কে হবেন ‘ভালো’ মেয়র?

মুসলিম কমিউনিটি ও তারুণ্যনির্ভর  মামদানি, ক্যুমোর পুঁজি অভিজ্ঞতা 

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ১৬:৩৪ , অনলাইন ভার্সন
কে হবেন বিশ্বের রাজধানী হিসাবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র? ২৪ জুন মঙ্গলবার ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে যিনি চূড়ান্ত বিজয়ী হবেন, তিনি চলতি বছরের ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাবেন। ডেমোক্রেট অধ্যুষিত সিটি হিসাবে যিনি প্রাইমারিতে বিজয়ী হবেন, ধরে নেওয়া যায় তিনিই এই শহরের মেয়র হবেন।  
এবারের প্রাইমারিতে ব্যালটে মেয়র পদে ১১ জন প্রার্থীর নাম থাকলেও মুলতঃ দুজন প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন তরুণ অভিবাসী ও নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য জোহরান মামদানি। অন্যজন রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো। দুজনের মধ্যে মূলতঃ লড়াইটা হবে। জোহরান মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির বামপন্থী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। সাবেক ওই গভর্নর একজন মধ্যপন্থী রাজনীতিবিদ। নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইপর্বকে প্রগতিশীল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রক্ষণশীল ধারার পুরোনো প্রজন্মের লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখা হচ্ছে। 
২০২১ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে এরিক অ্যাডামস প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করেছিলেন। সেই জয়ের পর থেকে এরিক অ্যাডামস জাতীয় পর্যায়েও একটি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রার্থী হিসাবে নভেম্বরের লড়াইয়ের অবতীর্ণ হতে পারেন। আবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন, এমনটি শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে। 
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়ার অর্থ হলো, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম ও ব্যস্ততম শহরের নির্বাহী কর্মকর্তা। শহরটির নতুন মেয়র যিনি হবেন, তাঁকে অনেক সমস্যা ও জরুরি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে আছে আবাসন, জীবনযাত্রার ব্যয়, যানজট ও গণপরিবহন। নিউইয়র্কবাসীর ক্ষেত্রে এ নির্বাচনের প্রভাব স্পষ্ট। নিউইয়র্ক শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এছাড়া নিউইয়র্কের মেয়র হওয়ার মানে দেশজুড়ে পরিচিতি পাওয়া। সর্বশেষ তিনজন মেয়রের সবাই পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক বাছাইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে যত বাংলাদেশির রয়েছেন, এর সিংহভাগই নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাস করেন। বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভোট  নির্বাচনে বড় ভূমিকা না রাখলে মুসলিম ভোট হিসাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশিরা চান এই শহরে একজন ‘ভালো’ মেয়র আসুক, যিনি অভিবাসী সমাজের স্বার্থকে বড় করে দেখবেন। বাংলাদেশিদের বড় একটি অংশ মামদানিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন। অন্যদিকে একটি অংশ অভিজ্ঞ হিসাবে ক্যুমোর পক্ষে কাজ করছেন। 
ডেমোক্রেটদের প্রাথমিক বাছাইপর্বে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বয়সের ব্যবধান অনেক। অ্যান্ড্রু কুমোর বয়স ৬৭ বছর। জোহরান মামদানি ৩৩। নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নরের সন্তান এবং নিজেও গভর্নর হওয়া ক্যুমোর কর্মজীবন বিস্তৃত। ২০১১ সালে নিউইয়র্কের গভর্নর হওয়ার আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী এবং নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতাকে পূঁজি করে তিনি মেয়র হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে তরুণ জোহরান মামদানির শক্তি তারুণ্য। মুসলিম হিসাবেও তিনি অগ্রভাগে রয়েছেন।  
২০২১ সালে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কু্েযমা পদত্যাগ করেন। কয়েক বছর আগে পদত্যাগের আহ্বান জানানো মানুষদের সঙ্গেই তিনি আবার সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। ক্যুমো তাঁর নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন, তার মধ্যে আছে- শহরের ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করা এবং ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো। এমনকী নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক সিটির ন্যুনতম মজুরি ২০ ডলার করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতি নিউইয়র্কবাসী ভালোভাবে নিয়েছেন। 
