
আজকাল চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, দেখতে-বুঝতে আফসোস রক্তের সম্পর্কের এতই অবক্ষয়। তাই রক্তের সম্পর্ক নিয়ে কিছু যৌক্তিক কথা বলতে আজ আপনাদের সামনে হাজির হলাম। আপনারা নিশ্চয় এ বিষয়ে ভাববেন, পড়বেন আর মিলিয়ে নেবেন নিজেদের জীবনব্যবস্থা। আর নিজেদের কোনো ত্রুটি থাকলে সংশোধন করে সুশীল সমাজের ভূমিকা রাখবেন আশা করি। কেবল আমরাই পারি আমাদের নিজেদের আর সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে।
রক্তের সম্পর্ক থাকলেই আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আত্মার সম্পর্কই সত্যিকারের আত্মীয়তার পরিচয় দেয়। আত্মীয়-স্বজনের ভালোবাসা তখনই বোঝা যায়, যখন সত্যিকারের প্রয়োজন হয়। যে আত্মীয় কষ্টের সময় পাশে থাকে না, সে শুধু নামের আত্মীয়, হৃদয়ের নয়। কিছু আত্মীয় আছে, যারা শুধু সুখের সময়েই আপন হয়ে ওঠে, দুঃখের সময়ে নয়। যে আত্মীয়-স্বজন শুধু স্বার্থের জন্য কাছে আসে, তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো। সব সম্পর্কই গুরুত্বপূর্ণ, তবে আত্মার সম্পর্ক ছাড়া রক্তের সম্পর্ক অর্থহীন। আত্মীয়-স্বজনের আসল মূল্যায়ন বিপদের মুহূর্তেই বোঝা যায়। আত্মীয় শুধু নামের জন্য নয়, হৃদয়ে স্থান পাওয়ার মতো হওয়া উচিত। সবাই আত্মীয় হতে পারে, কিন্তু সবাই আপন হতে পারে না।
আত্মীয়-স্বজন মানে শুধু সম্পর্ক নয়, মানে ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং একে অপরের পাশে থাকা। স্বার্থের সম্পর্ক কখনো টেকে না, কিন্তু ভালোবাসার সম্পর্ক চিরস্থায়ী হয়। রক্তের সম্পর্ক থাকলেই আত্মীয় হওয়া যায় না, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য ভালোবাসা, সম্মান ও আন্তরিকতাই আসল। আত্মীয়-স্বজন রক্তের সম্পর্কের বাঁধনে গাঁথা, কিন্তু হৃদয়ের বন্ধনই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে। আত্মীয়তার প্রকৃত মূল্য তখনই বোঝা যায়, যখন বিপদে পড়ে তাদের পাশে পাওয়া যায়। সম্পর্ক শুধু রক্তের নয়, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মাধ্যমেও আত্মীয়তা গড়ে ওঠে। আত্মীয়রা সব সময় কাছের মানুষ হয় না, কিছু কাছের মানুষ আত্মীয়ের চেয়েও আপন হয়।
আত্মীয়তা রক্ষার জন্য ভালোবাসা ও সহনশীলতাই প্রধান চাবিকাঠি। যে আত্মীয় কেবল সুখের দিনে পাশে থাকে, সে প্রকৃত আত্মীয় নয়। আত্মীয়তা শুধু জন্মসূত্রে পাওয়া যায় না, ভালোবাসা দিয়ে অর্জন করাও যায়। যে আত্মীয় স্বার্থের জন্য আসে, সে আত্মীয় নয়, শুধুই এক পরিচিত মুখ। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি, আত্মীয়তার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সহজ নয়। আত্মীয়তা টিকিয়ে রাখতে চাইলে অহংকারকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। আত্মীয়রা তখনই মূল্যবান, যখন তারা শুধু দুঃখের নয়, সুখের সঙ্গীও হয়। রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার বন্ধন চিরকাল অটুট থাকে। আত্মীয়তা শুধু নামের জন্য নয়, মনের জন্যও হওয়া উচিত।
পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন হলো জীবনের শক্তির মূল উৎস। একজন ভালো আত্মীয় হাজারো পরের চেয়ে মূল্যবান। পরের অবহেলা সহ্য করা যায়, কিন্তু আত্মীয়দের অবহেলা হৃদয় ভেঙে দেয়। রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোই যখন অবহেলা করে, তখন বুঝতে হবে ভালোবাসার থেকেও স্বার্থ বড় হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন তখনই খোঁজ নেয়, যখন তাদের স্বার্থ থাকে; প্রয়োজন ফুরোলেই অবহেলা শুরু হয়। দূরের মানুষের অবহেলা কষ্ট দেয় না, কাছের মানুষের অবহেলাই হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে!
