সংকীর্ণ হচ্ছে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৫, ১১:২২ , অনলাইন ভার্সন
কক্সবাজার স্টেশনের কাছেই রাস্তার ধারে ছোট্ট একটা বইয়ের দোকান, এর পাশেই চা আর স্ন্যাকসের আয়োজন আর গাছতলায় কংক্রিটের বেঞ্চ। ফেব্রুয়ারির আর্দ্র-শুষ্ক আবহাওয়ায় বিকালের দিকে বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী আড্ডায় মশগুল সেখানে। ঢাকা থেকে দুদিনের কাজে গিয়েছিলাম সে সময়। চায়ের আয়োজন খোঁজ করতেই এই জায়গার দেখা পাওয়া। চা নিয়ে তাদের পাশে যেতেই জায়গা করে দিলো ভদ্রতাবশত। কথায় কথায় জানা গেলো বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন তাদের অনেকে। কদিন আগেই শুনছিলাম দাতা সংস্থা ইউএসএআইড তাদের বেশিরভাগ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করেছে। চাকরি গেছে হাজারো মানুষের। এখানেও আড্ডারত তিন জনের চাকরি চলে গিয়েছে বলে জানালো তারা। কিছুটা হতাশা আর ক্ষোভ নিয়েই জানালো, এক সঙ্গে এতো মানুষের চাকরি গেছে যে দ্রুত আর একটি ব্যবস্থা খু্ব কঠিন হবে।

২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির সব প্রকল্পে ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা স্টপ-ওয়ার্ক-অর্ডারের ফলে বাংলাদেশেও ইউএসএআইডির ৫৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৫টি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বাংলাদেশ প্রায় ৭০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা) উন্নয়ন সহায়তা হারায়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভুগতে হচ্ছে কক্সবাজারের অনেককে। এদের বেশিরভাগই দেশের অন্যান্য জেলা থেকে এখানে এসেছেন চাকরির সুবাদে। সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব আনএমপ্লয়েড ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনালস-অডিপের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ৫৫টি প্রকল্প বন্ধ হওয়ায় অন্তত ৫০ হাজার কর্মজীবী বেকার হয়ে গেছেন।

চাকরি হারানোর গল্প কক্সবাজার কিংবা ইউএসআইডির প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো- বিবিএস এর গবেষণায় বের হয়ে এসেছে সার্বিক তথ্য। বিবিএস বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশজুড়ে প্রায় ২১ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ২৭ মে ঢাকায় ‘জেন্ডারভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বেকার হওয়াদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৮ লাখই নারী। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে চাকরি হারানোর দল এতো ভারি ছিল না।

অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম খান ডিডাব্লিউকে জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয়ভাবে এই শ্রম জরিপ পরিচালনা করে এবং বাংলাদেশের সব জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার কারিগরি প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করেই এই জরিপ করা হয়। ফলে এটি সমগ্র দেশের সর্বজনীন চিত্র হিসেবেই মানতে হবে। এই ২১ লাখ সংখ্যাটি খুবই উদ্বেগজনক। কেননা, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য ভালো মাধ্যম হলো শ্রম জরিপ। শ্রমঘন দেশ বলে বিশাল সংখ্যক সাধারণ মানুষ শ্রমের ওপরই নির্ভরশীল। সুতরাং অর্থনীতিতে কত কর্মসংস্থান আছে, কর্মসংস্থানের মান কেমন, কর্মসংস্থান সত্যিকার অর্থে মানুষের  জীবনযাত্রা ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট কিনা সেই বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।

তৌফিক খান জানান, এই জরিপে ২১ লাখ মানুষের চাকরি হারানোর কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। জরিপটি খুব ছোট পরিসরে কিছু তথ্য উপাত্ত বের করেছে, ফলে সাধারণভাবে এই জরিপের তথ্য উপাত্ত দিয়ে এর কারণগুলো বের করা কঠিন।  তবে আগে যেভাবে জরিপ করা হতো সেই পদ্ধতিতে অনেক দুর্বলতা ছিল। এখন সেটা নেই। খুবই আধুনিক পদ্ধতিতে এই জরিপকাজ করা হয়। তাই এর সমস্ত তথ্য উপাত্ত বাস্তবসম্মত। ধারণা করা যায়, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুটি কোয়ার্টারে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়েছে। এর একটা প্রধান কারণ ছিলো রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। বড় একটি  আন্দোলনের ভেতর দিয়ে গেছে দেশ। ফলে সেই সময় স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হয়েছে।

