যুক্তরাষ্ট্র হামলা বন্ধের অঙ্গীকার করলে সংলাপে বসবে ইরান : তাখত-রাভানচি 

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫, ১০:২৭ , অনলাইন ভার্সন
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানচি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের সঙ্গে নতুন করে কূটনৈতিক সংলাপে ফিরতে চায়, তাহলে আর কোনো হামলা হবে না তা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। ২৯ জুন (রবিবার) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

মাজিদ তাখত-রাভানচি জানান, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানকে জানিয়েছে তারা সংলাপে ফিরতে চায়, কিন্তু সংলাপ চলাকালে নতুন হামলা হবে কি না, এই “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে” তাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়।

১৩ জুন ভোরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হয়, যার কারণে ওমানের মাসকাটে নির্ধারিত ষষ্ঠ দফার পরোক্ষ সংলাপ বাতিল হয়ে যায়। গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।

তাখত-রাভানচি বলেন, ইরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার নিয়ে “অটল” থাকবে। তিনি পারমাণবিক বোমা তৈরির গোপন পরিকল্পনার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “আমাদের গবেষণা কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় পারমাণবিক উপকরণ আমাদের সরবরাহ করা হয়নি, তাই নিজেদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।”

তিনি যোগ করেন, “সমৃদ্ধির মাত্রা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু ‘একদম শূন্য সমৃদ্ধি করতে হবে, না হলে বোমা মেরে ধ্বংস করব’ — এটি জঙ্গলের আইন।”

ইসরায়েল ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে কয়েকজন বিজ্ঞানী ও কমান্ডারকে হত্যা করে। তাদের দাবি ছিল, ইরান শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চলেছে। জবাবে ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ১২ দিন চলা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোর্ডো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলে।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, হামলায় “গুরুতর কিন্তু সম্পূর্ণ ধ্বংস নয়” এমন ক্ষতি হয়েছে, যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” হয়েছে।

গ্রোসি বলেন, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি শুরু করতে পারে। জবাবে তাখত-রাভানচি বলেন, তা হবে কিনা তিনি নিশ্চিত নন।

আইএইএ-এর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। বুধবার ইরানের সংসদ আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থাটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষাবলম্বনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ট্রাম্প বলেছেন, ইরান “উদ্বেগজনক মাত্রায়” ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির পথে গেলে তিনি আবার বোমা হামলার বিষয়টি “অবশ্যই” বিবেচনা করবেন।

তাখত-রাভানচি জানান, নতুন সংলাপের জন্য এখনও কোনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা প্রথমে এর উত্তর চাই: সংলাপের সময় আর হামলা হবে কি?”

তিনি বলেন, “এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে পরিষ্কার হতে হবে। আমাদের আস্থার জন্য তারা কী দিতে চায় সেটিও স্পষ্ট করতে হবে।”

সংলাপে অংশ নিয়ে পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্বিবেচনা করবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা কেন এমন প্রস্তাবে সম্মত হবো?”
তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিসহ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি “শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যের জন্য।”

২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে ইরানকে ৩.৬৭% এর বেশি সমৃদ্ধি করতে দেওয়া হয়নি এবং ১৫ বছর ফোর্ডোতে কোনো সমৃদ্ধি না করার শর্ত ছিল। কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে সরে এসে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। ২০২১ সালে ফোর্ডোতে সমৃদ্ধি আবার শুরু করে ইরান এবং আইএইএ-এর মতে, ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়ে ৯টি বোমা বানানোর মতো মজুত তৈরি করেছে তারা।

ইউরোপীয় নেতাদের আস্থা ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, “যারা আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচির সমালোচনা করছেন, তাদের উচিত আমাদের প্রতি যে আচরণ হয়েছে সেটিরও সমালোচনা করা।”

তিনি যুক্ত করেন, “যদি তারা আমেরিকাকে সমালোচনা করার সাহস না রাখে, তাহলে চুপ থাকা উচিত, আগ্রাসন সমর্থনের চেষ্টা না করা উচিত।”

তাখত-রাভানচি বলেন, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে লক্ষ্য করে ‘শাসন পরিবর্তন’ করতে চায় না। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানিদের কেরানি শাসনের পতনের আহ্বান জানালেও ট্রাম্প বলেন, তিনি তা চান না।

তাখত-রাভানচি স্পষ্ট বলেন, “এটি হবে না, এটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।”

তিনি আরও বলেন, “কিছু ইরানি সরকারের কিছু কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে পারে, কিন্তু বিদেশি আগ্রাসনের মুখে সবাই ঐক্যবদ্ধ হবে।”

তিনি জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি টিকবে কিনা স্পষ্ট নয়, তবে “যতক্ষণ আমাদের ওপর আর কোনো হামলা না হয়, আমরা যুদ্ধবিরতি মেনে চলব।”

তাখত-রাভানচি বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, সংলাপ ও কূটনীতি চাই, কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আবার বিস্মিত না হতে হয়।”

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078