আমেরিকানদের জীবন নিয়ে কোভিডের নির্মম তামাশা

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ২১:৫৩ , অনলাইন ভার্সন
মুহম্মদ শামসুল হক

আমেরিকানদের জীবন নিয়ে কোভিড মহামারি আবারও নির্মম তামাশা ও ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে। প্রায় তিন মাস সীমিত পর্যায়ে থাকার পর সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিক থেকে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আমেরিকার ডজনাধিক স্টেটে পুনরায় হানা দিয়েছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) বর্ণনা অনুসারে, নতুন সংক্রমণ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা, হাসপাতালে নতুন রোগীর সংখ্যা এবং করোনায় মৃতের সংখ্যাও হু হু করে বেড়ে চলেছে। সিডিসি আরও জানিয়েছে, চলতি বছরের মার্চের পর বর্তমান সপ্তাহে আমেরিকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা আক্রান্ত নতুন রোগীর সংস্থা ২২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শারীরিক সমস্যাগ্রস্ত ও নতুনভাবে করোনাক্রান্ত আমেরিকানদের দুর্ভোগ তুঙ্গে উঠেছে এবং সিংহভাগ আক্রান্ত বর্তমানে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আমেরিকান বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আইসিইউগুলোতে নতুন করে শয্যা সংকটও দেখা দিয়েছে বলেও জানা গেছে।

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, চলতি বছরের ৫ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরে কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিসাস। তখন সাংবাদিকদের সঙ্গে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছিলেন, ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি জারিকৃত পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হলেও বিশ্ববাসী এখনো প্রাণঘাতী করোনার নতুন সংক্রমণ থেকে মুক্ত হননি। এখনো প্রতি তিন মিনিটে বিশ্বের আনাচ-কানাচে একজন মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে প্রয়োজনের তাগিদে আবারও পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ড. টেড্রোস বলেছিলেন, করোনায় গোটা বিশ্বে ২ কোটি ২০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং দেড় শ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। আর আমেরিকার চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের বর্ণনা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা  সাড়ে ১১ লাখ থেকে ১২ লাখ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখের বেশি।

২০২২ সালে ন্যাশনাল হেলথ ইন্টারভিউ সার্ভের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে প্রণীত সর্বশেষ সিডিসির ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিসটিক্স অনুসারে, সিংহভাগ প্রাপ্তবয়স্ক হিস্পানিকসহ কোটি কোটি আমেরিকান অদ্যাবধি দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে ভুগছেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে ৬.৯% প্রাপ্তবয়স্ক বা ১ কোটি ৮০ লাখ আমেরিকান বলেছিলেন, তারা দীর্ঘস্থায়ী কোভিডের করুণ শিকার। ২০২২ সালের দীর্ঘস্থায়ী কোভিড আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের ৮.৩% হিস্পানিক, ৭.১% শ্বেতাঙ্গ, ৫.৪% কৃষ্ণাঙ্গ এবং ২.৬% এশিয়ান ছিল। আমেরিকার আদমশুমারির পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যাপ্ত প্রায় ৪% বা ৯০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে ভুগছেন। এদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ প্রাপ্তবয়স্ক ৩.৭% এবং হিস্পানিক প্রাপ্তবয়স্ক ৩.৪%।

সিডিসির পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে শিশু-কিশোরদের ১.৫% কিংবা ১০ লক্ষাধিক দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে ভুগেছিল এবং অন্যান্য বর্ণ-গোষ্ঠীর শিশু-কিশোরের তুলনায় হিস্পানিক শিশু-কিশোরের সংখ্যা বেশি ছিল। একইভাবে ২০২৩ সালে মোট শিশু-কিশোরের .৬% বা ৩ লাখ ৭০ হাজার শিশু-কিশোর দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে ভুগছে। পরিসংখ্যান অনুসারে নেহাত শিশু-কিশোরের তুলনায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী আমেরিকান বালক-বালিকাদের দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে ভোগার হার বেশি। দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে ভোগা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী বালক-বালিকাদের হার ২%। পক্ষান্তরে ১২ বছর থেকে কম বয়সী ভুক্তভোগী শিশু-কিশোরের সংখ্যা ০.৮%। আবার দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে ভোগা বালকদের তুলনায় বালিকাদের হার বেশি বলে সিডিসি জানিয়েছে।

এদিকে কোভিডের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ফেডারেল সরকার পুনরায় বিনা খরচে কোভিড হোম টেস্ট চালু করেছে। ৬ মাস থেকে ঊর্ধ্ব বয়সী সকল আমেরিকান কোভিড ও ফ্লু শটের জন্য এবং সিনিয়ররা নতুনভাবে অনুমোদিত আরএসভি ভ্যাকসিন পাওয়ার যোগ্য। ইউএস সার্জন জেনারেল ড. বিবেক মার্থি জানান, ৬ মাস থেকে ঊর্ধ্ব বয়সী প্রত্যেক আমেরিকানের কমপক্ষে আপডেটেড ভ্যাকসিনের একটি ডোজ নেওয়া উচিত। সিডিসির ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্যানেলের উপদেষ্টারা চলতি শরতে ৬ মাস বয়সী থেকে ঊর্ধ্ব বয়সী আমেরিকানদের আপডেটেড কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, শীত মৌসুমে করোনা, ফ্লু ইত্যাদি রোগব্যাধি নতুনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে সব ধরনের শটের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ প্রতিহত করতে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078