তথ্য উপাত্ত যা পাওয়া গেছে সেখানে দুঃখজনক বিষয় হলো কোন কোন সেক্টর থেকে চাকরি গেছে তা বলা হয়নি। এই অবস্থা কি কৃষিতে, না শিল্পে,  না সেবা খাতে কমলো, এই তথ্য জরুরি ভিত্তিতে সামনে আসা দরকার। অথচ এর মধ্যে সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটও করে ফেললো। কিন্ত অর্থ উপদেষ্টা এই বিষয়টি উল্লেখই করলেন না, তার মানে হলো বিষয়টি তিনি আমলে নেননি। বাংলাদেশেরে চাকরি ক্ষেত্রের যে প্রবণতা তা থেকে বলা যায়, যে ধরনের চাকরিগুলোর নিয়মনীতি বেশি বিপন্ন থাকে সেই খাতে  চাকরি যাওয়া সহজ। প্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে চাকরি যাবার হার কম। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ হয়তো কমে গেছে। যেমন কৃষিখাত, সেবাখাত, নির্মাণ শ্রমিক. রিকশা শ্রমিক, খুচরা বিক্রেতারা এই চাকরি হরোনোর ভাগে পড়তে পারেন বলে মনে করেন তৌফিক। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে শিল্পখাতে বিশেষ করে পোশাক কারখানা বন্ধ এবং শ্রম অসন্তোষ ছিল যা চাকরি যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে কিনা তা দেখতে হবে। এসব কারণেও কাজ বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের। তবে এ সময়ের মধ্যে রপ্তানি কমেনি। অতীতের উদাহরণ দিয়ে তৌফিক খান বলেন রপ্তানি বেড়ে যাওয়া মানেই যে কর্মসংস্থান বাড়ে এমন হয় না। তাই নীতিনির্ধারক পর্যায়ে এসব তথ্য উপাত্ত নিয়ে আরো বেশি করে আলোচনা করা দরকার। তৌফিক খান মনে করেন, এভাবে চাকরি হারানোর ঘটনার সামাজিক অভিঘাত অনেক বড়। গত বছর জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের মূল কারণ ছিলো দুঃশাসন, গণতান্ত্রিকহীনতা। আর আন্দোলনকারীরদের কাছে সবচেয়ে বড় অসন্তোষ ছিল কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য। বাংলাদেশ মূলত যুব সমাজে বেকারত্বের হার বেশি। দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চাহিদাটা বেশি। অথচ বাংলাদেশের জনসংখ্যানুপাতে সংস্থান খুব কম। ফলে সামাজিকভাবেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। বাড়ে হতাশা। যেহেতু শ্রমঘন দেশ, তাই  চাকরি কমে গেলে দারিদ্র্যতা, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ে।

গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ধামরাইরের একটি পোশাক কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন চম্পা, কাজের মধ্যেই হঠাৎ করে চম্পাসহ বেশ কয়েকজনকে ডেকে নেয় মূল অফিস। তাদের কারো চাকরি নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। জুন পর্যন্ত নতুন কোথাও চাকরিতে সুযোগ পাননি তারা। চম্পা জানায়, তার ও স্বামীর আয়ে সংসার ভালোই চলতো। দুই বাচ্চার লেখাপড়া, একটু ভালো খাবার দিতে পারতেন। এখন বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে পারছে না। তাই স্কুলও বন্ধ হয়ে গেছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওই প্রতিবেদনে চাকরি হারানো ২১ লাখের মধ্যে ১৮ লাখই নারী। বিষয়টি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তৌফিক খান বলেন, দেখতে হবে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়টির ওপর এর প্রভাব পড়ছে কিনা। গত কয়েক মাসে ঘরে-বাইরে নারীরা বিভিন্নভাবে তাদের সাধারণ কাজ কর্ম করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন, অধিকার বাধাগ্রস্ত হয়েছে তাদের। এরকম  সময়ে নারীদের প্রতি নীতিগতভাবে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। চাকরি হারানো, চাকরি পাওয়া, ক্ষুদ্র ব্যবসার মতো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ যদি কমে যায়, শ্রম বাজারে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে তখন সার্বিকভাবে নারীর ক্ষমতায়নের জায়গা, তাদের মানবাধিকার সুসংহত করার জায়গাগুলো বড় ধরনের সংকীর্ণ হয়, বাধাপ্রাপ্ত হয়। দ্রুত অর্থনৈতিক জায়গাগুলোতে নারীদের অবস্থান শক্তিশালী না করতে পারলে মধ্য মেয়াদে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ থাকে। তথ্য উপাত্ত পাওয়ার পর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেটে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া দরকার ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার তিন শূন্যের একটি হলো বেকারত্ব শূন্যে নামানো। কর্মসংস্থান যদি না থাকে তাহলে শ্রমিকের সরবরাহটা কমে যায়। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাবে না যেখানে মানুষ কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কারণ কর্মসংস্থান তৈরির জায়গা, বিনিয়োগের জায়গা, অর্থনীতি পুনর্গঠন, সংস্কারের কথা বলছি, এসব কিছুর কেন্দ্র হলো জনগণ। কিন্তু উন্নয়নের জন্য তাদের কাজ করা দরকার।