জোহরান মামদানি কোনো রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান নন। উগান্ডায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মা-বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া মামদানি ২০২১ সাল থেকে নিউইয়র্ক অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা (ডিএসএ) সমর্থিত প্রার্থী।
মাত্র ৩৩ বছর বয়সী মামদানি নিজেকে এমন একজন প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন, যিনি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে হারাতে পারেন। তিনি ভোটারদের মন জয় করতে আবাসন, গণপরিবহন ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের ওপর জোর দিচ্ছেন। নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন নিউইয়র্ক নগরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র।
জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। তিনি সাত বছর বয়সে নিউইয়র্ক নগরে চলে আসেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। তাঁর মা মিরা নায়ার ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা, আর বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
মামদানি একটি প্রগতিশীল প্ল্যাটফর্ম থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি বিষয়গুলোর ওপর জোর দিচ্ছেন, তার মধ্যে আছে ভাড়া স্থিতিশীল রাখা, সরকারি বাসের ফি তুলে নেওয়া এবং নগর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন সাশ্রয়ী মূল্যের মুদিদোকান তৈরি করা।
জনমত জরিপগুলোয় দেখা গেছে, ছোট দাতাগোষ্ঠী এবং বামপন্থী স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে মামদানির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির আরও যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন- সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস, সাবেক কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিঙ্গার, অঙ্গরাজ্যের সিনেট সদস্য জেসিকা রামোস, অঙ্গরাজ্যের সিনেট সদস্য জেলনার মাইরি, রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও অঙ্গরাজ্যের সাবেক আইনপ্রণেতা মাইকেল ব্লেক এবং বিনিয়োগকারী হুইটনি টিলসন।
নানা কেলেঙ্কারির ঘটনায় তদন্তের মুখোমুখি বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে কনজারভেটিভ অধিকারকর্মী কার্টিস স্লিওয়া একমাত্র রিপাবলিকান প্রার্থী।
দলীয় বাছাইপর্বের আগাম ভোট শুরু হয়েছে ১৪ জুন থেকে। চলবে ২২ জুন পর্যন্ত। প্রাথমিক বাছাইপর্বের নির্বাচন হবে ২৪ জুন। মেয়র পদে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৪ নভেম্বর।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম পলিটিকোতে গত ৯ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা এখন মোটামুটি পরিষ্কার, মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ে এখন মূল লড়াই হচ্ছে অ্যান্ড্রু কুমো আর জোহরান মামদানির মধ্যে।
প্রতিবেদনে দুটি নতুন জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। মামদানির পক্ষের দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘ডেটা ফর প্রগ্রেস’-এর মাধ্যমে চালানো জরিপে দেখা গেছে, কুমো এখন মামদানির চেয়ে মাত্র ২ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। তবে কুমোর নিজের পক্ষের আরেকটি জরিপ বলছে, তিনি মামদানির চেয়ে ১২ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন।
‘ডেটা ফর প্রগ্রেস’ ৩০ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ৮১৯ ডেমোক্র্যাট ভোটারের মধ্যে জরিপ চালায়। এতে দেখা গেছে, ভোটের শুরুর দিকে কুমো ৭ পয়েন্ট এগিয়ে থাকলেও ধাপে ধাপে ভোট গণনার (র‍্যাঙ্কড চয়েস) শেষে কুমো ৫১-৪৯ ব্যবধানে মামদানির চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই জরিপে মার্জিন অব এররও (কিছুটা ভুলত্রুটি) থাকতে পারে। কারণ, দুজনের মধ্যে ব্যবধান খুবই কম।
মামদানির সমর্থক হিসেবে পরিচিত ‘নিউইয়র্কারস ফর লোয়ার কস্টস’ সুপার পিএসি এবং ‘ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি’-এর জাতীয় পিএসির পক্ষ থেকে ‘ডেটা ফর প্রগ্রেস’-এর মাধ্যমে এই জরিপ চালানো হয়েছে।
ফলাফল বলছে, মামদানির দারিদ্র্য আর ধনীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি অনেক ভোটারকে আকর্ষণ করছে, বিশেষ করে যাঁরা বাসস্থানসংকট ও দাম বাড়ার বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত। অবশ্য অনেকেই বলছেন, মামদানি তুলনামূলকভাবে তরুণ ও তাঁর অভিজ্ঞতা কম।
