‘মাইনাস টু’র নতুন শনি

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:৩৭ , অনলাইন ভার্সন
আতঙ্ক বা গুজব থাকলেও নির্দিষ্ট তথ্য নেই রাজনৈতিক সিডরের। তবে আলামত প্রচুর। গুজব-গুঞ্জনও বেশুমার। তার ওপর প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উপাদান যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ওয়ান ইলেভেনে বহুল আলোচিত-প্রচারিত ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা নতুন মোড়ক পেতে যাচ্ছে বলে চাউর হওয়া গুঞ্জনে টোকাও পড়ছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেÑবলছেন তার চিকিৎসকেরা। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলছেন, ‘আমি তো সময়ের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছি না।’ একজনের তথ্যদাতা তার মেডিকেল বোর্ড। আরেকজনের তথ্য দিচ্ছেন তিনি (প্রথম পাতার পর)
নিজেই। সাম্প্রতিক এক কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আমি তো আর কুলাতে পারছি না’ মন্তব্যের সঙ্গে আরও বলেছেন, ‘প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা কোনো না কোনো অনুষ্ঠান থাকে। বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ সফরে ব্যস্ততা তো ছিলই। দেশে এসেও একটার পর একটা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আমি তো একা কুলিয়ে উঠতে পারছি না, আপনাদের আরও তৎপর হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের মাঝে অনেক তথ্য। পূর্বাপরে অনেক ঘটনা। তিনি সচরাচর এ ধরনের নরম কথা বলেন না। হতাশ হন না। বাহ্যত সবকিছুকে ডেম কেয়ার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন, ভিসা রেস্ট্রিকশন থেকে শুরু করে করোনা, ডেঙ্গু, বিশ্ব পরিস্থিতি, খাদ্যাভাব, মূল্যস্ফীতি সবকিছুতেই তার এক কথা, ‘ভয়ের কিছু নেই। মাথা ঘামানোর বিষয় নয়।’ পশ্চিমা বিশ্বের সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপকেও ‘নাথিং’ ভাবতে অভ্যস্ত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে বলছেন, তিনি আর কুলাচ্ছেন না। আবার তলে তলে আঁতাতের প্রকাশ্য বার্তা দেওয়ানো হয়েছে ‘খেলা হবে’ খ্যাত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দিয়ে। আর বিএনপি বার্তা দিচ্ছে বেগম জিয়ার চিকিৎসকদের দিয়ে। এত দিন তার অবস্থার জানান দেওয়া চিকিৎসকেরা এবার ঘটা করে ব্রিফিংয়ে জানালেন, মৃত্যুঝুঁকিতে খালেদা জিয়া, বাংলাদেশে তার আর কোনো চিকিৎসা নেই। লিভার সিরোসিসের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে না নিলে কখন কী ঘটে, সেই শঙ্কা জানিয়েছেন তারা। চিকিৎসক দলের প্রধানের ভাষায় : ‘আমাদের হাতের সমস্ত অপশন শেষ হয়ে গেছে। যেকোনো সময় তিনি মারা যেতে পারেন।’ আর দলের মহাসচিবের মন্তব্য, খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারের। সরকার এখনো বুঝতে পারছে না সামনে কী অপেক্ষা করছে?