স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে আত্মীয়রাই প্রথম দূরে সরে যায়, তখন সম্পর্ক কেবল নামেই থেকে যায়। যাদের আপন ভেবে ভালোবেসেছি, তারাই একদিন প্রয়োজন ফুরোলে অবহেলা করেছে। কিছু আত্মীয়-স্বজন শুধু দুঃসময়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে কেবল স্বার্থের সময় দেখা দেয়! সম্পর্ক তখনই বোঝা যায়, যখন দরকারে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। আত্মীয়-স্বজনের অবহেলা তখন সবচেয়ে বেশি পোড়ায়! আত্মীয়দের অবহেলা প্রমাণ করে, সম্পর্ক নয়, বরং স্বার্থই অনেকের কাছে বেশি মূল্যবান। বাইরের মানুষের কষ্ট দেওয়া সহ্য করা যায়, কিন্তু আত্মীয়দের অবহেলা মনকে চিরদিনের জন্য ভেঙে দেয়।
পরের অবহেলা যতটা না কষ্ট দেয়, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যথা দেয় আত্মীয়ের অবজ্ঞা। যে আত্মীয় কেবল প্রয়োজন ফুরোলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আসলে আত্মীয় নয়, স্বার্থপর এক পরিচিত মুখ। আত্মীয়দের অবহেলা বোঝার জন্য বিপদে পড়ার অপেক্ষা করলেই হবে! কিছু আত্মীয়-স্বজন শুধু নামের আত্মীয়, কিন্তু কাজে পরের চেয়েও দূরে। সবাই বলে, আত্মীয়-স্বজন পাশে থাকে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, প্রয়োজন ছাড়া তারা খোঁজও নেয় না। স্বার্থ চলে গেলে আত্মীয়ও পর হয়ে যায়, এটাই বাস্তবতা।
আত্মীয়দের অবহেলা সেই আয়নার মতো, যা আমাদের সত্যিকারের অবস্থান দেখিয়ে দেয়। কিছু আত্মীয়ের ভালোবাসা শুধু স্বার্থের মোড়কে বন্দী, স্বার্থ ফুরোলেই তারা অচেনা হয়ে যায়। যে আত্মীয় বিপদে অবহেলা করে, সুখে তার ভালোবাসা নিছক ভণ্ডামি। আত্মীয়রা যদি আপন হতো, তাহলে কষ্টের দিনে পরের দরজায় যেতে হতো না। নিঃস্ব মানুষের আত্মীয় কমে যায়, আর ধনী মানুষের আত্মীয় বাড়তে থাকে। স্বার্থ ছাড়া কিছু আত্মীয়ের ভালোবাসা কল্পনার চেয়েও ক্ষণস্থায়ী। আপনজনের অবহেলা, পরের শত্রুতার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা দেয়। আত্মীয়- স্বজন তখনই অবহেলা করে, যখন তারা তোমাকে প্রয়োজনহীন মনে করে।
স্বজনের অবহেলা
সব আঘাত বাইরে থেকে আসে না, কিছু আঘাত খুব আপন নামধারীদের হাত থেকেই আসে। রক্তের সম্পর্ক থাকলেও মন যদি স্বচ্ছ না হয়, সেই আত্মীয়তার কোনো মূল্য থাকে না। আপন মানুষ যখন অবহেলা করে, তখন অপরিচিতের অবহেলাও সহজ লাগে। আত্মীয়-স্বজনের খারাপ ব্যবহার এমন এক বিষ, যা ধীরে ধীরে ভেতরটা নিঃশেষ করে দেয়। রক্তের সম্পর্কের চেয়ে আচরণ অনেক বেশি মূল্যবান। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে ব্যবহার, নাম নয়। আপন বলেই তাদের আচরণে সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে।
দূরের মানুষ আঘাত দিলে এতটা লাগে না। ভালো ব্যবহারের অভাব রক্তের সম্পর্ককেও অচেনা করে দেয়। আত্মীয়তা টিকে থাকে হৃদয়ের মানসিকতায়, শুধু জন্মসূত্রে নয়। মিষ্টি কথায় মুখোশ পরে থাকা আত্মীয়দের চেনা কঠিন, কিন্তু ব্যবহারে তাদের আসল রূপ ধরা পড়ে। আত্মীয়ের খারাপ ব্যবহার হলো সেই শিক্ষা, যা মানুষকে মানুষ চেনার পাঠ দেয়।
ইসলামের শিক্ষা
ইসলামে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা ও তাদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নিচে এর কিছু গুরুত্ব উপস্থাপন করা হলো :
‘আল্লাহর ইবাদত করো এবং তার সাথে কাউকে শরিক করো না, পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম-মিসকিন, নিকটবর্তী প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, পাশে বসবাস করা ব্যক্তি বা কাছে বসা সাথি, মজলুম, মুসাফির এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদয় আচরণ করো।’ -সুরা আন-নিসা, আয়াত ৩৬
‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর জন্য আল্লাহর লা’নত ও অভিসম্পাত রয়েছে।’ Ñসুরা মুহাম্মদ, আয়াত ২২-২৩
‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ -সহিহ বুখারি ও মুসলিম
‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না : অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং জাদুতে বিশ্বাসী।’ -সহিহ হাদিস
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে জীবনে সুখ ও শান্তি আসে। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করলে মানসিক শান্তি ও পারিবারিক সুখ বৃদ্ধি পায়, যা সমাজে স্থিতিশীলতা আনে। আত্মীয়তার সম্পর্ক মানবিক সমাজকে একত্রিত করে। আত্মীয়তার সম্পর্ক সমাজের বন্ধনকে মজবুত করে, যা সামাজিক সংহতি ও ঐক্য নিশ্চিত করে। আত্মীয়দের হক আদায়ের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায় করলে সমাজে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা সামাজিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে উত্তম আচরণ করলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন। আল্লাহ তায়ালা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে উত্তম আচরণে সন্তুষ্ট হন, যা তাঁর রহমত ও বরকত লাভের মাধ্যম। আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করা একটি মহৎ গুণ। আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করা মানবিক গুণাবলির প্রকাশ, যা সমাজে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা মহাপাপ। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ইসলামে মহাপাপ হিসেবে গণ্য, যা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তির কারণ হতে পারে।
আত্মীয়-স্বজন নিয়ে অনুভূতির গভীরতা বোঝানো যায় না শুধু কথায়। এই সম্পর্কগুলো কখনো আশ্রয়, কখনো আবার অভিমানের এক নাম। তাই আত্মীয়তার টান ধরে রাখতে হলে দরকার পারস্পরিক সম্মান, আন্তরিকতা ও বিশ্বাস। আমাদের উচিত শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়, হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলা। কারণ আত্মীয়তা তখনই সার্থক, যখন তাতে ভালোবাসার ছোঁয়া থাকে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করার তওফিক দান করুন। আমিন।
রক্তের সম্পর্ক থাকলেই আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আত্মার সম্পর্কই সত্যিকারের আত্মীয়তার পরিচয় দেয়। আত্মীয়-স্বজনের ভালোবাসা তখনই বোঝা যায়, যখন সত্যিকারের প্রয়োজন হয়। যে আত্মীয় কষ্টের সময় পাশে থাকে না, সে শুধু নামের আত্মীয়, হৃদয়ের নয়। কিছু আত্মীয় আছে, যারা শুধু সুখের সময়েই আপন হয়ে ওঠে, দুঃখের সময়ে নয়। যে আত্মীয়-স্বজন শুধু স্বার্থের জন্য কাছে আসে, তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো। সব সম্পর্কই গুরুত্বপূর্ণ, তবে আত্মার সম্পর্ক ছাড়া রক্তের সম্পর্ক অর্থহীন। আত্মীয়-স্বজনের আসল মূল্যায়ন বিপদের মুহূর্তেই বোঝা যায়। আত্মীয় শুধু নামের জন্য নয়, হৃদয়ে স্থান পাওয়ার মতো হওয়া উচিত। সবাই আত্মীয় হতে পারে, কিন্তু সবাই আপন হতে পারে না।
আত্মীয়-স্বজন মানে শুধু সম্পর্ক নয়, মানে ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং একে অপরের পাশে থাকা। স্বার্থের সম্পর্ক কখনো টেকে না, কিন্তু ভালোবাসার সম্পর্ক চিরস্থায়ী হয়। রক্তের সম্পর্ক থাকলেই আত্মীয় হওয়া যায় না, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য ভালোবাসা, সম্মান ও আন্তরিকতাই আসল। আত্মীয়-স্বজন রক্তের সম্পর্কের বাঁধনে গাঁথা, কিন্তু হৃদয়ের বন্ধনই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে। আত্মীয়তার প্রকৃত মূল্য তখনই বোঝা যায়, যখন বিপদে পড়ে তাদের পাশে পাওয়া যায়। সম্পর্ক শুধু রক্তের নয়, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মাধ্যমেও আত্মীয়তা গড়ে ওঠে। আত্মীয়রা সব সময় কাছের মানুষ হয় না, কিছু কাছের মানুষ আত্মীয়ের চেয়েও আপন হয়।
