প্রবাসীদের দিনরাত্রির কাব্য : ১০০ আসনের দাবি জাতীয় সংসদে

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ২২:১৬ , অনলাইন ভার্সন
প্রবাসজীবনে প্রবাসী বাঙালিরা কেমন আছেন? এমন প্রশ্ন শুধু যে দেশের আত্মীয়স্বজনের মনে জাগে, তা নয়। নিজেরা আমরা যারা প্রবাসে আত্মীয়স্বজন, স্বদেশ প্রকৃতি ছেড়ে প্রবাসে পড়ে আছি, তাদের মনেও জাগে। আমাদের নিয়ে স্বদেশ-স্বজনদের ভাবনা কাতরতা একটু বেশি। আমাদের মনেও যে প্রবাসে আমরা কেমন আছি, সে প্রশ্ন মনের মধ্যে তোলপাড় তোলে না, এমন নয়। স্বজনেরা দেশে আছে, আমাদের নিয়ে তাদের ভাবনা বেশি এবং তীব্র হতে পারে। আমরা প্রবাসে বাসা বাঁধলেও দেশটাকে মনের মধ্যে নিয়েই ঘুমাই, পথ চলি। স্বদেশের মানচিত্র, পতাকা, ‘আমার সোনার বাংলা...’ আমাদের হৃৎপিণ্ডটার কাছে নিয়েই কাজে যাই, ঘুরতে যাই, কাজ থেকে ফিরে আসি। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে চায়ের টেবিলে আড্ডা বসাই। ফোনকার্ড কিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেশে প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলি। কুশল বিনিময় করি। খোঁজখবর নেই।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের মন ভালো করার বিনোদন আয়োজন উপভোগ করারও সুযোগ ঘটে নানা মৌসুমÑবর্ষা, শরৎ, শীত, বসন্তে। প্রবাসে কিছু মানুষ আছেন, যারা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান। তাদের লক্ষ্য আর কিছু নয়-কেবল একটু মানসম্মান-মর্যাদা-মঞ্চে আসন আর কিছু কথা বলার সুযোগ। এর জন্য তারা পকেটের অর্থ খরচ করতে কার্পণ্য করেন না। এখানে আঞ্চলিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা ঠিক করে বলা প্রায় দুঃসাধ্য। বাংলাদেশের নাম যুক্ত করে আছে আমব্রেলা সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি, নিউইয়র্ক’।

এসব সংগঠনের যারা নেতৃত্ব দেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। এরাই আবার সব অভিযোগ, অনুযোগ জেনেও মেগা মেগা আয়োজনে সহযোগিতা করেন। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা চেনা-জানা বিশিষ্টজনদের দেশ থেকে প্রায়ই আগমন ঘটে। তাদের নিয়ে মতবিনিময়, সভা-সমাবেশের আয়োজনেও এসব সংগঠনের নেতারা পকেটের পয়সা খরচ করেন। বড় বড় কনসার্ট, বড় বড় সংগীত আসর, একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস, পয়লা বৈশাখ নববর্ষ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পিকনিক, ইফতার মাহফিল, বইমেলা, নাটক, ফোবানা আয়োজন তারাই করেন। কয়েক দিন ধরে বেশ হই-হুল্লোড় আনন্দে মেতে থাকা। এসবই স্বদেশ ছাড়া প্রবাসীদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেওয়ার প্রয়াস।

অপরদিকে কোনো দুঃসংবাদ বা দুঃসময়েও আমরা একে অপরের পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াই পরম আত্মীয়ের মতো। দুঃখ-শোক ভাগ করে নিতে চেষ্টা করি। একজনের অসুস্থতার খবরে আরেকজন ছুটে যান হাসপাতালে। রক্তের সম্পর্ক কেউ খোঁজার চেষ্টা করেন না। একজনের শোকে আরেকজনের চোখেও অশ্রু ঝরে। কারও লাশ তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী দেশে পাঠানোর সামর্থ্য নেই তার স্বজনদের, প্রবাসী স্বজনেরা হাসিমুখে তার শেষ ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে আসেন। এমনকি মৃত ব্যক্তির যদি কোনো ঋণ থাকে, সে ঋণও প্রবাসীরা হাসিমুখে পরিশোধ করে তাকে ঋণমুক্ত করে দেন।

