বাবা-মা-বোন হারা হোসাইনের দায়িত্ব নিলেন ফুফু

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১৩ , অনলাইন ভার্সন
‘আমারও সাত বছরের একটা ছেলে আছে। সেই ছেলেকে আমি যেভাবে লালন-পালন করি, হোসাইনকেও সেভাবে লালন-পালন করব। আমার সন্তানের মতো করে হোসাইনকে বুকে আগলে রাখব, বড় করে তুলব।’ এমনটি বলছিলেন সাত মাস বয়সী শিশু হোসাইনের ফুফু নাসরিন আক্তার।

গত ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরে জলাবদ্ধতায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান হোসাইনের বাবা মিজান হাওলাদার, মা মুক্তা বেগম এবং বোন লিমা। এ ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় শিশু হোসাইন। ঘটনার পর নানি-দাদির কাছে ছিল হোসাইন। তাকে ফুফু নাসরিন আক্তার লালন-পালন করার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরবর্তী সময়ে হোসাইনের নানা ও দাদার পরিবারের সম্মতিক্রমে ফুফু নাসরিন আক্তারকেই তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব দেন।

নাসরিন আক্তার বলেন, ‘হোসাইন বারবার আতঙ্কে কেঁদে উঠছে। ঘুমিয়ে থাকা সময়টাতেই শুধু শান্ত থাকছে সে। ঘুম থেকে উঠে আবার চিৎকার করে কাঁদছে। চোখ দুটি খুঁজছে মায়ের মুখ। খুঁজছে আপনজনকে।’

ঘটনার দিন মা মুক্তা বিদ্যুতায়িত হয়েই কোলে থাকা হোসাইনকে ছুড়ে মারেন। এ সময় অটোরিকশা চালক যুবক মোহাম্মদ অনিক হোসাইনকে উদ্ধার করেন। আশপাশের বাসিন্দারা হোসাইনকে ঘরে নিয়ে বুকে তেল মালিশ করেন। হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান দুই হিজড়া। পরবর্তী সময়ে নানি কুলসুম বেগমের কাছে হোসাইনকে হস্তান্তর করা হয়।

শুক্রবার রাতে মিরপুর থেকে হোসাইনের বাবা-মা ও বোনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে। সেখানে শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনজনকে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়। হোসাইনকেও নিয়ে যাওয়া হয় ঝালকাঠি দাদার বাড়িতে।

হোসাইনের নানা মহফিজ জানান, হোসাইন এখন সুস্থ আছে। হোসাইনের ফুফু তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এতে আমরা দ্বিমত পোষণ করিনি। কেননা আমাদের চেয়ে হোসাইনের দাদার পরিবারের অধিকার বেশি। আমাদের সহযোগিতা সব সময় থাকবে।

হোসাইনকে উদ্ধার করেই তার বড় বোন লিমাকে উদ্ধার করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান যুবক অনিক। এ ঘটনায় শোকের মাতম চলছে অনিকের পরিবারেও।

নিহত অনিকের মামা মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে অনিকের মরদেহ শুক্রবার রাত প্রায় ১২টার দিকে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় দাফন করা হয়। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অনিক ছিল ষষ্ঠ। তার বাবার নাম বাবুল মিয়া। তিনি গ্রামের বাড়িতে কৃষিকাজ করেন। অনিক ঘটনাস্থলের ডানে পাশে মামাতো ভাইদের সঙ্গে থাকত। সেখানে থেকে অটোরিকশা চালাত। মাস ছয়েক আগে হাজীপাড়ায় বিয়ে করে। পারিবারিক কারণে ঘটনার ৫ দিন আগে অনিকের স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দেয়।’

এদিকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার পর অভিযোগ উঠেছে, ঘটনাস্থলের পাশে সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার দেয়াল কেটে বস্তিতে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে সেই লাইন ছিঁড়ে জমে থাকা পানিতে পড়ে। এতেই বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান চারজন।

চোরাই লাইনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। রূপনগর জোনের এসি সৈকত আলীকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। রোববার কমিটি রিপোর্ট প্রদান করবে। সেই লক্ষ্যে শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও কিছু অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থল-সংলগ্ন অবৈধ বিদ্যুতের তার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে। সাড়ে চারটায় বিদ্যুতের লাইন উচ্ছেদ শেষ করে। এ সময় মিরপুর মডেল থানার একাধিক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কাওসার আমীর আলী বলেন, ‘বস্তির অনেককে আমরা গ্রুপ করে লাইন দিয়েছি। ৮-১০ জনকে মিলে একটি মিটার দেওয়া হয়েছে। সবাইকে আলাদা করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমাদের মনিটরিং অফিসারও রয়েছেন। তারা সব সময় লাইনগুলো মনিটরিং করেন। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’

ঠিকানা/এনআই
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078