বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর এসএসসি পাস

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৬ , অনলাইন ভার্সন
শিক্ষার কোনো বয়স নেই, জানার কোনো শেষ নেই। যে কোনো বয়সেই যে পড়ালেখা শুরু করা যায় বিয়ের পরও তা প্রমাণ করেছেন কিশোরগঞ্জের কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার দম্পতি। এই দম্পতি ৫১ ও ৪৪ বছর বয়সে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
১০ জুলাই (বৃহস্পতিবার) এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পেয়ে তাদের মাঝে যেন আনন্দের বন্যা বইছে। নিজেরাও যেমন খুশি হয়েছেন, তেমনি তাদের ছেলে-মেয়েরাও খুশি হয়েছে।

এ দম্পতির পাঁচ সন্তান সবাই পড়াশোনা করছেন। এমনকি দুজনের বাবা পেশায় শিক্ষক ছিলেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও শিক্ষিত। এসএসসি পাস না করায় তাদের মনে দুঃখ ছিল। অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির জোরে এবার তারা সেই দুঃখ ঘুচিয়েছেন।
 কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার এবার নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দেন। দুজনই জিপিএ- ৪.১১ পেয়ে পাস করেছেন। বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করায় এ দম্পতিকে অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কাইসার হামিদ দৈনিক নয়াদিগন্ত এবং রোকেয়া আক্তার দৈনিক বুলেটিন পত্রিকার কুলিয়ারচর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।

সাংবাদিক কাইসার হামিদ বলেন, আমার সাংবাদিকতার বয়স ৩০ পেরিয়েছে। আমি সক্রিয় ভাবেই এই পেশায় কাজ করেছি সমাজ থেকে অনেক ভালো কিছু পেয়েছি। কেবল কষ্ট ছিল পড়াশোনা নিয়ে। আমাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই একই কষ্ট। বাইরে গেলে পড়াশোনার প্রসঙ্গ এলে চুপ থাকতাম। অনেকে ইচ্ছা করে খোঁচা দিতেন। এসএসসি পাস না করে সাংবাদিকতা করছেন কীভাবে, অনেকে প্রশ্ন তুলতেন। পরে যেভাবে হোক এসএসসি পাসের পরিকল্পনা করলাম। সেই অনুযায়ী ভর্তি হয়ে দুজনে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেই।
 
কাইসার হামিদের বাড়ি কুলিয়ারচরের গোবরিয়া গ্রামে। রোকেয়া আক্তারের বাড়ি জেলার কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের মেয়ে। দু-জনের বাবা পেশায় ছিলেন শিক্ষক। তারা বিয়ে করেন আজ থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালের ১৬ মার্চ। এ দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান নাসরিন সুলতানা ইতিমধ্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। দ্বিতীয় সন্তান জেসমিন সুলতানা স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী এবং তৃতীয় সন্তান মাইমুনা পড়ছেন নার্সিং বিষয়ে। ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন নবম এবং আবদুল্লাহ ফাহিম সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর পরীক্ষায় পাস করতে পেরে আনন্দিত রোকেয়া আক্তার বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে হয় পরে সন্তান জন্ম হয়। এ কারণে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এই কষ্ট দুই যুগের অধিক সময় ধরে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই কষ্ট দূর করার উপায় খুঁজতাম। এটা বুঝতে পারি কষ্ট দূর করতে হলে পরীক্ষা দিয়ে পাস করার বিকল্প নেই। সে কারণেই সাহস করে পরীক্ষা দিলাম এবং পরীক্ষার ফল পেলাম এখন আমরা খুব খুশি। 

দ্বিতীয় সন্তান জেসমিন সুলতানা বলেন, মা-বাবা দুজনই এসএসসি পাস নয় বিষয়টি প্রকাশ করা কষ্টকর ছিল। যদিও এমন পরিস্থিতিতে কখনই পড়তে হয়নি। কারণ কেউ জানতোই না মা-বাবা এসএসসি পাস করেনি। তবে এই বয়সে মা-বাবার পড়াশোনার ইচ্ছা এবং পরীক্ষা দিয়ে পাস করার বিষয়টি আমাদের ভাইবোনদের অনেক আনন্দ দিচ্ছে। আমরা এ থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারি। লজ্জা নয় শিক্ষার কোনো বয়স নেই।

এই সাংবাদিক দম্পতি বিয়ের আগে এসএসসি দিতে না পারলেও কয়েকবার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সাংসারিক চাপে শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। তবে মনের জোর এবং স্বজনদের উৎসাহে পড়াশোনা করে এবার এসএসসি পাস করেছেন। 

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078