ফুলশয্যা

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ২২:৫৭ , অনলাইন ভার্সন
মহা ধুমধামে গায়েহলুদ হলো, এরপর বিয়ে। এই দু’দিনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে পার্লারে। আজকাল যেকোনো অনুষ্ঠানের সাজ মানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায় পার্লারে। আদৃতা দু’দিন ধরে পার্লারে আসা-যাওয়া, এরপর অনুষ্ঠানে চুপচাপ সহ্য করে থাকলেও ভেতরে ভেতরে কষ্টে জ্বলেপুড়ে শেষ। শরীরের ওপর এতখানি ধকল সত্যিই অনেক কষ্টকর। চঞ্চলা চপলা আদৃতা নিজেকে গুটিয়ে সবকিছু সহ্য করে নিয়েছে, যদিও মাঝেমধ্যে মায়ের সঙ্গে জেদ ধরেছে। কেন আদৃতাকে এভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হলো?

একদম অপরিচিত একজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে আদৃতার বিয়ে ঠিক করেছেন মা আলেয়া বেগম এবং রিটায়ার্ড সেনাসদস্য বাবা আবছার হোসেন। আদৃতা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। আদৃতার বড় ভাই আয়ান কিছুদিন হলো একটা বেসরকারি ব্যাংকে অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে। ছেলের চাকরি হয়েছে, এদিকে আদৃতার মা-বাবা দুজনই শারীরিকভাবে অনেকটা অসুস্থ। তাই ভালো পাত্র পেয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলেন। ছেলের পরিবার শিক্ষিত এবং যথেষ্ট ভদ্রও বটে।

পুলিশ অফিসার সায়ান অনেক মেয়ে দেখেছে, তবে কাউকেই সে পছন্দ করেনি। আদৃতাকে দেখামাত্রই সায়ান যেন তার প্রেমে পড়ে যায়। দুই পরিবার কথাবার্তার মাধ্যমে সায়ান ও আদৃতাকে সময় দেয় এক বছর, যাতে তারা একে অপরকে বুঝতে পারে, জানতে পারে, একে অপরের অনুভূতি বুঝতে পারে। সায়ানের মা নিজে থেকেই এমনটা করেছেন, যাতে পরবর্তী সময়ে ভুল বোঝাবুঝি না হয়। ব্যস্ত সায়ান মোবাইলে আদৃতার সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা বলতে থাকে কিন্তু আংটি পরানোর পর থেকে তারা কখনো দেখা করেনি। এভাবে দুজন কথাবার্তা বলতে বলতে একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতে পারে। একপর্যায়ে আদৃতা কখন যে সায়ানের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে, সে নিজেও জানে না। মফস্বল শহরে থাকা আদৃতার মন যেন রীতিমতো ঢাকা শহরে পড়ে থাকে সায়ানের কাছে। ব্যস্ত সায়ান মাঝে একবার ঈদের সময় আদৃতাদের বাসায় এসে দেখেও গেছে। আদৃতা লজ্জায় সেদিন তেমন একটা কথা বলতে পারেনি পরিবারের সবার সামনে। অবশ্যই অডিও, ভিডিও কলে নিয়মিত কথা হয় দুজনের মধ্যে। লজ্জাবতী আদৃতা, সায়ানের সঙ্গে কথা বলার সময় এমনিতেই অনেক লজ্জা পায়।

বিয়ের সব নিয়মকানুন শেষ করে আদৃতাকে সায়ানের হাতে তুলে দেওয়া হলো। তার কান্নায় যেন আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে। আদৃতার কান্না দেখে সায়ানের দু’চোখ পানিতে টলমল করছে, যা দেখে শালা-শালিরা আবার হাসাহাসি করছে। সায়ান আদৃতার হাত দু’খানা চেপে ধরে আদুরে গলায় বলতে লাগল, আদৃতা, এটাই তোমার শেষ কান্না। আরও বলতে লাগল, আদৃতা, তোমাকে আমি আর কখনো কান্না করতে দেব না।

আদৃতা শ্বশুরবাড়ি এসেছে। পুরো পথ সায়ানের কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে। বিয়েবাড়ির নিয়মকানুন পালন করতে গিয়ে আদৃতার কাহিল অবস্থা। চার ঘণ্টার যাত্রায় সায়ান আদৃতার যথেষ্ট যত্ন করেছে, মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়েছে, মাঝে দু’একবার ঠান্ডা পানি ও হালকা খাবার খেতে দিয়েছে, যদিও আদৃতা পানি ছাড়া আর কিছুই খায়নি।

