুটি বই’ নেয়ামুল কুরআন ও বেহেশতি জেওর।

বাবার আগে মা চলে যান। বাবা অনুরোধ রাখেন, আমি এসব পারি না। কোনও দিনও পারি না। এসব আমাকে আরো কষ্ট দেয়। বাবাকে সে কথা বলিনি। শুধু বাবার কথা শুনে গেছি। একবার মায়ের শাড়ি পড়ি। বাবা নিষেধ করেন। বাবা কষ্ট পান। তারপর আর পড়িনি। ইচ্ছেও হয়নি।
বাবা চলে গেছেন। অনেক আগেই চলে গেছেন। বাবা জীবন্ত অতীত। এই ঘর -সেই ঘর। এই আছে- এই নেই। সেই গ্রামার বইটি খুঁজছি। বাবাও নেই। বইটিও পাইনি। আমার গ্রামার শেখাও হয়নি। কোনও দিনও হয়নি। কিন্তু বাবার স্মৃতি ধারণ করছি- বাবার স্মৃতি ‘-দুটি বই।’
অ্যাডভোকেট শামীম আরা ডোরা
ফরমার অ্যাসিট্যান্ট অ্যার্টনি জেনারেল বাংলাদেশ।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078