মুজিব-জিয়া হত্যার নেপথ্যে এরশাদ! ✪ ইউনূস-বিরোধিতায় জিতলো না হাসিনা

আ.লীগ এখন প্রবাসলীগ

প্রকাশ : ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৫৮ , অনলাইন ভার্সন
মুজিব-জিয়া হত্যার নেপথ্যে এরশাদ! ✪ ইউনূস-বিরোধিতায় জিতলো না হাসিনা
আ.লীগ এখন প্রবাসলীগ
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিব। এই রাজনৈতিক হত্যাকান্ড পরে ব্যাপকতর হয়। ৩ নভেম্বর জেলখানায় ৪ নেতা খুন। ৭ নভেম্বর বিপ্লব দিবসে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ গং। ১৯৮১-এর ৩০ মে চট্টগ্রামে নিহত হন প্রেসিডেন্ট জিয়া। ২০২৪-এর ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের ভূমিধ্বস পতন ও পলায়ন। ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে চলছে রাজনৈতিক পর্যালোচনা। জে. এরশাদ প্রতিষ্ঠিত ‘জাতীয় পার্টি’ ফের দ্বি-খন্ডিত হয়েছে। ফলে, টিভি টকশো বা সভায় সভায় মুক্ত আলোচনা। সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধানের ভাষ্য। সেক্টর কমান্ডর জে. সফিউল্লাহ ১৯৯১-এ দেন দূর্লভ তথ্য। প্রথম সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন এই প্রতিবেদককে। বলেছিলেন, ‘মুজিব-জিয়া হত্যায় এরশাদের হাত ছিলো’। ওনার চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ জাতিকে নাড়া দেয়।
আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে। তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে সেটি ছিলো ২য় নির্বাচন। সাবেক প্রধান বিচারপতি মু. হাবিবুর রহমান ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। ২য় ক্ষমতাধর উপদেষ্টা ছিলেন ড. মুহম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনার ক্ষমতায়নে ঐ দ্বৈরথ ছিলো ছায়াসঙ্গী।
প্রথমাবস্থায় প্রফেসর ইউনূসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৭-এর ২৬ মার্চ গ্রামীণফোনের উদ্বোধন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় কার্যালয়ে ছিলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেখানেও ‘টেলিনর’-সহ গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চসিত প্রশংসা করেন। ২০০৬-এ নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর চিত্র পাল্টে যায়। ২০০৯-এর ৬ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন হয়ে মেজাজ হারান শেখ হাসিনা। প্রফেসর ইউনূসকে ‘সুদখোর-ঘুষখোর’ বলে গালাগাল দিতে থাকেন। অতঃপর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারণ। গলায় কর ফাঁকি ও দুনীতির মামলা পরান। কিন্তু ফলাফল উল্টো হয়ে নিজের কাঁধেই চড়ে বসে। ২০২৪-এর ৫ আগস্ট পালিয়ে যান ভারতের দিল্লিতে। অন্যদিকে ৮ আগস্ট প্যারিস থেকে এসে সরকার প্রধান। নিয়তির অদ্ভূত কারিশমায় ড. ইউনূস ক্ষমতার চেয়ারে। সচেতন মহল বলছেন, হাসিনা লম্বা দৌড়ে হেরে গেলেন। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হাসিনাবাদীদের মামলা ছিলো ১৭৪টি। অন্যদিকে হাসিনার বিরুদ্ধে খুনের মামলাই প্রায় ৩০০টি! ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড অ্যালার্ট’ দিয়ে ধরে আনার প্রক্রিয়া চলমান। 
আওয়ামী লীগ এখন প্রবাসলীগ