শ্বশুরবাড়ি আনার পর সায়ান আদৃতাকে বেশিক্ষণ স্টেজে কষ্ট না দিয়ে বসার ঘরে নিয়ে গেল। এদিক দিয়ে সায়ানের মা আরও বেশি নজরদারি করেছেন। শাশুড়ি মা আদৃতাকে অনেক যত্ন করতে লাগলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার ঘরের লক্ষ্মীটি যেন কষ্ট না পায়, সবাই সেদিকে খেয়াল রাখবে কিন্তু! সায়ানকে ডেকে মা বললেন, বাবা আজ থেকে আদৃতার যত্ন করবি, আদৃতাকে ভালো রাখবি, তাহলে তুইও ভালো থাকবি।

রাতের খাবার শেষে শাশুড়ি মা আদৃতাকে এক কাপ চা দিয়েছেন, যাতে মাথাটা হালকা হয়। শাশুড়ি মা আবার আদৃতার মনের অনেক কথা জানেন। আদৃতার জন্য খুবই সুন্দরভাবে বাসরঘর সাজানো হয়েছে। আদৃতাকে বাসরঘরে নেওয়া হলো। এত সুন্দর সাজানো বাসরঘর দেখে আদৃতা চমকে গেল। মুহূর্তে মন ফুরফুরে হয়ে গেলেও শরীর কিন্তু বেশ দুর্বল। পুরো রুমে গোলাপ আর গোলাপ। বাহারি রঙের গোলাপের সুগন্ধি যেন আদৃতাকে বিমুগ্ধ করে তুলেছে। আদৃতাকে যেন পরীর মতো লাগছে। সায়ান আদৃতাকে দেখে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল।

সবাই যে যার ঘরে চলে গেছে। এই ঘরে আজ প্রথম আদৃতা একজন পুরুষের সঙ্গে একা। লজ্জায় আদৃতার গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। টুকিটাকি কথা বলার পর সায়ান বুঝতে পারে, আদৃতা আজ প্রচুর ক্লান্ত, তাকে ঘুমের ব্যবস্থা করতে হবে। সায়ান আদৃতার অনুমতি নিয়ে তার সমস্ত ভারী গহনা খুলতে সাহায্য করল। আদৃতার হাতে কিংবা গলায় সায়ানের হালকা স্পর্শ তার ভালোই লাগছে। এরপর চুলের খোঁপা খুলতে বেশ খানিকক্ষণ লেগেছে দুজনের। সায়ান আদৃতাকে ওয়াশরুমে গিয়ে আরামদায়ক সুতি কাপড় পরে আসতে বলে। আদৃতা ওয়াশরুম থেকে বের হতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে যাবে অবস্থা। সায়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে, রাত তিনটা বাজে!

দুজনই সারা দিন খুব ব্যস্ত সময় পার করে খাটে এসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউই জানে না। অবশ্য আদৃতা খাটে এসেই ঘুমিয়ে পড়ে আর তা দেখে সায়ান আদৃতাকে ডিস্টার্ব করেনি। বেশ কয়েকবার এটা ওটা বললেও দেখতে পায়, আদৃতা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। অথচ এই রাতের অপেক্ষায় দুজন মিলে কত পরিকল্পনা করেছিল। সায়ান আদৃতার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে নিজেও একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। খুব ভোরে আদৃতা ঘুম ভেঙে দেখতে পায়, তার পাশে এক রাজকুমার ঘুমিয়ে আছে। আদৃতা চুপচাপ মনের আনন্দে বেশ খানিকক্ষণ সায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে। আদৃতার হালকা শব্দে সায়ান ঘুম থেকে উঠে বসে। দুজন একসঙ্গে বলে ওঠে, এটাই বুঝি আমাদের ফুলশয্যা? সায়ান আদৃতাকে জড়িয়ে ধরে বলে, মহারানি, তুমি আমার কাছে সবকিছু ছেড়ে এসেছ, আজ থেকে তুমি আমার, শুধুই আমার। তোমাকে ফুলশয্যার রাতে শান্তিতে ঘুমাতে দিতে পেরে আমি আজ অনেক আনন্দিত। আমাদের আগামী লক্ষ কোটি রাত হবে ফুলশয্যার রাত।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078