হরতাল-অবরোধে উত্তাল দেশ

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৬ , অনলাইন ভার্সন
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধে সারা দেশ বর্তমানে ভীষণ উত্তাল। দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের মাঝে চরম উদ্বেগ। সরকারি ও বিরোধীদের মুখোমুখি অবস্থানে জানমালের আরও ক্ষতির শঙ্কা প্রবল। বিরোধীদের কর্মসূচিতে সরকারি দল ও পুলিশের হামলার প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী থমথমে পরিস্থিতি বিরাজমান। তার ওপর পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম আতঙ্ক।
হরতালের পর এক দিন বিরতি দিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীদের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিন ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল রাজধানী ঢাকা। মঙ্গলবার ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলা শহর ও মহাসড়কে মিছিল বের করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের গুলিতে বিএনপির দুই কর্মী ও সিলেট নগরীর লালাবাজারে পুলিশের ধাওয়ায় যুবদল নেতা দিলু আহমদ জিলু নিহত হন। জিলু হত্যার প্রতিবাদে সিলেট বিভাগে ১ নভেম্বর বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে সিলেট যুবদল। দুই কর্মী হত্যার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জ জেলায় আধাবেলা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি। এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিন কুষ্টিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির সাবেক তিন এমপিকে। এর আগে ২৯ অক্টোবর রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন বেশ কয়েকজন। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ৪ কর্মীকে আটক করা হয়। চট্টগ্রামে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনটি গাড়িতে আগুন ও বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। মানিকগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল করতে গেলে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ মিছিল থেকে বিএনপির ৫ নেতাকর্মীকে আটক করে। ঢাকার মাতুয়াইলে পুলিশ-বিএনপি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত ও বিএনপির সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
বিএনপির অবরোধের কারণে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। রাজধানীতে স্বল্পসংখ্যক গণপরিবহন চলাচল করলেও রাস্তাঘাট ছিল অনেকটা ফাঁকা। কোথাও কোনো ধরনের যানজট চোখে পড়েনি। আতঙ্কে লোকজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িও খুব একটা চলাচল করতে দেখা যায়নি। অবরোধের প্রভাব পড়ে সদরঘাট লঞ্চঘাটেও। যাত্রী সংকটের কারণে লঞ্চ চলাচল করতে দেখা যায়নি। সারা দিনই লঞ্চঘাট ছিল ফাঁকা। যথাসময়ে ট্রেন চলাচল করলেও তেমন যাত্রী ছিল না। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সব মহাসড়কে মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়। অবরোধ-বিরোধী অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দলটির নেতাকর্মীরা দিনভর সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। এ ছাড়া সারা দেশে তারা শান্তি সমাবেশ করেছেন।
বিএনপি-জামায়াতের ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে সহিংসতার পর দেশজুড়ে বিরোধীদের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশ সদস্য দুজন, বিরোধী দলের ছয়জন, ক্ষমতাসীন দলের একজন এবং পথচারী দুজন।
কিশোরগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত ২
বিএনপির অবরোধ চলাকালে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়ন আঞ্চলিক সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ছাত্রদলকর্মী শেফায়েত উল্লাহ ও ছয়সূতি ইউনিয়ন কৃষক দল সভাপতি বিল্লাল মিয়া। স্থানীয়রা জানান, সকাল নয়টার দিকে অবরোধের সমর্থনে ছয়সূতি ইউনিয়নে আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নেন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশ বাধা দিলেও সড়কে মিছিল করেন তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন।
সিলেটে পুলিশের ধাওয়ায় যুবদল নেতা নিহত
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার এলাকায় পিকেটিংয়ের সময় পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। নিহত জিল্লুর রহমান (৪২) সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মদনগৌরী গ্রামের এলাইছ মিয়ার ছেলে। ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রেপ্তারের পর কারাগারে মির্জা ফখরুল
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে বিএনপি কর্মীদের ভাঙচুরের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২৯ অক্টোবর রোববার রাতে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ মামলায় মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির ৫৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে রোববার সকালে মির্জা ফখরুলকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
মির্জা আব্বাস ও আলাল গ্রেপ্তার
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের সময় পুলিশ হত্যার ঘটনায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে শাহজাহানপুরের পাশে শহীদবাগ মসজিদ গলি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ‍পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা। পরে তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
কুষ্টিয়ায় বিএনপির সাবেক ৩ এমপি গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়ায় বিএনপির সাবেক তিন এমপিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি মেহেদী আহমেদ রুমী, সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন এবং দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা।
ছয় দিনে ৪ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, দাবি বিএনপির
বিএনপির মহাসমাবেশ, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত ছয় দিনে চার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। রিজভী বলেন, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ছয় দিনে ৪ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা হয়েছে ৭১টি। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ, ২৯ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ অবরোধকে কেন্দ্র করে ২ হাজার ২৮০ জনের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলা হয়েছে ৪৬টির বেশি। ৩ হাজার ৩৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া একজন সাংবাদিকসহ আটজন নিহত হয়েছেন।
সারা দেশে ৭ জায়গায় আগুন
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে সারা দেশে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ৭টি আগুনের ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেছে। ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত (১২ ঘণ্টায়) উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক ৭টি আগুনের সংবাদ পাওয়া গেছে। ঢাকা সিটিতে ১টি, ঢাকা বিভাগে (নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর) ৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১টি, রাজশাহী বিভাগে (বগুড়া) ১টি ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৩টি বাস, ১টি পার্সেল কাভার্ড ভ্যান, ১টি পিকআপ, ২টি বাণিজ্যিক পণ্যের শো-রুম ও ১টি পুলিশ বক্স পুড়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সাত দেশের উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সাতটি দেশ ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। সহিংসতা বন্ধ করে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছে দেশগুলো। ৩০ অক্টোবর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের এক্স (টুইটার) হ্যান্ডল থেকে সংক্ষিপ্ত যৌথ বিবৃতিটি শেয়ার করা হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও নরওয়ের নাম আছে।
নির্বিচারে আটক ও সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জাতিসংঘের
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে সহিংসতা, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও নির্বিচারে আটক থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক ৩০ অক্টোবর সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আন্তোনিও গুতেরেসের এ আহ্বানের কথা জানান। স্টিফেন ডুজারিক বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমাবেশে সহিংসতায় অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এমন খবরে মহাসচিব উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় মহাসচিব মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041