এ ধরনের শঙ্কা, হুমকি ও নানা গুজব-গুঞ্জনে এগিয়ে যাচ্ছে সময়। সময়ের এ জিজ্ঞাসার মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধিদের দুই দলের কাছেই পাল্টা জিজ্ঞাসাÑসমঝোতা কি সম্ভব নয়? ক্ষমতাসীনদের কড়া-চড়া জবাব, তারা সংবিধানের বাইরে যাবেন না। বিএনপির বার্তা, তারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। মার্কিন প্রতিনিধি দল অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও জানতে চেয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে সিইসি জানান, মার্কিনিদের সব প্রশ্নের জবাব তিনি দিয়েছেন। তার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রতিনিধি দল বসে সুশীল সমাজের সঙ্গে। সুশীল সমাজ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। এবারও একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করলে বড় রকমের অঘটন ঘটবে। বিভিন্ন পক্ষের বিভক্ত মতামতের পর এখন মার্কিন পর্যবেক্ষক দল কী করবে, তা কেউ জানে না। যা করার মার্কিনরাই করবেন। তা কেমন হবে বা হতে পারে, সেই আভাসও নেই। তবে তাদের অ্যাকশন যা হওয়ার হয়ে চলছে। সেখানে বাংলাদেশের সাবেক সচিব বিডি মিত্রের সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর আয়ের বৈধ উৎস জানাতে না পারায় তার বাড়ি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতিবিরোধী টিম। সাবেক এই সচিবের তিনটি বাড়ি এবং একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। ১৯৮২ ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা কানাডার টরেন্টোতে তিন মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারে বাড়ি কিনেছেন দুটি। স্বেচ্ছায় ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর অবসরের পর থেকে আমেরিকাই তার ঠিকানা। কখনো নিউইয়র্কে, কখনো কানাডায় থাকেন। পেনশনের টাকা উত্তোলনের আবেদনে নিজেকে অর্থকষ্টে থাকা গরিব অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। অথচ তার স্ত্রী রাখি মিত্রের নামে নিউইয়র্কে তিনটি বাড়ি আর কানাডায় দুটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। দুই মিলিয়ন ডলার নগদ পরিশোধ করে নিউইয়র্কের জ্যামাইকা এবং ফরেস্ট হিলে তিনটি বাড়ি কিনেছিলেন। সেসব বাড়ি জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। সামনে আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি সাবেক আমলা ও ব্যবসায়ীর সম্পদ জব্দের প্রক্রিয়া চলছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলেছেন, এসব নিয়ে চিন্তা করে ঘুম নষ্ট না করতে। কিন্তু বাস্তব বড় ভিন্ন। বিদেশে বাড়ি, গাড়ি এমনকি নারী পর্যন্ত হারানোর শঙ্কায় নাওয়া-খাওয়া হচ্ছে না নেতা, মন্ত্রী, আমলাসহ অনেকের। ভাবভঙ্গিতে তেজোদ্দীপ্ত ভান ধরা ‘তোমার ভয় নেই মা’ বলে কোরাস গাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই লেজ গুটিয়ে গর্তগামী। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারকারী ১৫ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে দেশটি। তাদের মধ্যে এমন কয়েকজন রয়েছেন, যারা কদিন আগেও প্রধানমন্ত্রীকে হাজির-নাজির রেখে প্রকাশ্যে বলেছেন, এ সরকারকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে। সেই লক্ষ্যে যা যা করা দরকার সবই করবেন তারা। তারাও কদিন ধরে গর্তগামী। নইলে নিখোঁজের মতো থাকছেন। এ অবস্থায় অর্থনীতির সুখবরও বেখবরে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের কয়েকজনের বক্তব্য বেশ আগ্রাসী। বলছেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’ চিন্তার কিছু না থাকার ছাপ আছে প্রধানমন্ত্রীর দেশ-বিদেশে সফরসহ সভা-সমাবেশে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনার কথা বলে প্রশংসিত হয়ে নিজের সভায় হাততালি দেওয়াতে ১৬৫ জনের দল নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। ভারতসহ রিজার্ভ নিয়ে চিন্তিতরা গেছেন ৫ থেকে ১০ জন নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকট, রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে চরম খরা থাকলেও চাপ বোধ না করার কথা জানাচ্ছে সরকার। এমন নির্ভারের রহস্য প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের বিদেশি বন্ধুরাও বাস্তবে গাছাড়া। চীন চাইলে এক মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের আরাকানে ফেরত পাঠাতে পারে। কিন্তু পাঠায় না। ভারত চাইলে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা দিয়ে বাংলাদেশকে খরা এবং বন্যার প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু পাওনা পানি দেয় না। রাশিয়া চাইলে বিকল্প পথে তেল, সার পাঠিয়ে আমাদের জ্বালানির দাম কমাতে পারে, কৃষির উৎপাদন বাড়ানোতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু করে না।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078