নিউইয়র্কারস ফর লোয়ার কস্টসের মুখপাত্র বিল নাইডহার্ড এক বিবৃতিতে বলেন, এই জরিপ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, নিউইয়র্কের মানুষ এখন জোহরান মামদানির মতো এমন একজন মেয়র চান, যিনি জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো নিয়ে ভাবেন। তাঁরা কেলেঙ্কারিতে জড়ানো অ্যান্ড্রু কুমোর মতো এমন একজন ব্যক্তিকে চান না।
অন্যদিকে ক্যুমোর শিবিরের পক্ষ থেকে করা জরিপে দেখা গেছে, ৬০০ ভোটারের মধ্যে চালানো জরিপে তিনি ১২ পয়েন্টে এগিয়ে। তাঁর পক্ষে ৫৬ শতাংশ ও মামদানির পক্ষে ৪৪ শতাংশ সমর্থন জানিয়েছেন। এই সময়ে ৪ জুন প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম টিভি বিতর্ক হয়, আর ৫ জুন জনপ্রিয় কংগ্রেসওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্তেজ মামদানিকে তাঁর প্রথম পছন্দ হিসেবে ঘোষণা করেন। এসময়ে ক্যুমোর সমর্থক একটি সংগঠন টিভি ও মেইলে বিজ্ঞাপন চালিয়ে বলছে, মামদানি নাকি কর বৃদ্ধি করতে ও পুলিশ বিভাগের বাজেট কমাতে চান।
ক্যুমোবিরোধী ভোটগুলোকে নিজের পক্ষে আনতে পারলে বামঘেঁষা এ আইনপ্রণেতার প্রাথমিক বাছাইয়ে জয়ের বেশ ভালোই সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
নিউইয়র্ক সিটির স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাররা এই পদ্ধতিতে একসঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচজন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। ভোটাররা তাঁদের পছন্দের কয়েকজন প্রার্থীর ক্রম নির্ধারণ করেন। যেমন প্রথম পছন্দ, দ্বিতীয় পছন্দ, এভাবে। প্রথম দফার গণনায় শুধু প্রথম পছন্দের প্রার্থীর ভোট গোনা হয়। যদি কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান, তাহলে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থীকে বাদ দিয়ে আবার গণনা শুরু হয়। প্রতিটি নতুন দফার গণনায় বাদ পড়া প্রার্থীর ভোটগুলো তাঁর ভোটারদের ব্যালটে থাকা পরবর্তী পছন্দ অনুযায়ী অন্যান্য প্রার্থীর মধ্যে বণ্টন করা হয়।
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ভোট দেবে বা ইসরায়েল কতটা সামরিক সহায়তা পাবে, তা নিউইয়র্ক নগরের পরবর্তী মেয়র ঠিক করবেন না। তবু স্থানীয় নির্বাচনে মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতের প্রভাব পড়বে। জোহরান মামদানি জোরালোভাবে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেন। তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ২০২৩ সালের নভেম্বরে হোয়াইট হাউসের বাইরে অনশন করেছিলেন।
জোহরান মামদানির এমন অবস্থানের কারণে ইসরায়েলের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও রিপাবলিকান পার্টির নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সদস্য বিকি প্যালাডিনো সম্প্রতি তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানান।
প্যালাডিনোর ওই বক্তব্যের বিরুদ্ধে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এর জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ফিলিস্তিনপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে মামদানির সম্পৃক্ততা থাকায় তিনি নাগরিকত্বের যোগ্য নন।
এদিকে, নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক মেয়র পদে প্রাইমারি নির্বাচনের জরিপে নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো এখন পর্যন্ত এগিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন অপরপ্রার্থী জোহরান মামদানি। মূলত এই দুই প্রার্থীকে ঘিরেই জমে এখন উঠেছে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রাইমারি নির্বাচন। যত হিসেব-নিকেশ হচ্ছে এই দুই প্রাথীকে ঘিরেই। 
কম্পট্রোলার পদে জাস্টিন ব্রেনান এবং মার্ক লেভিনের মধ্যে হচ্ছে ভোটাভুটি। আর পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে লড়ছেন জুমানে উইলিয়ামস ও জেনিফার রাজকুমার। এছাড়াও সিটির ৫১ জন কাউন্সিলরকে নির্বাচন করতে ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। 
গত সপ্তাহে অ্যাসেম্বলিম্যান মামদানি, সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার এবং সাবেক আইনপ্রণেতা মাইকেল ব্লেক একে অপরের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। যা সিটির নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও এর আগে স্টেট সিনেটর জেসিকা রামোস ক্যুমোকে সমর্থন দেন। র‍্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং সিস্টেমের মাধ্যমে প্রার্থীদের জোট এবং ক্রস এন্ডোর্সমেন্টের আরেকটি নতুন ঘটনার সাক্ষী হচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটির ভোটারার। 