হাসিনার আঁচলে বন্দি নেতৃত্ব
১৯৪৯-এর ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা। এর আদি সংগঠন ‘মুসলিম লীগ’ যা ১৯০৬-এ প্রতিষ্ঠিত। ১৯৪৯-এর কমিটির প্রথম সভাপতি মাওলানা ভাসানী। সম্পাদক ছিলেন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন খন্দকার মোশতাক, শেখ মুজিব। কমিটি গঠনকালে শেখ মুজিব ছিলেন কারাগারে। পরে কর্মদক্ষতাগুণে তিনি সাধারণ সম্পাদক হন। ৬ দফা দাবি আদায়কালে ষাটের দশকে হন সভাপতি। 
১৯৭০-এর নির্বাচনকালে পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় দলটি। যদিও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৭ আসন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে কোন প্রাপ্তি ছিলো না। ভূট্টোর পিপিপি ৮৮ আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়। 
ভূট্টোর প্রস্তাব ছিলো দ্বি-কক্ষ সরকারের। পূর্ব পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ মুজিবর রহমান, পশ্চিম পাকিস্তানে পিপিপি’র জুলফিকার আলী ভূট্টো। না, আওয়ামী লীগ তা মানেনি। ‘এলএফও’ বা ‘লিগ্যাল ফ্রেম’/আধা সামরিক ব্যবস্থাও মানেনি। ফলে ২৬ মার্চ পাক-বাংলা যুদ্ধ। ‘এ সময়ে পাক সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে। ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল ঘোষিত হয় ‘প্রবাসী সরকার’। তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে ভারতে থেকে যুদ্ধেও সফল। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২-এর ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। 
‘জাতীয় সরকার গঠনের দাবি’ প্রত্যাখ্যাত হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নতুন কবর ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি। দলপ্রধান শেখ মুজিব ‘বাকশাল’ গঠন করেন। জাতীয় সংসদে ৪র্থ সংশোধনী পাশ করান। ১৫ মিনিটের সময়কালে প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রেসিডেন্ট হন। ঐ বছরই ১৫ আগস্ট তিনি সপরিবারে নিহত হন। 
শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন খন্দকার মোশতাক। নতুন প্রেসিডেন্ট হয়ে বাতিল করেন ‘বাকশাল পদ্ধতি’। ২৭ অক্টোবর ঘরোয়া রাজনীতি করার ঘোষণা দেন। সেসময়ে বাকশাল নয়, আওয়ামী লীগের মৌখিক অনুমতি দেন। 
১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়া দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ঘোষণা দেন। তাজউদ্দীনপত্নী জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী নেতৃত্বে আসেন। জাতীয়তাবাদী দল ‘বিএনপি’ প্রতিষ্ঠা পায় পয়লা সেপ্টেম্বর ১৯৭৮। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন ১৯৮১-তে। তিনি তখন ভারতের দিল্লিতে প্রবাসজীবনে। দেশে দলের ভাঙন ঠেকাতে ওনাকে সভাপতি করা হয়। ১৭ মে বৃষ্টিভেজা বিকেলে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। সেই থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্বে আছেন। একটানা ৪৪ বছর পরেও ক্ষমতার রদবদল ঘটেনি। 
