মানহানি মামলার মান থাকছে?

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ২০:৫২ , অনলাইন ভার্সন
এক মা ভুগছিলেন তার ছেলের পরকীয়া প্রেমবিষয়ক ঝামেলায়। গত ১১ জুলাই, শুক্রবার, বিকাল ৪টা ২৬ মিনিটের দিকে এই জননী ফোন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এটিসির নম্বরে। জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাঠমান্ডুগামী একটি ফ্লাইটে বোমা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এমন একটি তথ্যসমৃদ্ধ ফোনে সর্বোচ্চ অ্যাটেনশন দেয় কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরজুড়ে সতর্কতা জারি। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থানরত বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটটি রানওয়ে থেকে ফিরিয়ে এনে যাত্রী নামিয়ে শুরু হয় তল্লাশি। ১৪২ যাত্রী ও ৭ ক্রুকে নামিয়ে চললো ৩ ঘন্টা তল্লাশি। মিললো কিছু?  
মিলেছে কেবলই ভয়-আতঙ্ক-অস্থিরতা। কোনো বোমা পাওয়া না যাওয়ায় পরে উড়োজাহাজটি নিরাপদে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এক পর্যায়ে আটক করা হয় মা-ছেলেসহ তিনজনকে। বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। ওই মায়ের ছেলে পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে কাঠমান্ডু যেতে চাইছিলেন। বিষয়টি জানার পর ছেলেকে আটকে দিতে বিমানে বোমা থাকার গুজব রটান মা। কতো বুদ্ধি এই মা জননীর?
এটি কোন মাত্রার অপরাধ? কেবল গুজব, দুষ্টামি বলা যায় না। এটি দেশের জন্য মানহানি। বিমানে বোমা থাকার এমন ভুয়া তথ্য দেশের ইমেজকে আঘাত যা দেয়ার দিয়ে ফেলেছে। এই মান বা ইমেজ উদ্ধার যেনতেন বিষয় নয়। এ ঘটনাকে শুধু আবেগতাড়িত, পারিবারিক বা উপায় না দেখে ‘খুচরা দুষ্টামি’ বলা যায় না। এটি জঘন্য অপরাধ। তাই কারো কারো মতে এটি ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’। যে কাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছেÑ কী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব? বিদ্যমান আইনে কতোটা কঠোর হওয়া যাবে? 
দেশের জাতীয় এয়ারলাইনসের এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজের যে সর্বনাশ করেছেন, তা উদ্ধার করে দিতেও পারবেন না। তার কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের চেয়ে ছেলের পরকীয়া ঠেকানো বেশি জরুরি মনে হয়েছে। ভাবনা মতো এই মা বিমান আটকাতে পেরেছেন, ছেলের বিদেশ যাত্রা ঠেকাতে পেরেছেন। কিন্তু ছেলের পরকীয়া কি আটকাতে পেরেছেন, বা পারবেন? 
এ ঘটনা নিয়ে ব্রিফিংয়ে র‌্যাব জানিয়েছে, এর আগেও এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। পরে দেখা যায়, ঘটনাগুলো ঠিক নয়।’ এ ধরনের কাণ্ড জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট। এর বিপরীতে বিদ্যমান আইনে দেশের সুনাম নষ্ট করার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কোন শাস্তির বিধান নেই। তবে, কোনো ব্যক্তি যদি মানহানিকর মন্তব্য বা কাজের মাধ্যমে দেশের সুনাম নষ্ট করে, তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা হতে পারে। হলে কী হবে? 
হরেদরে দেশে মানহানির কতো মামলাই তো হয়। শাস্তির জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে টাকার অঙ্ক লেখা হয় ২ হাজার কোটি টাকা কিংবা তারও বেশি। বিবাদী, আসামির উদ্দেশ্যে সমনের তামিল প্রতিবেদন যেমন আসে না, তেমনি অভিযোগ গঠনের তারিখ পড়ে বছরের পর বছর। মামলার প্রথম তারিখে শুনানি ও হাজিরার পর বাদী, সাক্ষীর খোঁজ মেলে না। মামলা করে বাদী ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন এমন নজিরও নেই। সব মিলিয়ে মানহানির মামলার ‘মান’ কি থাকছে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।  
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078