
বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Artificial Intelligence) এবং উন্নত প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ ও নিরাপদ করেছে। বিশেষ করে, প্রবীণদের জন্য (আরও নির্দিষ্ট করে বললে যারা একাকী থাকেন), যাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন প্রয়োজন, এআই এবং প্রযুক্তি একটি আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। এই প্রযুক্তি তাদের স্বাস্থ্য-সচেতনতা বাড়াতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করছে। তবে অনেক প্রবীণের ইংরেজি ও প্রযুক্তিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকায় তাদের জন্য এই সুবিধাগুলো কীভাবে সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং সহজলভ্য করা যায়, তাও ভেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ।
এআই ও প্রযুক্তি প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কীভাবে সাহায্য করছে?
এআই এবং উন্নত প্রযুক্তি প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্নভাবে কাজ করছে। যেমন :
স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ডিভাইস : এখন অনেক ধরনের স্মার্ট ডিভাইস পাওয়া যায়, যেমন স্মার্টওয়াচ বা হেলথ ব্যান্ড। এগুলো প্রবীণদের হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ঘুমের ধরন পর্যবেক্ষণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো প্রবীণের হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়, তবে ডিভাইসটি সতর্কবার্তা পাঠায় এবং পরিবারের সদস্য বা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এতে সময়মতো চিকিৎসা সম্ভব হয়।
টেলিমেডিসিন ও ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য পরামর্শ : এআই-চালিত টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্ম প্রবীণদের ঘরে বসে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, একজন প্রবীণের বুকে ব্যথা হচ্ছে। তিনি স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে একটি অ্যাপের মাধ্যমে ডাক্তারের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলতে পারেন। এমনকি এআই তার লক্ষণ বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক পরামর্শও দিতে পারে।
ওষুধের সময় মনে করিয়ে দেওয়া : অনেক প্রবীণ সময়মতো ওষুধ খেতে ভুলে যান। এআই-চালিত অ্যাপ বা স্মার্ট স্পিকার (যেমনAmazon Alexa বা Google Home) তাদের ওষুধ খাওয়ার সময় মনে করিয়ে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি স্মার্ট স্পিকার বলতে পারে, ‘আপনার রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে।’
পড়ে যাওয়া শনাক্তকরণ : প্রবীণদের জন্য পড়ে যাওয়া একটি বড় ঝুঁকি। এআই-চালিত সেন্সর বা স্মার্ট ডিভাইস পড়ে যাওয়া শনাক্ত করতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সেবায় যোগাযোগ করতে পারে। যেমন একটি স্মার্টওয়াচ যদি বোঝে যে ব্যক্তি পড়ে গেছেন এবং উঠতে পারছেন না, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবারের সদস্য বা অ্যাম্বুলেন্সে খবর পাঠায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন : এআই-চালিত চ্যাটবট বা অ্যাপ প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে সাহায্য করছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ একাকিত্ব বা উদ্বেগে ভোগেন, তবে এআই চ্যাটবট তার সঙ্গে কথা বলে, গল্প শোনায় বা শান্ত করার পরামর্শ দেয়।
প্রযুক্তি ও ইংরেজি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকলে কী করা যায়?
