
আমাদের সবারই কোন না কোন সময় হাত-পায়ে ঝিনঝিনে ভাব হয়। অনেক সময় মনে হয় যেন ‘সুঁই ফোটার মতো’ অনুভূতি হচ্ছে। চিকিৎসা ভাষায় একে বলা হয় পরেসথেশিয়া। অনেক সময় এটা সাময়িক আবার কখনো কখনো এটা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে। এই ঝিনঝিনে ভাব যদি বারবার হয় বা অনেকদিন থাকে, তাহলে সেটা বড় কোনো শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে।
হাত ও পায়ে ঝিনঝিনে ভাবের কারণ
ঝিনঝিনে ভাব হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু কারণ সাধারণ ও ক্ষণস্থায়ী, আবার কিছু কারণ হতে পারে জটিল বা দীর্ঘমেয়াদি। চলুন জেনে নেই কী কী কারণে হাত-পায়ে ঝিনঝিনে ভাব হয়।
১. স্নায়ুতে অস্থায়ী চাপ : অনেকক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকলে বা শুয়ে থাকলে রক্ত চলাচল কমে যেতে পারে বা স্নায়ুতে চাপ পড়তে পারে। এতে হাতে বা পায়ে ফলে ঝিনঝিনে ভাব হয়। সাধারণত একটু নড়াচড়া করলে বা হাটাহাটি করলেই এটা ঠিক হয়ে যায়।
২. স্নায়ুর ক্ষতি : অনেক সময় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে হাত-পায়ে ঝি-ঝি ধরার মত সমস্যা হতে দেখা যায়। শরীরে যেসব সমস্যাগুলো হলে এ সমস্যা দেখা যায়-
-ডায়াবেটিস: রক্তে চিনির মাত্রা বেশি থাকলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। -অতিরিক্ত মদ্যপান: এতে শরীরে পুষ্টির অভাব হয়, যা স্নায়ুর ক্ষতি করে। -ভিটামিনের অভাব: বিশেষ করে বি-১, বি-৬, বি-১২ ও ই ভিটামিনের ঘাটতি। -সংক্রমণ: যেমন লাইম রোগ, এইচআইভি বা চিকেন পক্সের কারণে। -অটোইমিউন রোগ: যেমন লুপাস বা বাতজ্বর।
৩. হাতের কবজির স্নায়ুতে চাপ (কারপাল টানেলে সমস্যা) : হাতের কবজির মধ্যে একটি স্নায়ু থাকে, সেখানে চাপ পড়লে আঙুলে ঝিনঝিনে ভাব হয়।
৪. মেরুদণ্ড থেকে স্নায়ু চেপে যাওয়া : মেরুদণ্ডে সমস্যা হলে (যেমন ডিস্ক সরে গেলে), স্নায়ুতে চাপ পড়ে হাত বা পায়ে ঝিনঝিনে ভাব হতে পারে।
৫. মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) : এটা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, যেখানে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়, যার মধ্যে ঝিনঝিনে ভাবও অন্যতম।
৬. রক্ত চলাচলের সমস্যা : যাদের রক্তনালী ভালোভাবে কাজ করে না, যেমন রে’নড রোগ বা পায়ের ধমনীতে সমস্যা থাকে, তাদের হাত-পায়ে ঝিনঝিনে ভাব হতে পারে।
চিকিৎসা কীভাবে করা হয়
চিকিৎসা মূলত নির্ভর করে সমস্যার মূল কারণের উপর। ডাক্তাররা সাধারণত পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝে নেন কোন কারণে সমস্যা হচ্ছে।
১. মূল রোগের নিয়ন্ত্রণ :
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। - ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে হবে। - ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলে ডাক্তার অন্য ওষুধ দিতে পারেন।
২. ফিজিওথেরাপি : স্নায়ুর উপর চাপ কমাতে ব্যায়াম বা চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
৩. ওষুধ : ঝিনঝিনে ভাব বা স্নায়ুর ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়।
৪. অপারেশন : যদি স্নায়ুতে চাপ অনেক বেশি হয়, যেমন কারপাল টানেল বা ডিস্কে সমস্যা থাকে, তখন অস্ত্রোপচার করার দরকার হতে পারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়
সব সমস্যার প্রতিরোধ সম্ভব না হলেও কিছু উপায়ে হাত-পায়ের বা শরীরের ঝিনঝিনে ভাব কমানো যায় বা এড়ানো যায়।
১. সুস্থ জীবনযাপন : ভালো খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং শরীরচর্চা করা স্নায়ু ও রক্ত চলাচলের জন্য ভালো।
২. রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা : ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে ঝিনঝিনে ভাবের ঝুঁকি কমে।
৩. চাপ কমানো : একটানা বসে না থাকা, মাঝেমধ্যে অবস্থান পরিবর্তন করা।
৪. মদ্যপান ও বিষাক্ত জিনিস এড়ানো : অতিরিক্ত মদ্যপান ও রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকা।
৫. ধূমপান বন্ধ করা : ধূমপান রক্ত চলাচল খারাপ করে, যা স্নায়ুর ক্ষতি করে।
কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
নিচের কোনো একটি লক্ষণ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে:
- ঝিনঝিনে ভাব দীর্ঘদিন ধরে চলছে বা ক্রমে বাড়ছে এমন হলে। সঙ্গে ব্যথা, দুর্বলতা বা চলাফেরায় সমস্যা থাকলে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস আছে এবং নতুন করে ঝিনঝিনে ভাব শুরু হয়েছে এমন হলে।
