ক্লান্তি ও অবসাদ

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১১:১৫ , অনলাইন ভার্সন
ক্লান্তি বা অবসাদ প্রত্যেক মানুষের জীবনে কখনো কখনো আসে। শারীরিক পরিশ্রম থেকে যেমন ক্লান্তি আসে, তেমনি মানসিক ক্লান্তি থেকে অবসাদের সৃষ্টি হয়। অতএব, অবসাদ ও ক্লান্তি অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রত্যেক মানুষের জীবনে থাকেই এবং সেটিকে উত্তীর্ণ করে নিজেকেই আবার সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ এরই নাম হলো জীবন। নিচে অবসাদ ও ক্লান্তি নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা আপনাকে ও আপনার মনকে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে এবং সেই সঙ্গে অবসাদ ও ক্লান্তি ঘুচিয়ে দিতে সক্ষম হবে। তোমার জীবনে যতবার তুমি ক্লান্তি অনুভব করবে, ততবার তুমি জীবনে পরাজিত হবে।

যারা স্বাধীনতার আশীর্বাদ লাভের প্রত্যাশা করে, তাদের অবশ্যই এটি সমর্থন করার ক্লান্তি সহ্য করতে হবে। পাহাড়ে ওঠায় কোনো গৌরব নেই, যদি আপনি শুধু চূড়ায় উঠতে চান। আপনার এমন অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যা প্রকাশের সমস্ত মুহূর্তে থাকবে হৃদয়ভাঙা ক্লান্তি। এটিকেই একমাত্র লক্ষ্য করে চলতে হবে। যারা এই পৃথিবীর মহান জাতির কাজের সুফলগুলো পেতে চায়, তাদের অবশ্যই এটিকে সমর্থন করার ক্লান্তি সহ্য করতে হবে। অভ্যাসের শক্তি মহান। এটি আমাদের ক্লান্তি সহ্য করতে এবং ক্ষত ও ব্যথাকে তুচ্ছ করতে শেখায়, যা প্রত্যেক মানুষের জন্য অমূল্য। একজন সৈনিকের প্রথম গুণ হলো ক্লান্তি সহ্য করা; সাহস দ্বিতীয় গুণ মাত্র।

একটু চাটুকারিতা সব সময়ই একজন মানুষকে দারুণ ক্লান্তির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে। একটা বাড়ি তৈরি করতে আবেগ ও শক্তি লাগে। এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা আরও ভয়াবহ, কারণ এটা ক্লান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। একবার আপনি যখন সেটি বানিয়ে ফেললেন, তখন সেটিকে সেখানে সেভাবে বজায় রাখা অনেক ক্লান্তির বিষয়। ক্লান্ত আত্মা একটি ক্ষুধার্ত আত্মা। আমি যেকোনো দিন মানসিক ক্লান্তির চেয়ে শারীরিক ক্লান্তি পছন্দ করি, কারণ মানসিক ক্লান্তি আমাকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে। ক্লান্তি এখানে, আমার শরীরে, আমার পায়ে এবং চোখে। এটাই আপনাকে শেষ পর্যন্ত পায়।
বিশ্বাস শুধু একটি শব্দ, সূচিকর্ম যা এটিকে দূর করতে পারে। অভ্যাসের শক্তি মহান। এটি আমাদের ক্লান্তি সহ্য করতে এবং ক্ষত ও ব্যথাকে তুচ্ছ করতে শেখায়, যা প্রত্যেক মানুষের জন্য অমূল্য। আপনি কখনোই সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মূল্যে প্রয়োজনের তুলনায় নিজেকে বেশি ক্লান্ত করবেন না, এতে আপনার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আপনার শারীরিক ক্লান্তি আপনি ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত এবং বিশ্রাম নেওয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই সারিয়ে তুলতে পারবেন, কিন্তু মানসিক ক্লান্তি এত সহজে সেরে যাওয়ার নয়।