এসব একান্তই আমাদের প্রবাসীদের নিজস্ব সুখ-দুঃখের, আনন্দ-বেদনার কাহিনি। নিজেদের আয়োজন নিজেদের মতো করে উদযাপন। নিজেদের শোক নিজেদের মতো করে পালন। নিজেদের মতো করে সান্ত্বনা পাওয়া। আনন্দ-বেদনা সবই আমাদের। আমাদের মতো করেই উপভোগ উদযাপন। হাসি-কান্না, শোক-সমবেদনা, নিখাদ, নির্ভেজাল, ভেজাল-সবই আমাদের। কিন্তু এর বাইরে ছেড়ে আসা সেই স্বদেশটাকে আমরা অষ্টপ্রহর মনের মধ্যে লালন করি। অষ্টপ্রহর স্বদেশের যে স্মৃতি আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, সে স্বদেশ আমাদের ছায়া হয়ে থাকে। স্বদেশের মুখ আমাদের কাজের ভিড়ে, অলস দুপুরে সামনে এসে দাঁড়ায়। যে স্বদেশের টানে আমরা বারবার ছুটে যাই। দুর্যোগ, দুর্ভোগ আইলা, সিডর, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে প্রবাসী আমরা আমাদের সকল সামর্থ্য নিয়ে দাঁড়াই। বিশ্বাস, দর্শন, দল নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর, আত্মীয়ের সঙ্গে আত্মীয়ের বিবাদ, মুখ দেখাদেখি বন্ধ, দেশের রাজনীতি নিয়ে দলাদলিÑআহারে স্বদেশ! সবেতেই স্বদেশ। সেই স্বদেশের কাছ থেকে কী পাই? আমাদের গালভরা ভালোবাসা দেখিয়ে বলা হয় ‘রেমিট্যান্স-যোদ্ধা’। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নাকি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। সঞ্চয়ের ঝুলিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। সবই প্রবাসীদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফসল।
ঠিকানার গত ১১ জুন সংখ্যায় প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করেন এমন তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি যারা সবসময় প্রবাসীদের মঙ্গল কামনায় সজাগ। প্রবাসীদের প্রত্যাশা নিয়ে চিন্তা করেন। তারা প্রবাসীদের চাওয়া-পাওয়া, প্রবাসীদের প্রতি স্বদেশের সরকার এবং মানুষ, বিশেষ করে ঘনিষ্ঠজনদের দৃষ্টিভঙ্গি কত সহজ-সরল, কত মনোগ্রাহী ভাষায় তুলে ধরেছেন।

তারা অবশ্য শুনিয়েছেন আশার কথাও। ‘সংসদে ১০০ আসন চান প্রবাসীরা’ শিরোনামের প্রধান খবরে জানা যায়, প্রবাসীরা আর বঞ্চনার শিকার হতে চান না। মিঠা কথায় আর ভুলতে চান না। স্বদেশের পথে যাত্রা শুরু থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত পদে পদে হয়রানি, ঘুষ, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য, জীবনহানির মতো ঘটনাও অনেক ঘটেছে। তারা সংসদে প্রবাসীদের জন্য ১০০ আসন দাবি করেছেন। কথায় কথায় প্রবাসীদের জন্য কনস্যুলেট ফি বৃদ্ধির অবসান চেয়েছেন। নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়েছেন।  ভোটের অধিকার সহজ প্রয়াসে জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়েছেন। এককথায় প্রকৃত অর্থে প্রবাসীবান্ধব একটা সরকার চেয়েছেন। যে সরকার প্রবাসীদের দুঃখ, বেদনা, চাওয়া-পাওয়া অন্তর দিয়ে অনুভব করবে এবং সেভাবেই কাজ করবে। নইলে সত্যি সত্যি প্রেশার গ্রুপ তৈরি করবেন।
আমরা প্রবাসীদের সঙ্গে স্বদেশের সরকারের সংঘাত চাই না। আমরা বিশ্বাস করি, এবার প্রবাসীদের প্রতি সরকারের উদাসীনতার অবসান ঘটবে। স্বদেশবাসীর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসবে। নইলে একদিন হয়তো বনে বাঘ আসতেও পারে।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078