অনেক প্রবীণের ইংরেজি বা প্রযুক্তি সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান থাকে। তাদের জন্য এআই এবং প্রযুক্তি ব্যবহার সহজ করতে নিচের সমাধানগুলো কার্যকর হতে পারে :
স্থানীয় ভাষায় প্রযুক্তি : এআই-চালিত ডিভাইস বা অ্যাপগুলো অতিসত্বর বাংলা বা অন্যান্য স্থানীয় ভাষায় অপারেট করবে বলে আশা করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি স্মার্ট স্পিকার বাংলায় হয়তো বলবে, ‘আপনার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে’ বা ‘আপনি কেমন আছেন?’ এতে প্রবীণরা সহজেই বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে কিছু অ্যাপ ও ডিভাইস বাংলা ভাষায় কাজ করছে, যা আরও জনপ্রিয় করা যেতে পারে।
সহজ ইন্টারফেস : প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সহজ এবং বড় অক্ষরের ইন্টারফেস তৈরি করা যেতে পারে। যেমন স্মার্টফোন অ্যাপে বড় বড় বোতাম থাকতে পারে, যেগুলোতে শুধু ‘ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন’ বা ‘জরুরি সাহায্য’ লেখা থাকবে। এতে প্রবীণরা সহজেই বুঝতে পারবেন কী করতে হবে।
ভয়েস কমান্ড : অনেক প্রবীণ লিখতে বা টাইপ করতে অসুবিধা বোধ করেন। তাদের জন্য ভয়েস কমান্ড-চালিত এআই সিস্টেম খুব উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, তারা বাংলায় বলতে পারেন, ‘আমার রক্তচাপ মাপো’ বা ‘ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাই,’ এবং এআই সেই নির্দেশ পালন করবে।
পরিবার ও সম্প্রদায়ের সহায়তা : প্রবীণদের প্রযুক্তি ব্যবহার শেখাতে পরিবারের সদস্য বা স্থানীয় সম্প্রদায়ের তরুণেরা সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন নাতি-নাতনি তাদের দাদা-দাদিকে স্মার্টফোনে একটি হেলথ অ্যাপ কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা শিখিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সরকার দ্বারা প্রবীণদের জন্য বিনা মূল্যে বা কম খরচে স্মার্ট ডিভাইস সরবরাহ করতে পারা কষ্টসাধ্য। তবে ভবিষ্যতে এটা সম্ভবপর হলে একাকিত্বে ভোগা প্রবীণদের জন্য বিশেষত অনেক সুবিধা হবে। এ ছাড়া স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের এই ডিভাইস ব্যবহার শেখাতে পারেন। যেমন একজন স্বাস্থ্যকর্মী প্রবীণদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন কীভাবে একটি হেলথ ব্যান্ড ব্যবহার করতে হয়।
পরিশেষে বলা যায়, এআই এবং উন্নত প্রযুক্তি প্রবীণদের স্বাস্থ্য-সচেতনতা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তাদের ভাষা ও প্রযুক্তিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে স্থানীয় ভাষায় সহজ ডিভাইস, ভয়েস কমান্ড এবং পরিবার-সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রযোজন। সরকার, এনজিও এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে কাজ করলে প্রবীণরা এই প্রযুক্তির পুরো সুবিধা পাবেন। এতে তাদের নিরাপদ, সুস্থ এবং স্বাধীন জীবনযাপন করার পথ আরও সুগম হবে।
লেখক : জনস্বাস্থ্য শিক্ষাবিদ (নিউইয়র্ক), হেলথ অপারেশন্স ডিরেক্টর, এনওয়াইআইসি।
এআই ও প্রযুক্তি প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কীভাবে সাহায্য করছে?
এআই এবং উন্নত প্রযুক্তি প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্নভাবে কাজ করছে। যেমন :
স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ডিভাইস : এখন অনেক ধরনের স্মার্ট ডিভাইস পাওয়া যায়, যেমন স্মার্টওয়াচ বা হেলথ ব্যান্ড। এগুলো প্রবীণদের হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ঘুমের ধরন পর্যবেক্ষণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো প্রবীণের হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়, তবে ডিভাইসটি সতর্কবার্তা পাঠায় এবং পরিবারের সদস্য বা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এতে সময়মতো চিকিৎসা সম্ভব হয়।
টেলিমেডিসিন ও ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য পরামর্শ : এআই-চালিত টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্ম প্রবীণদের ঘরে বসে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, একজন প্রবীণের বুকে ব্যথা হচ্ছে। তিনি স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে একটি অ্যাপের মাধ্যমে ডাক্তারের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলতে পারেন। এমনকি এআই তার লক্ষণ বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক পরামর্শও দিতে পারে।
ওষুধের সময় মনে করিয়ে দেওয়া : অনেক প্রবীণ সময়মতো ওষুধ খেতে ভুলে যান। এআই-চালিত অ্যাপ বা স্মার্ট স্পিকার (যেমনAmazon Alexa বা Google Home) তাদের ওষুধ খাওয়ার সময় মনে করিয়ে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি স্মার্ট স্পিকার বলতে পারে, ‘আপনার রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে।’
পড়ে যাওয়া শনাক্তকরণ : প্রবীণদের জন্য পড়ে যাওয়া একটি বড় ঝুঁকি। এআই-চালিত সেন্সর বা স্মার্ট ডিভাইস পড়ে যাওয়া শনাক্ত করতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সেবায় যোগাযোগ করতে পারে। যেমন একটি স্মার্টওয়াচ যদি বোঝে যে ব্যক্তি পড়ে গেছেন এবং উঠতে পারছেন না, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবারের সদস্য বা অ্যাম্বুলেন্সে খবর পাঠায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন : এআই-চালিত চ্যাটবট বা অ্যাপ প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে সাহায্য করছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ একাকিত্ব বা উদ্বেগে ভোগেন, তবে এআই চ্যাটবট তার সঙ্গে কথা বলে, গল্প শোনায় বা শান্ত করার পরামর্শ দেয়।
প্রযুক্তি ও ইংরেজি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকলে কী করা যায়?