আপনাকে কাঁদতে হবে, চিৎকার করতে হবে, একই কথোপকথনটি পুনরাবৃত্তি করতে হবে, যতক্ষণ না আপনি এটি থেকে সঠিকভাবে মুক্তি পান। ক্লান্তি সর্বোত্তম বালিশ। এটি আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছুই দূরে সরিয়ে দেয় এবং মাথা রাখার মতো জায়গা করে দেয়। ক্লান্তি, যা আমরা অনুভব করি, তার একটি পারমাণবিক বোমার সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে। এটি আমাদের জীবন যেকোনো মুহূর্তে ধ্বংস করতে পারে। প্রত্যেকেই ক্লান্তির একটি পর্বের মধ্য দিয়ে যায় এবং আমি আলাদা নই। আপনার পেশায় নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা ক্লান্তি মোকাবিলার চাবিকাঠি।
যারা নিজেদের জন্য বিচার করার ক্লান্তি সহ্য করে, তাদের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে খুবই কম। আপনারও উচিত নিজেকে ঠিক এভাবেই গড়ে তোলা। অবসাদের কলম বিষণ্নতায় ভরা। যেকোনো যুদ্ধের সবচেয়ে সংকটময় সময়টা এমন নয়, যখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি; এটা সেই সময়, যখন আমি আর যত্ন করি না। ক্লান্তি, অস্বস্তি, নিরুৎসাহ কেবল প্রচেষ্টার লক্ষণ। এগুলো প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই থাকা দরকার। আমাদের ক্লান্তি প্রায়ই কাজের কারণে হয় না, কিন্তু উদ্বেগ, হতাশা ও বিরক্তি দ্বারা হয়।

ক্লান্তি আপনার স্নায়ুর প্রান্তরকে তেজি করে তোলে; এটি আপনার ভয় এবং আপনার দুর্বলতা প্রকাশ করে। একাকিত্ব যখন দীর্ঘায়িত হয়, তখন তা মানসিক অবসাদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। সর্বাধিক কঠিনতম মানসিক অবসাদের উদাহরণ হলো নিজেকে নিজের ভালো না লাগা। কায়িক পরিশ্রম যেমন মানুষকে করে তোলে শারীরিকভাবে ক্লান্ত, তেমনি দীর্ঘদিন একাকিত্বের মধ্যে জীবনযাপন করলে সে হয়ে পড়ে মানসিকভাবে ক্লান্ত। বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি সৃষ্টি করে একাকিত্ব, যা পরিশেষে মানুষের মনে চরম অবসাদ প্রদান করে।

প্রিয়জনের বিদায়ে, এ মন ব্যাকুল যখন, তখন ডেকে যায় বারে বারে, তবু স্তব্ধতা এসে ধরা দেয় আমার বীণার তারে। জানি না, জানি না, জানি না কী কারণ ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু, পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু ॥ এই-যে হিয়া থরো থরো কাঁপে আজি এমনতরো এই বেদনা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু। এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু, পিছন-পানে তাকাই যদি কভু। দিনের তাপে রৌদ্রজ্বালায় শুকায় মালা পূজার থালায়, সেই ম্লানতা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু। আমারে পড়িবে মনে কখন সে লাগি প্রহরে, প্রহরে আমি গান গেয়ে জাগি। ভয় পাছে শেষ রাতে ঘুম আসে আঁখিপাতে, ক্লান্ত কণ্ঠে মোর সুর ফুরায় যদি রে। আমার এ ক্লান্ত বিকেল বুকে হাওয়া লাগিয়ে হাঁটা কতটা পথ হেঁটেছি গন্তব্যহীন চেনা এ শহরের গলি ক্লান্তি নিয়ে বয়ে যায়।
বিরহী প্রহর, হৃদয় অসুখ ভাঙাবে প্রতিটি ভোর নদীর ঘাটে নিত্য যাত্রীর ভিড়ে গোধূলিকাল সুতানুটির তীরে আকাশজুড়ে রঙের খেলা চলে ব্যস্ত শহর ক্লান্ত নিয়ন জ্বালে ক্লান্ত ফেরি আসছে ফিরে, ধুঁকছে মানুষগুলো ওরা ফিরছে ঘরে বলে ঘরে ফেরার মাশুল দিল তবু তুমি অন্ধকারে বন্ধ থাকো, অজানা আলোর নেশায় আর রূপকথাদের সঙ্গে সময় খুঁজছে তোমায় ব্যস্ত আজিকে সকলে আমরা, সময় নেই কারও কথা বলার। তাই তো সম্পর্কগুলো ঠুনকো, অভাব সর্বত্রই ভালোবাসার। গড়ার আগেই ভাঙছে সম্পর্ক, আমরা সকলেই আজ যান্ত্রিক।

নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত এখন সবাই, তাই অবসাদ ঘিরেছে চারিদিক। রাতগুলো ক্লান্ত হয়ে নুয়ে পড়ে, গাছের পাতাগুলোও সৌম্য হয়ে ওঠে চারপাশে নির্জনতা ভেদ করে শুধু আমার অক্ষিযুগল জেগে থাকেÑকারণে বা অকারণে। অবসাদে দেহটাও তলিয়ে যেতে চায়, জাগে চোখের পাতারাÑতোমায় দেখার আশায়! দয়াময়ী, বাণী, বীণাপাণি, জাগাও জাগাও, সখী, ওঠাও আমারে দীনহীন। ঢালো এ হৃদয়মাঝে জ্বলন্ত অনলময় বল। দিনে দিনে অবসাদে হইতেছি অবশ মলিন; নির্জীব এ হৃদয়ের মনোবল। ক্রমে হয়ে পড়িতেছি ভূমিতে লুটায়ে, চারিদিকে চেয়ে দেখি শ্রান্ত আঁখি করি উন্মীলন। বন্ধুহীন-প্রাণহীন-জনহীন মরু আঁধার আঁধার সব নাই জল নাই তৃণ তরু, নির্জীব হৃদয় মোর ভূমিতলে পড়িছে লুটায়ে, এসো তুমি, এসো, মোরে রাখো এ মূর্ছনার ঘোরে। বলহীন হৃদয়েরে দাও সখী, দাও গো ওঠায়ে। অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে মাঝে মাঝে শুনি মহুয়া বনের ধারে কয়লার খনির গভীর, বিশাল শব্দ আর শিশিরে-ভেজা সবুজ সকালে অবসন্ন মানুষের শরীরে দেখি ধুলোর কলঙ্ক, ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয় কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।

শারীরিক ক্লান্তি শুধু কাজের কারণেই হয় না; কিছু হতাশা, উদ্বেগের থেকেও হয়। আপনি যতই ক্লান্তি বোধ করেন না কেন, আপনার পথে যত বাধাই আসুক না কেন, আপনার ভবিষ্যতের জন্য আপনার যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তার দিকে এগিয়ে যান। স্বপ্ন দেখতে কখনো ক্লান্ত হবেন না। ব্যর্থতার ভয় যাতে আপনাকে আপনার আত্মবিশ্বাসের পথ থেকে বিরত করতে না পারে। আপনার বিশ্বাস এবং সংকল্প আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দেবে এবং স্বপ্নকে সত্যি করে তুলবে। ক্লান্ত আত্মা একটি ক্ষুধার্ত আত্মা। তোমার জীবনে যতবার তুমি ক্লান্তি অনুভব করবে, ততবার তুমি জীবনে পরাজিত হবে। জীবন ক্লান্ত হওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বিশ্রাম নেওয়ার মাধ্যমে শারীরিক ক্লান্তি থেকে খুব সহজেই নিস্তার পাওয়া যায়, তবে মানসিক ক্লান্তি থেকে সহজে নিস্তার পাওয়া যায় না।

আমি মানসিক ক্লান্তির চেয়ে শারীরিক ক্লান্তি বেশি পছন্দ করি, কারণ মানসিক ক্লান্তি আমাকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে। ক্লান্তি ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু সুখ চিরস্থায়ী। আমার শরীর ক্লান্ত হতে পারে, কিন্তু আমার আত্মা উজ্জীবিত। যখন সুখ প্রকৃত হয়, তখন ক্লান্তি মূল্যবান। ক্লান্তি একটি অনুস্মারক যে আমরা কেবল মানুষ এবং আমাদের নিজেদেরও যত্ন নেওয়া দরকার। আমি ক্লান্ত হতে পারি, কিন্তু আমার হৃদয় সন্তুষ্ট। ক্লান্তি পুণ্যের শত্রু। ক্লান্তি ও অবসাদ সহজতম কাজগুলোকেও অসম্ভব করে তুলতে পারে। অবসাদ ও ক্লান্তি, যা আমাদের প্রেরণা ও শক্তি কেড়ে নেয়। ক্লান্তি হলো কুয়াশা, যা আমাদের চিন্তার স্বচ্ছতাকে অস্পষ্ট করে। অবসাদ ও ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে আমাদের কী করা উচিত? হ্যাঁ, নিজেকে সর্বদা সক্রিয় রাখুন। নিজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলুন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন। পর্যাপ্ত ঘুমান। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন। ক্লান্তি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে? হ্যাঁ, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যেখানে মানসিক অবসাদ আছে, সেখানে শারীরিক ক্লান্তি অবশ্যই থাকবে। মানসিক অবসাদ সৃষ্টিকারী উচ্চস্তরের চাপ আমাদের ক্লান্ত, খিটখিটে এবং অলস বোধ করায়।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078