তৌফিক খান আরও বলেন, গত ১০-১৫ বছর ধরে আমরা দেখছি গার্মেন্টস খাতে রপ্তানি বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়েনি। আগে এই খাতে শ্রমিকদের আশিভাগই ছিল নারী, যা এখন পঞ্চাশে নেমে এসেছে। এর একটি কারণ হতে পারে, কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিক অধিকার যেমন চাকরি বদলানো, কর্ম-পরিবেশ, ডে-কেয়ার, শ্রম আইন অনুযায়ী নিজের অধিকার চাওয়ার মতো বিষয়গুলো যখন আসে তখন নারীদের চাকরি হুমকির মুখে পড়ে।

গত জানুয়ারিতে মানিকগঞ্জের মধ্য বরনীর বাসিন্দা শিল্পীও চাকরি হারান কোন রকম কারণ দর্শানোর সুযোগ ছাড়াই। কাজ করতেন আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায়। কাজের অভিজ্ঞতাও আট বছরের বেশি। শিল্পী মনে করেন, মালিক পক্ষের অনিয়ম-অন্যায় নিয়ে কথা বলাতেই তার চাকরি গেছে। আঠারো দফা দাবি নিয়ে শিল্পী ও তার বেশ কয়েকজন সহকর্মী সোচ্চার ছিলেন। টিফিন বিল, নাইট বিল, ডে-কেয়ার সেন্টারসহ আঠারো দফা দাবি ছিলো তাদের। এগুলোর বেশ কয়েকটি মেনেও নেন মালিকপক্ষ, তবে শিল্পীকে ঝুঁকি মনে করায় চাকরি থেকে অব্যাহতি পেতে হয় তার। শুধু তাই নয়, মালিক পক্ষ করা থেকে পোশাক শ্রমিকদের ডেটাবেইজে শিল্পীকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এতে করে শিল্পীর অন্য কোথাও চাকরি পাবার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।

অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অনারারি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যেকোনো সময় চাকরি বাজারে কর্মসংস্থানের ওপর যখন চাপ সৃষ্টি হয়, তখন প্রথম যে জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থান থেকে বিচ্যুত হয় তারা হলেন নারী। এর বড় কারণ হলো, তাদের আত্মপক্ষ রক্ষা করার মতো কোনো ধরনের ট্রেড ইউনিয়ন নেই। সংঘ শক্তি না থাকলে তারা চাকরি বাঁচানোর লড়াইটা করতে পারে না। এছাড়া শ্রম আইনে যেসব সুরক্ষার কথা, আইনের কথা বলা আছে যেগুলো মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকির কোনো ব্যবস্থাপনা সরকারের পক্ষ থেকে নেই। এছাড়া যে সমস্ত ক্ষেত্রে নারীরা প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি ছাড়াই কাজ করেন, যেসব জায়গায় নারীদের চাকরিচ্যুত করলে খরচও কম হয় প্রতিষ্ঠানগুলোর। বৈরী কাঠামো তার ওপর বিশেষ পরিস্থিতি যুক্ত হলে তখন নারীদের প্রতি আরো বেশি বিরূপ আচরণ তৈরি হয়। এরকম পরিস্থিতি দেখা যায় ৫ আগস্টে হাসিনা সরকার পতনের পরপর।

দেবপ্রিয় আরো বলেন, সাধারণভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং সেটার সামাজিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক বিচারে নারীরা অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। যেকোনো ধরনের ধাক্কা বা ঝুঁকি যদি বাড়ে তাহলে অবশ্যই সবচেয়ে বিপন্ন জনগোষ্ঠী হিসেবে নারীরা প্রথমেই ভুক্তভোগী হয়। এবং এটা যদি শ্রমবাজারে লক্ষ্য করা হয় যেখানে আশি শতাংশের ওপরে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রম। সেখানে নারীরা এরকম পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে চলে যায়। দ্বিতীয়ত, তারা কৃষি-শিল্প থেকে সেবা খাতের দিকে চলে যায় যেখানে তাদের আয় আরো কমে। আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যখন অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসে তখন যে সমস্ত কাজে মজুরি নাই কিন্তু জীবিকা নির্বাহের জন্য সমর্থন দেওয়া হয় নারীরা ওইরকম কাজে চলে যায়। এবং লক্ষণীয় বিষয় যেসব কাজে নারীরা স্বনিয়োজিত হন (ক্ষুদ্র ব্যাবসা), তারা লাভ-ক্ষতির হিসেবের বেলায় নিজের শ্রমের মজুরি ধরেন না। অর্থাৎ এক ধরনের আত্মশোষণ করেন তারা।

