‘চাঁদাবাজের তালিকা’ নিয়ে রাজশাহীজুড়ে তোলপাড়, আছেন বিএনপি–জামায়াতের ৫০ জন

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৬:২৭ , অনলাইন ভার্সন
রাজশাহী মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ নাম সংবলিত একটি তালিকা রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েক দিন থেকে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এতে বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডার, সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম পরিচয় আছে।

একইভাবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ২৫ জন ও জামায়াতের ৬ জনের নাম আছে। বাকিগুলোর নাম ঠিকানা দেওয়া আছে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের সুবিধাবাদী বলা হয়েছে।

কারা এই তালিকা করেছেন, তা স্পষ্টভাবে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে বিএনপির এক নেতা দাবি করছেন, তালিকাটি পুলিশের। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি সরাসরি নিশ্চিত করা হয়নি।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তালিকাটি হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। হাতে এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদেরও। এটি নিয়ে ভেতরে-ভেতরে আলোচনা চললেও নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা হওয়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই মামলায় আসামি হিসেবে ৩৬ জনের নাম রয়েছে, যার মধ্যে ১৮ জনেরই নাম দেখা গেছে ওই তালিকায়। এই মামলা হওয়ার পর থেকে চাঁদাবাজিতে জড়িত অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন।

তালিকাটিতে দেখা গেছে, সেখানে থাকা ব্যক্তিদের থানাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও রাজনৈতিক পরিচিতি উল্লেখ রয়েছে। কিছু ব্যক্তির মোবাইল নম্বরও আছে। এ ছাড়া কোন খাত থেকে চাঁদা তোলেন এবং বর্তমানে সক্রিয় কি না সেই তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। তালিকায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ১২টি থানার মধ্যে ১০ থানা এলাকার তথ্য রয়েছে।

এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানা এলাকার ২২ জন, রাজপাড়া এলাকার ১৬, চন্দ্রিমার ১৪, মতিহারের ৭, শাহমখদুমের ১৬, এয়ারপোর্ট এলাকার ১৪, পবার ৮, কর্ণহার এলাকার ১০, দামকুড়ার ৮ জন এবং কাশিয়াডাঙ্গার আটজনের নাম আছে। তবে তালিকার কোনো স্থানে কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেই।

এই তালিকার ১ নম্বরে নাম রয়েছে পটু বাবু। তিনি ৭ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২ নম্বরে নাম আছে ককটেল মুরাদ। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন ২১ জুলাই। পটু বাবুর ব্যাপারে লেখা রয়েছে, ‘তিনি গাঁজা ফেন্সি বিক্রেতা ও ছিনতাই চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। জিরো পয়েন্ট বড় মসজিদের দক্ষিণ পাশে মসজিদ মিশন স্কুলের আশপাশে বিভিন্ন দোকানে পণ্য সরবরাহকারী কাভার্ডভ্যান গাড়ি থেকে তিনি চাঁদাবাজি করেন। তিনি ভুয়া সাংবাদিকের কার্ড করে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। বর্তমানে সক্রিয়।’

গ্রেপ্তার ককটেল মুরাদের ব্যাপারে লেখা হয়, ‘তিনি গাঁজা বিক্রেতা ও ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। জিরোপয়েন্ট বড় মসজিদ এলাকায় চাঁদাবাজি করেন। তাঁর বিভিন্ন অপকর্মে ও অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠিত বলে জানা যায়।’

এ ছাড়া এ মামলার আসামি এমদাদুল হক লিমন, আমিনুল ইসলাম রিগেন, এস এম সুলতান, আরিফুল শেখ বনি, মমিনুল ইসলাম মিলু, জীম, ডালিম, টিপু, লিটন, তুহিন, নাসির, মিজান, জাফর ইমান দীপ্ত, শামছুল হোসেন মিলু, সানোয়ার হোসেন এবং শাওনের নাম কথিত ওই তালিকায় দেখা গেছে। এই ১৮ জন বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।

তালিকায় নাম এবং মামলা হওয়ায় ভীষণ চটেছেন তারা।

চাঁদাবাজির মামলাটি হওয়ার পর এর প্রতিবাদে গত ২৬ জুলাই (শনিবার) রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে এ তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে চাঁদাবাজির মামলার আসামি নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা বিএনপির সভাপতি শামছুল হোসেন মিলু দাবি করেন, এই তালিকা পুলিশের।

তিনি বলেন, ‘১২৩ জনের যে তালিকাটার কথা আসছে, সেটা আমি যা দেখলাম সেটাতে ওসি সাহেবের স্বাক্ষর আছে। আমার কাছে প্রমাণ আছে। বোয়ালিয়ার ওসির স্বাক্ষর আছে। আমার কাছে এইটা আছে, কপি আছে। আমার কাছে আছে। ওসি সাহেব ষড়যন্ত্র করে করেছে।’ ‘প্রশাসনের প্রেসক্রিপশনে’ মামলাটি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

তালিকার ৮ নম্বরে নাম আছে মামলার ২ নম্বর আসামি রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমনের। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটা (তালিকা) কারা করেছে আমরা বলতে পারব না। যেভাবে তালিকা করা হয়েছে, মানে যারা করেছে (চাঁদাবাজি) তাদের নামের তালিকা এসেছে, যারা করেনি তাদেরও নাম ওখানে চলে এসেছে।’

তালিকায় নামের প্রতিবাদ করেছেন জানিয়ে এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘এইটা আমি নিজেই সিটিএসবির ডিসির (নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপকমিশনার) কাছে গিয়ে বলে এসেছি, এ রকম কোনো ঘটনা যদি ঘটে থাকে (তালিকা যদি করা হয়) পুনরায় তদন্ত করে আপনারা এটার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকার কথা না।’

এই তালিকা কার, এমন প্রশ্নে আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যে তালিকার কথা বলছেন, সেটা আমি জানি না। তবে বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের তালিকা করা হয়। এটা শুধু পুলিশ করে না, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আছে। তারা এই তালিকা করে পুলিশকে দেয়। পুলিশ ভেরিফাই করে। কারণ, অ্যাকশন নেওয়ার দায়িত্ব তো পুলিশের। বিভিন্ন হাত ঘুরেই তালিকাগুলো করা হয়। পুলিশ ভেরিফাই করে এটা সঠিক আছে কি না। এইটা সেই রকম তালিকা কি না সেটা আমার জানা নাই।’

তিনি বলেন, ‘যারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী—তাদের তো অ্যারেস্ট করতে হবে। মানুষকে তো স্বস্তিতে রাখতে হবে। মানুষ বিগত দিনগুলোতে সাফার করেছে, যার জন্য মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এখন আমরা যদি এই ক্ষোভের জায়গাগুলো না কমাতে পারি, যদি এখনো স্বস্তিতে না রাখতে পারি, তাহলে তো ভবিষ্যতে আবার মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে। একটা রাষ্ট্রে মানুষ স্বস্তিতে থাকার জন্য কতবার রাস্তায় নামতে হবে? আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে যাতে আর রাস্তায় নামতে না হয়। চাঁদাবাজেরা সে যেই দলেরই হোক, দলীয় পরিচয় যা-ই হোক, তার পরিচয় মানুষের কাছে চাঁদাবাজ। যারা চিহ্নিত চাঁদাবাজ তারা ছাড় পাবে না।’

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078