২০২৪-এর ৫ আগস্ট আবার দিল্লিতে আশ্রয় গ্রহণ। অনেকের ধারণা ছিলো- আওয়ামী নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু দলীয় কার্যক্রম যেনো বঙ্গবন্ধুকন্যার আঁচলবন্দি। মামলা নেই- দেশের এমন নেতারা দায়িত্ব পাননি। ‘রিফমর্ড আওয়ামী লীগ’ গড়তে দেয়া হয়নি। বরং বিদেশ থেকে উস্কানিমূলক বক্তব্য, টক-শো চলমান। 
দেশে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ সন্ত্রাসের অভিযোগে নিষিদ্ধ। উস্কানির মুখে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত। ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় অফিস এখন ‘শৌচাগার’। ফ্যাসিস্ট বা খুনিদের বিচার চায় ছাত্রশক্তি। কতদিনে তা আলোর মুখ দেখবে বলা মুশকিল। দেশে আওয়ামী নেতা, সমর্থক, বুদ্ধিজীবী সবাই কোণঠসা। অ-পলাতক মন্ত্রী, নেতা, মিডিয়া সর্মথকেরাও জেলবন্দি। সারাদেশের আওয়ামী লীগ বা অঙ্গদলের অফিসগুলো কার্যক্রমহীন। 
হঠাৎ হঠাৎ বিরোধিতা বা মৃদু প্রতিবাদ আছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা মবের মুখে সবই স্থবির। শেখ হাসিনার পৈত্রিকবাস গোপালগঞ্জেও কড়া প্রহরা। প্রতিবাদী জনশক্তি সামরিক শক্তির কাছে নড়বড়ে। অন্যদিকে বিদেশে বা প্রবাসে সক্রিয় আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের নির্বাচনী বিধিমালা মতে বিদেশে রাজনৈতিক শাখা নিষিদ্ধ। কিন্তু কে শোনে কার নীতিমালা। 
বিবিসি জানিয়েছে, কালকাতায় আওয়ামী লীগ অফিস খুলেছে। লন্ডন, নিউইয়র্কে নিয়মিত কার্যক্রম ‘ইউনূস বিরোধিতা’। যদিও গঠনমূলক সমর্থকেরা বলেছেন ভিন্নকথা। তাদের মতে, ড. ইউনূসকে অযথাই শক্র বানানো হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে দলকেই কোণঠাসা হতে হয়েছে। দেশ থেকে নেতৃবর্গ সমূলে উৎপাটিত হয়েছে। 
১৫ আগস্ট শোক বা ট্রাজেডি দিবস। কিন্তু প্রদীপ প্রজ্জ্বলনেরও ব্যবস্থা নেই ৩২ নম্বরে। যেভাবে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছেন, সেভাবেই ৫ ফেব্রুয়ারি মাটিতে মিশে গেছে ‘ইতিহাসের বাড়ি’। ছাত্রশক্তি চেয়েছে আওয়ামী লীগ ‘মুসলিম লীগ’ হোক। বর্তমানে তেমন পরিস্থিতিই বিরাজমান। অন্যদিকে শেখ হাসিনার হাত ধরে দলটি প্রবাসে সক্রিয়। ফলে সচেতন মহল নতুন শ্লোগান তুলেছেন, বলছেন- ‘আ.লীগ এখন প্রবাসলীগ’। নতুন কিছু আসতে পারে প্রবাস থেকেই।
 
মুজিব-জিয়া হত্যায় এরশাদের হাত ছিলো
জে. সফিউল্লাহর মূল্যায়ন ফের আলোচনায়
এরশাদ-ভ্রাতা জিএম কাদের ফের চ্যালেজের মুখে। এতদিন ছাত্রশক্তির চাপের মুখে ছিলেন। ‘এনসিপি’র সঙ্গে জাতীয় পার্টির মুখোমুখি সংঘর্ষও হয়। ছাত্রশক্তির অভিযোগ- জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের দালাল। অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিতে ভূমিকা রেখেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেছে, জাপাকেও যেতে হবে। 
বহু কষ্টে পরিস্থিতি সামাল দেন জিএম কাদের। হাসিনাপন্থী কেন্দ্রীয় নেতাদের বহিস্কারও করেন। গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে তিন মেগানেতা ব্যারিস্টার আনিস মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব চুন্নুকে বহিস্কার করেন। জিএম কাদের মহাসচিব করেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে। 