প্রাইমারি নির্বাচনের আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিন, গত ১৩ জুন শুক্রবার মামদানি এবং ব্র্যাড ল্যান্ডার ঘোষণা করেন তারা একে অপরের প্রতি সমর্থন জানাবেন। উভয় প্রার্থীই আশা করছেন তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ক্যুমোকে পরাজিত করবে। যদিও বেশিরভাগ জরিপে ক্যুমোকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। 
গত ১৩ জুন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসেম্বলি সদস্য মামদানি এবং সিটি কম্পট্রোলার ল্যান্ডার পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিলেন। পরস্পরের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মামদানি বলেন, আমি এখানে দাঁড়িয়ে গর্বিত যে, আমি আমার সমর্থকদের আমাকে এক নম্বর এবং ব্র্যাড ল্যান্ডারকে দুই নম্বরে স্থান দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। 
ল্যান্ডার বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এটি আমাকে জিততে সাহায্য করবে। তিনিও বিশ্বাস করেন এটি তাকে জিততে সাহায্য করবে এবং আমরা উভয়েই বিশ্বাস করিÑ এটি আমাদের একসাথে অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে থামাতে সাহায্য করবে।
২০২১ সালে অ্যান্ড্রু ইয়াং ক্যাথরিন গার্সিয়াকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু তিনি প্রতিদান দেননি। ইয়াংয়ের সমর্থন মেয়র এরিক অ্যাডামসের পরে গার্সিয়ার জন্য দ্বিতীয় স্থান অর্জনে সহায়তা করেছিল।
ল্যান্ডার আরো বলেন, ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ মেয়রদের একজন নির্বাচিত হয়েছিলেন, কারণ রেসের অন্য শীর্ষ দুই প্রতিযোগী ক্যাথরিন গার্সিয়া এবং মিয়া উইলি একে অপরকে ক্রস-এন্ডোর্স করতে ব্যর্থ হন। আমরা আবার সেই ভুল এবার আর করতে যাচ্ছি না।’
স্পেকট্রাম এনওয়াই১ নিউজ, ডব্লিউএনওয়াইসি গোথামিস্ট এবং দ্য সিটির পৃষ্ঠপোষকতায় গত ১২ জুন রাতের বিতর্কে ক্যুমো, মামদানি এবং ল্যান্ডার রাজনৈতিক লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন।
ক্যুমো যুক্তি দেন, তিনিই যথেষ্ট শক্তপোক্ত এবং রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। অন্যদিকে মামদানি ক্যুমোর গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগের কারণগুলো সামনে নিয়ে আসেন। বিতর্কে মামদানি এবং ক্যুমো একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন।  
এদিকে, গত সপ্তাহে প্রাক্তন মেয়র মাইক ব্লুমবার্গ ক্যুমোকে সমর্থন করছেন এবং ক্যুমোর সমর্থনকারী একটি সুপার প্যাককে ৫ মিলিয়ন ডলার দান করেছেন।
ক্যুমোর নির্বাচনী প্রচারক দল জানিয়েছে যে, তারা ক্রস-এন্ডোর্সমেন্টে অবাক হননি এবং তারা এখনও বিশ্বাস করেন যে, নিউইয়র্ক সিটি পরিচালনার জন্য ক্যুমোর সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আগামী ২৪ জুন সিটির ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রাইমারি। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, প্রতিযোগিতা ততোই কঠিন হচ্ছে বলে মনে করছেন ডেমোক্র্যাট ভোটাররা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তরুণ ভোটারদের কাছে মামদানির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ভোটাররা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ক্যুমো এবং মামাদানিকে এগিয়ে রেখেছেন এবং এই দুইজনের মধ্যেই তীব্র প্রতিযোগিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। 
মামদানি শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস করার লক্ষ্যে একটি উদ্যমী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জনপ্রিয় ধারণার একটি সাহসী আইডিয়া প্রস্তাব তিনি করেছেনÑ যা তাকে একজন উদারপন্থী হিসেবে পরিণত করেছে। যার কারণে তাকে প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজও সমর্থন দিয়েছেন। তিনি গত ১৪ জুন ম্যানহাটানের ফারওয়েস্ট সাইডে এক সমাবেশে মামদানির সাথে যোগ দেন। ওই সমাবেশে ওকাসিও ছাড়াও অ্যাসেম্বলি সদস্য ক্লেয়ার ভালদেজ, রাজ্য সিনেটর জন লিউ, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল সদস্য আলেক্সা অ্যাভিলেস, ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি জন স্যামুয়েলসেনসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। 
অন্যদিকে যৌন হয়রানি কেলেঙ্কারির জেরে গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর রাজনৈতিকভাবে প্রত্যাবর্তনের একটি ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে ক্যুমোর সামনে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় ছিলেন। তহবিল সংগ্রহের দক্ষতা, রাজনৈতিক রাজবংশের শক্তি এবং কৃতিত্বের দীর্ঘ রেকর্ড তার জন্য কল্যাণ নিয়ে আসতে পারে। 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078