যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ব্যাপক গণবিক্ষোভ

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫, ১০:৫৬ , অনলাইন ভার্সন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিরল এক সামরিক কুচকাওয়াজ আয়োজিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক গণবিক্ষোভ হয়েছে। “নো কিংস” নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের “স্বৈরাচারী আচরণের” বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। খবর বিবিসির। 

স্থানীয় সময় ১৪ জুন (শনিবার) সন্ধ্যায় ট্রাম্পের জন্মদিনে আয়োজিত এই সামরিক কুচকাওয়াজটি মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০ বছর পূর্তিকে ঘিরে হলেও—সমালোচকদের মতে এটি ছিল একটি ব্যয়বহুল “ভ্যানিটি প্রজেক্ট”। ট্রাম্প আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, কুচকাওয়াজের সময় কোনো ধরনের বিক্ষোভ হলে তা “কঠোরভাবে দমন” করা হবে।

দেশজুড়ে ‘নো কিংস’ আন্দোলনের ঢেউ
নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, হিউস্টনসহ বহু শহরে হাজার হাজার মানুষ আমেরিকান পতাকা ও ট্রাম্পবিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভে অংশ নেন। আয়োজকরা দাবি করেছেন, শত শত শহরে মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন এই আন্দোলনে।

ফিলাডেলফিয়ার লাভ পার্কে জড়ো হওয়া ৬১ বছর বয়সী নার্স ক্যারেন ভ্যান ট্রিয়েসটে বলেন, “আমি মনে করি আমাদের গণতন্ত্র রক্ষায় দাঁড়ানো দরকার। ট্রাম্প স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কাটছাঁট করে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন।”

অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
লস অ্যাঞ্জেলেসে ছিল সবচেয়ে বড় জমায়েতগুলোর একটি। গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযান ঘিরে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজ্য গভর্নরের আপত্তি সত্ত্বেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন, যা স্থানীয়ভাবে প্রবল সমালোচনার জন্ম দেয়।

লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘ব্রাউন বেরেটস’ নামের একটি নাগরিক অধিকার সংগঠনের সদস্য হোসে আজেতকলা বলেন, “এটা কঠোর নয়, বরং অমানবিক। পরিবারগুলোকে আলাদা করা যায় না।”

ফেডারেল বিল্ডিংয়ের কাছে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ন্যাশনাল গার্ডের সংঘর্ষ ঘটে। টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করা হয় জমায়েত। তবে এক ব্লক দূরে শান্তিপূর্ণ মিছিল চলতেই থাকে।

জনমতের বিভাজন
যদিও এই আন্দোলন ছিল ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ, তবে জনমত জরিপ বলছে—তার অভিবাসননীতি এখনও অনেক মার্কিন নাগরিকের সমর্থন পাচ্ছে।

সিবিএস/ইউগোভের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, ৫৪ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে ফেরত পাঠানোর নীতিকে সমর্থন করছেন; বিপক্ষে ৪৬ শতাংশ। আবার ৪২ শতাংশ বলছেন, এতে তারা বেশি নিরাপদ বোধ করছেন এবং ৫৩ শতাংশ মনে করছেন এতে বিপজ্জনক অপরাধীদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

সামরিক কুচকাওয়াজ: সম্মান না শো অফ?
প্যারেডে অংশ নেয় হাজার হাজার ইউনিফর্মধারী সেনা সদস্য, ট্যাঙ্ক ও সামরিক যান এবং বাদ্যযন্ত্রের দল। ট্রাম্প তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের সৈনিকরা কখনও হার মানে না, কখনও আত্মসমর্পণ করে না, তারা লড়াই করে, জয় ছিনিয়ে আনে।”

অনেক সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এই আয়োজনকে ট্রাম্পের “দামি ইগো প্রজেক্ট” বলে আখ্যা দিয়েছেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর হিসেব অনুযায়ী, প্যারেডের ব্যয় ছিল প্রায় ২৫ থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়া মেলভিন গ্রেভস বলেন, “যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে কোনো সংবর্ধনা পাইনি। এই কুচকাওয়াজই সেই শূন্যতা কিছুটা পূরণ করল।” তবে স্বীকার করেন, এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে।

শেষবার যুক্তরাষ্ট্রে বড় সামরিক কুচকাওয়াজ হয়েছিল ১৯৯১ সালে, প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের আমলে। তখন উপসাগরীয় যুদ্ধজয়ের উদযাপন উপলক্ষে ৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিল। এবার বৃষ্টির কারণে উপস্থিতি অনেক কম ছিল।

সামরিক কুচকাওয়াজের ছায়ায় সেনা দিয়ে বিক্ষোভ দমন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে রাজধানীতে সেনাবাহিনীর মহড়া—অন্যদিকে দেশের ভেতরে সেনা দিয়ে বিক্ষোভ দমন—এই দুই চিত্রে মারাত্মক সাংঘর্ষিক বার্তা যাচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক বারবারা স্টার বলেন, “অভিবাসন বিতর্কে বিভাজনের এই সময়ে এমন প্যারেড এক অস্বস্তিকর বার্তা দেয়, যা হয়তো সেনাবাহিনী পরিকল্পনা করেনি।”

মিনেসোটায় “নো কিংস” আন্দোলনের কিছু কর্মসূচি বাতিল করা হয়, কারণ ওই রাজ্যে এক নারী রাজনীতিক ও তার স্বামীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তির গাড়িতে ওই আন্দোলনের ফ্লায়ার পাওয়া যায়। গভর্নর টিম ওয়ালজ বিক্ষোভ স্থগিত রাখতে আহ্বান জানালেও, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078