অন্যদিকে বহিস্কৃত নেতারা আদালতে গিয়েছেন। জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান পদ স্থগিত করিয়েছেন। নিজেদের চেয়ারম্যান-মহাসচিব পদে বসিয়েছেন। আনিস-রুহুল প্যানেলের কাউন্সিলে চমক ছিলেন জেপি চেয়ারম্যান। তিনি এরশাদ ও হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী। দৈনিক ইত্তেফাক-খ্যাত আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এরশাদের সময়কালে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলেন। পরে বনিবনা না হওয়ায় ‘জেপি’ গড়েন। শেখ হাসিনার সর্বশেষ পাতানো নির্বাচনে পরাজিতও হন। 
জাপা প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদ বিষয়ে আলোকপাত করেন। বলেন, ভীষণ উদ্যমী ছিলেন, কিন্তু অপরাধও করেছেন। দেশের প্রথম সেনাপ্রধান জে. সফিউল্লাহ মারাত্মক অভিযোগ আনেন। সেগুলো আমলে নিলে ওনার জেল-ফাঁসি হতে পারতো। কিন্তু ‘জাতীয় পার্টি’ গড়ার কারণে উনি প্রাণে বেঁচেছেন। ‘রাজনীতি’ ওনাকে নতুন জীবন ও খ্যাতি দিয়েছে। 
উল্লেখ্য, জে. সফিউল্লাহর মূল্যায়নটি বের হয় ১৯৯১ সালে। উনি তখন কানাডায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত। ‘বিএনপি’ ক্ষমতায় এলে ওনাকে ‘কলব্যাক’ করা হয়। ওনার সেনানিবাসস্থ ১নং বাসাটি তখন মেজর (অব.) আখতারের কাছে ভাড়া। ক্যান্টনমেন্ট ‘গেস্ট হাউজে’ সাময়িকভাবে উঠেছিলেন। সেখানে বসেই প্রথম সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন। এই প্রতিবেদক সেটি দু’দিনে ধারণ করেন। অধুনালুপ্ত ‘সাপ্তাহিক আকষর্ণ’ পুরোটা প্রকাশ করে। সাপ্তাহিক ঠিকানা ও সাদাকালোও আংশিক ছাপে। 
জে. সফিউল্লাহ বলেন, জে এরশাদ অ-মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। পাক আর্মি থেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে ইচ্ছুক বাঙালিদের ঠেঙাতেন। পলায়নের চেষ্টাকারীদের ধরে বিচার করতেন। এই কাজে পাক আর্মি একটি কমিশন বানায়। চেয়ারম্যান ছিলেন লে. কর্নেল এইচএম এরশাদ। সদস্য সচিব ছিলেন ‘আজকের কাগজ’-খ্যাত কাজী শাহেদ আহমদ। শাহেদ পাক বিমান বাহিনীরতে কর্মরত ছিলেন। জে. সফিউল্লাহ বলেন, এরশাদ সাহেব বাংলাদেশে ফেরেন ১৯৭৩-এ। সে বছর  ‘রি-প্যাট্রিয়ট’ অসংখ্যজন দেশে ফেরেন। বঙ্গবন্ধুর আনুকূল্যে ভালো ভালো পোস্টে ওনারা বসেন। ব্রিগেডিয়ার রউফ পেলেন ডিজিডিএফআই পদ। ব্রিগেডিয়র খলিল পেলেন বিডিআর প্রধানের পদ। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডর জে. সিআর  দত্ত স্থানান্তরিত হলেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মতো কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এসব কারণে ভারত এবং মুক্তিযোদ্ধারা বিরক্ত হন। 
কিন্তু এরশাদ সাহেব, কোথায় পোস্টিং পেলেন? জে. সফিউল্লাহ বলেন, কোথায়ও না। কারণ ৯৫% মুক্তিযোদ্ধার আর্মি ওনার বিরোধিতা করে। উনি পশুপালন প্রতিমন্ত্রীকে ধরে বঙ্গবন্ধুর কাছে যান। বঙ্গবন্ধু উপ-সেনাপ্রধান জিয়াকে ফোন দেন। চৌকষ জিয়া এরশাদ সাহেবকে ভারতে পাঠায়। ‘এনডিসি’ কোর্স করার অছিলায় চাকরিতে রেখে দেয়। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানে থাকায় ভারত প্রথমে নিতে চায়নি। জীবন বৃত্তান্তে জন্মস্থান ছিলো রংপুর। কিন্তু ‘দেরাদুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে’ ম্যানেজ করেন এরশাদ। প্রমাণ করেন যে, ওনার প্রকৃত জন্মস্থান ভারত। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের দিনহাটায়। ১৯৪৭/৪৮-এ পরিবারের সাথে রংপুর আগমন। কারমাইকেল কলেজ থেকে স্নাতক, অতঃপর আর্মিতে যোগদান। অধ্যাপক গোলাম আজম ওনার সরাসরি শিক্ষক। 