আত্মীয়তা রক্ষার জন্য ভালোবাসা ও সহনশীলতাই প্রধান চাবিকাঠি। যে আত্মীয় কেবল সুখের দিনে পাশে থাকে, সে প্রকৃত আত্মীয় নয়। আত্মীয়তা শুধু জন্মসূত্রে পাওয়া যায় না, ভালোবাসা দিয়ে অর্জন করাও যায়। যে আত্মীয় স্বার্থের জন্য আসে, সে আত্মীয় নয়, শুধুই এক পরিচিত মুখ। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি, আত্মীয়তার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সহজ নয়। আত্মীয়তা টিকিয়ে রাখতে চাইলে অহংকারকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। আত্মীয়রা তখনই মূল্যবান, যখন তারা শুধু দুঃখের নয়, সুখের সঙ্গীও হয়। রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার বন্ধন চিরকাল অটুট থাকে। আত্মীয়তা শুধু নামের জন্য নয়, মনের জন্যও হওয়া উচিত।
পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন হলো জীবনের শক্তির মূল উৎস। একজন ভালো আত্মীয় হাজারো পরের চেয়ে মূল্যবান। পরের অবহেলা সহ্য করা যায়, কিন্তু আত্মীয়দের অবহেলা হৃদয় ভেঙে দেয়। রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোই যখন অবহেলা করে, তখন বুঝতে হবে ভালোবাসার থেকেও স্বার্থ বড় হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন তখনই খোঁজ নেয়, যখন তাদের স্বার্থ থাকে; প্রয়োজন ফুরোলেই অবহেলা শুরু হয়। দূরের মানুষের অবহেলা কষ্ট দেয় না, কাছের মানুষের অবহেলাই হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে!
স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে আত্মীয়রাই প্রথম দূরে সরে যায়, তখন সম্পর্ক কেবল নামেই থেকে যায়। যাদের আপন ভেবে ভালোবেসেছি, তারাই একদিন প্রয়োজন ফুরোলে অবহেলা করেছে। কিছু আত্মীয়-স্বজন শুধু দুঃসময়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে কেবল স্বার্থের সময় দেখা দেয়! সম্পর্ক তখনই বোঝা যায়, যখন দরকারে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। আত্মীয়-স্বজনের অবহেলা তখন সবচেয়ে বেশি পোড়ায়! আত্মীয়দের অবহেলা প্রমাণ করে, সম্পর্ক নয়, বরং স্বার্থই অনেকের কাছে বেশি মূল্যবান। বাইরের মানুষের কষ্ট দেওয়া সহ্য করা যায়, কিন্তু আত্মীয়দের অবহেলা মনকে চিরদিনের জন্য ভেঙে দেয়।
পরের অবহেলা যতটা না কষ্ট দেয়, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যথা দেয় আত্মীয়ের অবজ্ঞা। যে আত্মীয় কেবল প্রয়োজন ফুরোলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আসলে আত্মীয় নয়, স্বার্থপর এক পরিচিত মুখ। আত্মীয়দের অবহেলা বোঝার জন্য বিপদে পড়ার অপেক্ষা করলেই হবে! কিছু আত্মীয়-স্বজন শুধু নামের আত্মীয়, কিন্তু কাজে পরের চেয়েও দূরে। সবাই বলে, আত্মীয়-স্বজন পাশে থাকে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, প্রয়োজন ছাড়া তারা খোঁজও নেয় না। স্বার্থ চলে গেলে আত্মীয়ও পর হয়ে যায়, এটাই বাস্তবতা।
আত্মীয়দের অবহেলা সেই আয়নার মতো, যা আমাদের সত্যিকারের অবস্থান দেখিয়ে দেয়। কিছু আত্মীয়ের ভালোবাসা শুধু স্বার্থের মোড়কে বন্দী, স্বার্থ ফুরোলেই তারা অচেনা হয়ে যায়। যে আত্মীয় বিপদে অবহেলা করে, সুখে তার ভালোবাসা নিছক ভণ্ডামি। আত্মীয়রা যদি আপন হতো, তাহলে কষ্টের দিনে পরের দরজায় যেতে হতো না। নিঃস্ব মানুষের আত্মীয় কমে যায়, আর ধনী মানুষের আত্মীয় বাড়তে থাকে। স্বার্থ ছাড়া কিছু আত্মীয়ের ভালোবাসা কল্পনার চেয়েও ক্ষণস্থায়ী। আপনজনের অবহেলা, পরের শত্রুতার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা দেয়। আত্মীয়- স্বজন তখনই অবহেলা করে, যখন তারা তোমাকে প্রয়োজনহীন মনে করে।
স্বজনের অবহেলা