এক কথায় বলা যায় শ্রমের বাজারে সাধারণত, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এবং নারীদের ক্ষমতায়ন দুর্বল হওয়ার কারণে নারীরা সবচেয়ে বেশি বিপন্ন অবস্থায় থাকেন। যেকোনো সংকট সমস্যা দেখা দিলে তারা আরো খারাপ অবস্থার মধ্যে চলে যায় এবং তাদের প্রকৃত নগদ আয়ের জায়গায় সবচেয়ে বেশি ধাক্কা এসে লাগে। শ্রমের যে শর্তর মধ্যে তারা কাজ করেন সেটারও অবনমন হয়। এটা সামগ্রিকভাবে নারীরা যে শ্রম কাঠামো ও বাজার ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করেন তারই প্রতিফলন।

ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর নতুন সময়, নতুন ব্যবস্থায় রাষ্ট্র খুব বেশি কিছু দিতে পারেনি এখনো, এটা দুঃখজনক। আধুনিক সমাজে যেটা হয়, এ সমস্ত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে এক ধরনের নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা। দেশের ভেতরে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্ম সৃষ্টি করা এবং এই কর্মসংস্থানের সুযোগ যেন সে নিতে পারে তার জন্য তার দক্ষতা বৃদ্ধি করা হলো উন্নত রাষ্ট্রের কাজ। দ্বিতীয়ত হলো এরকম সংস্থান যদি সব সময় না থাকে তাহলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা বলতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাতার প্রচলন করা হয়েছে কিন্তু বেকার ভাতাতো নেই। বেকার জনগোষ্ঠী, এদের মধ্যে বিশেষ করে নারীদের প্রাধিকার দিয়ে ভাতার ব্যবস্থা করা। তবে এর থেকেও বড় ব্যবস্থা হতে পারে যেখানে প্রতিটি নাগরিকের ন্যূনতম আয়ের ব্যবস্থা করা। এর জন্য যে আর্থিক সংস্থান করা দরকার, যে ধরনের করারোহন করা দরকার, মুনাফার ওপর কর আরোপ করা দরকার সে সমস্ত বিষয়গুলো এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

দেবপ্রিয় মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে যে সুরক্ষা দেওয়া দরকার সেটা আমাদের দেশে হয় না। এছাড়া নারী অধিকার নিয়ে ক্ষীণভাবে সচেতনতা বেড়েছে। একই সঙ্গে উগ্রভাবে বিদ্বেষ বেড়েছে। আগামী দিনে যেহেতু নির্বাচন হবে এসব বিষয়কে তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ও নির্বাচনি প্রচারণায় দেখতে চান। আসন্ন নির্বাচনে এই বিষয়গুলোকে জাতীয় বিতর্কের বিষয় করতে হবে। কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা করতে হলে নারীর কর্মসংস্থান বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। নাগরিকের নিরাপত্তার আলোচনা হলে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি আরো বড়ভাবে দেখতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করতে হলে বিভিন্ন স্তরের নারী দুস্থ থেকে আধুনিক-সবার সুরক্ষার কথা চিন্তা করতে হবে। কর্মজীবী নারীদের বিষয়ে বাচ্চাদের ডে-কেয়ার এখন বড় ইস্যু। এই আলোচনাটি যদি আগামীতে নীতিনির্ধারকরা না করতে পারে এবং এ সমস্ত বিষয়কে শুধু সরকার খাতে নয় ব্যক্তিখাতে না দাঁড় করাতে পারা যায়, তাহলে সমাধান হবে না।

গল্পটি শুরু করেছিলাম গত ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজারে একদল বেকার তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে আলাপ দিয়ে। তাদের মধ্যে একজন গত মাসে নতুন চাকরি পেয়েছে। তবে চাকরি পাবার ক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতা অনুসারে পদ এবং বেতন দুটোরই অবনমন মেনে নিয়ে কাজে যোগ দিতে হয়েছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষক তৌফিককুল ইসলাম জানান, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকায় দক্ষ কর্মীরা পছন্দসই চাকরি পাচ্ছেন না। ফলে কর্মসংস্থান জীবন মান উন্নয়নে যে ধরনের ভূমিকা রাখা দরকার তাও হচ্ছে না। সূত্র : ডয়চে ভেলে

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078