জে. সফিউল্লাহ বলেন, ভারত ওনাকে অনেক দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। কোন ব্রিগেড কমান্ড করেননি। অথচ ভারতে বসেই ব্রিগেডিয়ার হয়েছেন। সবচেয়ে অবাক হতে হয়েছে ১৯৭৫-এ। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত। খন্দকার মোশতাক প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলেন। জে. (অব.) ওসমানীকে ২২ আগস্ট প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা করলেন। আমার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হলো। জে. জিয়াকে করা হলো সেনাপ্রধান। ব্রিগেডিয়ায় থেকে মেজর জেনারেল হলো তিনজন। চট্টগ্রামের জিওসি চিশতী, বিডিআর-এর প্রধান ব্রিগেডিয়ার খালিল। আর ভারতে প্রশিক্ষণরত ব্রিগেডিয়ার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। একইসঙ্গে হলেন সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী সরকারে আকাশ উঁচু করা প্রমোশন। ভারতের বিশেষ সুপারিশে এই প্রমোশন রহস্যজনক। সচেতন মহলে বিষয়টি বিশেষ কৌতূহলের সৃষ্টি করে। 
জে. সফিউল্লাহ বলেন, জিয়ার ভাগ্য ভালো ছিলো না। ২৪ আগস্ট একটি নতুন ‘পোস্ট’ বানানো হয়। ‘সিডিএস’ বা ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’। তিন বাহিনীর ওপর সেই পদের অবস্থান। তাতে বসানো হয় নতুন জেনারেল খলিলুর রহমানকে। 
ডেপুটি আর্মি চিফ এরশাদকে বিশ্বাস করেছিলেন জিয়া। ১৯৭৮-এ রাজনীতিতে যাওয়ার আগে সেনাপ্রধান পদ ছাড়লো। ক্ষমতা পেয়ে জে. এরশাদ আসল খেলা খেললেন। ১৯৮১-এর ৩০ মে চট্টগ্রামে প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হন। তিনদিন আগে এরশাদ গোপনে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। সবকিছুর ছক কষে এসেছিলেন। দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রে মুজিব-জিয়া অকালে নিহত হন। এক এরশাদই দুটি ঘটনারই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ খেলোয়াড়। সঠিক তদন্ত হলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে। 
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘আকর্ষণ ম্যাগাজিন’ সাক্ষাৎকারটি ছাপে। তখন দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। সর্বাধিক সার্কুলেশনের দৈনিক তখন ইত্তেফাক। শেষ পৃষ্ঠায় ‘আকর্ষণ’ পত্রিকা বিজ্ঞাপন ছাপতে দেয়। প্রচ্ছদে ছিলো কালজয়ী শিরোনামটি। ‘মুজিব-জিয়া হত্যায় এরশাদের হাত ছিলো : জে. সফিউল্লাহ’। সেই বিজ্ঞাপনটি আটকে দেন স্বয়ং সম্পাদক আ. হো. মঞ্জু। এই প্রতিবেদককে বলেন, এটা কী করে সম্ভব? এরশাদের হাত কি এতোটাই লম্বা যে, দুই নেতাকেই মারবে? 
সেই সব প্রসঙ্গই টেনেছেন সাম্প্রতিক আলোকপাতে। বলেছেন, রাজনীতি দিয়ে রাজনীতির কালোকে ঢাকা যায়। জে. এরশাদ সে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের বিচার হয়েছে। কিন্তু খুনের প্রকৃত রহস্য আজতক উন্মোচিত হয়নি। 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078