সব আঘাত বাইরে থেকে আসে না, কিছু আঘাত খুব আপন নামধারীদের হাত থেকেই আসে। রক্তের সম্পর্ক থাকলেও মন যদি স্বচ্ছ না হয়, সেই আত্মীয়তার কোনো মূল্য থাকে না। আপন মানুষ যখন অবহেলা করে, তখন অপরিচিতের অবহেলাও সহজ লাগে। আত্মীয়-স্বজনের খারাপ ব্যবহার এমন এক বিষ, যা ধীরে ধীরে ভেতরটা নিঃশেষ করে দেয়। রক্তের সম্পর্কের চেয়ে আচরণ অনেক বেশি মূল্যবান। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে ব্যবহার, নাম নয়। আপন বলেই তাদের আচরণে সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে।
দূরের মানুষ আঘাত দিলে এতটা লাগে না। ভালো ব্যবহারের অভাব রক্তের সম্পর্ককেও অচেনা করে দেয়। আত্মীয়তা টিকে থাকে হৃদয়ের মানসিকতায়, শুধু জন্মসূত্রে নয়। মিষ্টি কথায় মুখোশ পরে থাকা আত্মীয়দের চেনা কঠিন, কিন্তু ব্যবহারে তাদের আসল রূপ ধরা পড়ে। আত্মীয়ের খারাপ ব্যবহার হলো সেই শিক্ষা, যা মানুষকে মানুষ চেনার পাঠ দেয়।
ইসলামের শিক্ষা
ইসলামে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা ও তাদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নিচে এর কিছু গুরুত্ব উপস্থাপন করা হলো :
‘আল্লাহর ইবাদত করো এবং তার সাথে কাউকে শরিক করো না, পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম-মিসকিন, নিকটবর্তী প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, পাশে বসবাস করা ব্যক্তি বা কাছে বসা সাথি, মজলুম, মুসাফির এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদয় আচরণ করো।’ -সুরা আন-নিসা, আয়াত ৩৬
‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর জন্য আল্লাহর লা’নত ও অভিসম্পাত রয়েছে।’ Ñসুরা মুহাম্মদ, আয়াত ২২-২৩
‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ -সহিহ বুখারি ও মুসলিম
‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না : অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং জাদুতে বিশ্বাসী।’ -সহিহ হাদিস
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে জীবনে সুখ ও শান্তি আসে। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করলে মানসিক শান্তি ও পারিবারিক সুখ বৃদ্ধি পায়, যা সমাজে স্থিতিশীলতা আনে। আত্মীয়তার সম্পর্ক মানবিক সমাজকে একত্রিত করে। আত্মীয়তার সম্পর্ক সমাজের বন্ধনকে মজবুত করে, যা সামাজিক সংহতি ও ঐক্য নিশ্চিত করে। আত্মীয়দের হক আদায়ের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায় করলে সমাজে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা সামাজিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে উত্তম আচরণ করলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন। আল্লাহ তায়ালা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে উত্তম আচরণে সন্তুষ্ট হন, যা তাঁর রহমত ও বরকত লাভের মাধ্যম। আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করা একটি মহৎ গুণ। আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করা মানবিক গুণাবলির প্রকাশ, যা সমাজে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা মহাপাপ। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ইসলামে মহাপাপ হিসেবে গণ্য, যা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তির কারণ হতে পারে।
আত্মীয়-স্বজন নিয়ে অনুভূতির গভীরতা বোঝানো যায় না শুধু কথায়। এই সম্পর্কগুলো কখনো আশ্রয়, কখনো আবার অভিমানের এক নাম। তাই আত্মীয়তার টান ধরে রাখতে হলে দরকার পারস্পরিক সম্মান, আন্তরিকতা ও বিশ্বাস। আমাদের উচিত শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়, হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলা। কারণ আত্মীয়তা তখনই সার্থক, যখন তাতে ভালোবাসার ছোঁয়া থাকে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করার তওফিক দান করুন। আমিন।