হাত ও পায়ে ঝিনঝিনে ভাব অনেক কারণে হতে পারে। কখনো এটা সাধারণ, আবার কখনো বড় কোনো রোগের লক্ষণ। সময়মতো চিকিৎসা নিলে সমস্যা কমানো বা সম্পূর্ণ ঠিক করা যায়। যদি এই সমস্যা বারবার হয় বা অনেকদিন ধরে থাকে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তার দেখানোই ভালো। তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা, ওয়েব এমডি
ঠিকানা/এএস
হাত ও পায়ে ঝিনঝিনে ভাবের কারণ
ঝিনঝিনে ভাব হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু কারণ সাধারণ ও ক্ষণস্থায়ী, আবার কিছু কারণ হতে পারে জটিল বা দীর্ঘমেয়াদি। চলুন জেনে নেই কী কী কারণে হাত-পায়ে ঝিনঝিনে ভাব হয়।
১. স্নায়ুতে অস্থায়ী চাপ : অনেকক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকলে বা শুয়ে থাকলে রক্ত চলাচল কমে যেতে পারে বা স্নায়ুতে চাপ পড়তে পারে। এতে হাতে বা পায়ে ফলে ঝিনঝিনে ভাব হয়। সাধারণত একটু নড়াচড়া করলে বা হাটাহাটি করলেই এটা ঠিক হয়ে যায়।
২. স্নায়ুর ক্ষতি : অনেক সময় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে হাত-পায়ে ঝি-ঝি ধরার মত সমস্যা হতে দেখা যায়। শরীরে যেসব সমস্যাগুলো হলে এ সমস্যা দেখা যায়-
-ডায়াবেটিস: রক্তে চিনির মাত্রা বেশি থাকলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। -অতিরিক্ত মদ্যপান: এতে শরীরে পুষ্টির অভাব হয়, যা স্নায়ুর ক্ষতি করে। -ভিটামিনের অভাব: বিশেষ করে বি-১, বি-৬, বি-১২ ও ই ভিটামিনের ঘাটতি। -সংক্রমণ: যেমন লাইম রোগ, এইচআইভি বা চিকেন পক্সের কারণে। -অটোইমিউন রোগ: যেমন লুপাস বা বাতজ্বর।
৩. হাতের কবজির স্নায়ুতে চাপ (কারপাল টানেলে সমস্যা) : হাতের কবজির মধ্যে একটি স্নায়ু থাকে, সেখানে চাপ পড়লে আঙুলে ঝিনঝিনে ভাব হয়।
৪. মেরুদণ্ড থেকে স্নায়ু চেপে যাওয়া : মেরুদণ্ডে সমস্যা হলে (যেমন ডিস্ক সরে গেলে), স্নায়ুতে চাপ পড়ে হাত বা পায়ে ঝিনঝিনে ভাব হতে পারে।
৫. মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) : এটা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, যেখানে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়, যার মধ্যে ঝিনঝিনে ভাবও অন্যতম।
৬. রক্ত চলাচলের সমস্যা : যাদের রক্তনালী ভালোভাবে কাজ করে না, যেমন রে’নড রোগ বা পায়ের ধমনীতে সমস্যা থাকে, তাদের হাত-পায়ে ঝিনঝিনে ভাব হতে পারে।
চিকিৎসা কীভাবে করা হয়
চিকিৎসা মূলত নির্ভর করে সমস্যার মূল কারণের উপর। ডাক্তাররা সাধারণত পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝে নেন কোন কারণে সমস্যা হচ্ছে।
১. মূল রোগের নিয়ন্ত্রণ :
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। - ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে হবে। - ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলে ডাক্তার অন্য ওষুধ দিতে পারেন।
২. ফিজিওথেরাপি : স্নায়ুর উপর চাপ কমাতে ব্যায়াম বা চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
৩. ওষুধ : ঝিনঝিনে ভাব বা স্নায়ুর ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়।
৪. অপারেশন : যদি স্নায়ুতে চাপ অনেক বেশি হয়, যেমন কারপাল টানেল বা ডিস্কে সমস্যা থাকে, তখন অস্ত্রোপচার করার দরকার হতে পারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়
সব সমস্যার প্রতিরোধ সম্ভব না হলেও কিছু উপায়ে হাত-পায়ের বা শরীরের ঝিনঝিনে ভাব কমানো যায় বা এড়ানো যায়।
১. সুস্থ জীবনযাপন : ভালো খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং শরীরচর্চা করা স্নায়ু ও রক্ত চলাচলের জন্য ভালো।
২. রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা : ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে ঝিনঝিনে ভাবের ঝুঁকি কমে।
৩. চাপ কমানো : একটানা বসে না থাকা, মাঝেমধ্যে অবস্থান পরিবর্তন করা।
৪. মদ্যপান ও বিষাক্ত জিনিস এড়ানো : অতিরিক্ত মদ্যপান ও রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকা।
৫. ধূমপান বন্ধ করা : ধূমপান রক্ত চলাচল খারাপ করে, যা স্নায়ুর ক্ষতি করে।
কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
নিচের কোনো একটি লক্ষণ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে:
- ঝিনঝিনে ভাব দীর্ঘদিন ধরে চলছে বা ক্রমে বাড়ছে এমন হলে। সঙ্গে ব্যথা, দুর্বলতা বা চলাফেরায় সমস্যা থাকলে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস আছে এবং নতুন করে ঝিনঝিনে ভাব শুরু হয়েছে এমন হলে।
হাত ও পায়ে ঝিনঝিনে ভাব অনেক কারণে হতে পারে। কখনো এটা সাধারণ, আবার কখনো বড় কোনো রোগের লক্ষণ। সময়মতো চিকিৎসা নিলে সমস্যা কমানো বা সম্পূর্ণ ঠিক করা যায়। যদি এই সমস্যা বারবার হয় বা অনেকদিন ধরে থাকে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তার দেখানোই ভালো। তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা, ওয়েব এমডি
ঠিকানা/এএস