অনেক প্রবীণের ইংরেজি বা প্রযুক্তি সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান থাকে। তাদের জন্য এআই এবং প্রযুক্তি ব্যবহার সহজ করতে নিচের সমাধানগুলো কার্যকর হতে পারে :
স্থানীয় ভাষায় প্রযুক্তি : এআই-চালিত ডিভাইস বা অ্যাপগুলো অতিসত্বর বাংলা বা অন্যান্য স্থানীয় ভাষায় অপারেট করবে বলে আশা করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি স্মার্ট স্পিকার বাংলায় হয়তো বলবে, ‘আপনার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে’ বা ‘আপনি কেমন আছেন?’ এতে প্রবীণরা সহজেই বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে কিছু অ্যাপ ও ডিভাইস বাংলা ভাষায় কাজ করছে, যা আরও জনপ্রিয় করা যেতে পারে।
সহজ ইন্টারফেস : প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সহজ এবং বড় অক্ষরের ইন্টারফেস তৈরি করা যেতে পারে। যেমন স্মার্টফোন অ্যাপে বড় বড় বোতাম থাকতে পারে, যেগুলোতে শুধু ‘ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন’ বা ‘জরুরি সাহায্য’ লেখা থাকবে। এতে প্রবীণরা সহজেই বুঝতে পারবেন কী করতে হবে।
ভয়েস কমান্ড : অনেক প্রবীণ লিখতে বা টাইপ করতে অসুবিধা বোধ করেন। তাদের জন্য ভয়েস কমান্ড-চালিত এআই সিস্টেম খুব উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, তারা বাংলায় বলতে পারেন, ‘আমার রক্তচাপ মাপো’ বা ‘ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাই,’ এবং এআই সেই নির্দেশ পালন করবে।
পরিবার ও সম্প্রদায়ের সহায়তা : প্রবীণদের প্রযুক্তি ব্যবহার শেখাতে পরিবারের সদস্য বা স্থানীয় সম্প্রদায়ের তরুণেরা সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন নাতি-নাতনি তাদের দাদা-দাদিকে স্মার্টফোনে একটি হেলথ অ্যাপ কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা শিখিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সরকার দ্বারা প্রবীণদের জন্য বিনা মূল্যে বা কম খরচে স্মার্ট ডিভাইস সরবরাহ করতে পারা কষ্টসাধ্য। তবে ভবিষ্যতে এটা সম্ভবপর হলে একাকিত্বে ভোগা প্রবীণদের জন্য বিশেষত অনেক সুবিধা হবে। এ ছাড়া স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের এই ডিভাইস ব্যবহার শেখাতে পারেন। যেমন একজন স্বাস্থ্যকর্মী প্রবীণদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন কীভাবে একটি হেলথ ব্যান্ড ব্যবহার করতে হয়।
পরিশেষে বলা যায়, এআই এবং উন্নত প্রযুক্তি প্রবীণদের স্বাস্থ্য-সচেতনতা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তাদের ভাষা ও প্রযুক্তিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে স্থানীয় ভাষায় সহজ ডিভাইস, ভয়েস কমান্ড এবং পরিবার-সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রযোজন। সরকার, এনজিও এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে কাজ করলে প্রবীণরা এই প্রযুক্তির পুরো সুবিধা পাবেন। এতে তাদের নিরাপদ, সুস্থ এবং স্বাধীন জীবনযাপন করার পথ আরও সুগম হবে।
লেখক : জনস্বাস্থ্য শিক্ষাবিদ (নিউইয়র্ক), হেলথ অপারেশন্স ডিরেক্টর, এনওয়াইআইসি।