সাহিত্য একাডেমির মাসিক আসর

কবি আসাদ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৩৪ , অনলাইন ভার্সন
আলোচনা, আবৃত্তি ও স্বরচিত পাঠের মধ্য দিয়ে গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ‘সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক’র মাসিক সাহিত্য আসরটি। পুরো আসর পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। শুরুতেই সদ্য প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এবারের আসরে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী। শুরুতে তিনি বলেন, কবি আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, তাঁর স্নেহভাজন হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমি ছাত্র রাজনীতি করতাম। তাঁর স্বাধীনতা, মুক্তি সংগ্রাম বিষয়ক কবিতা আমাকে আকৃষ্ট করতো। কবি শামসুর রাহমান, কবি নির্মলেন্দু গুণের মতো আসাদ চৌধুরীর রাজনৈতিক কবিতাগুলো আমাকে আকৃষ্ট করতো। ঢাকার বইমেলা, আমেরিকা, কানাডাসহ আমার বাসায় তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা হয়েছে এবং তাঁকে আরো গভীরভাবে জানার সুযোগ পেয়েছি। আমার কাছে তিনি একজন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। বাংলা ভাষায় সাহিত্য যতদিন থাকবে, আসাদ চৌধুরী ততদিন আমাদের মাঝে চির জাগরুক থাকবেন। তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার  পেয়েছেন। আশা করি তিনি মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারও পাবেন।
তিনি বলেন, আজ সাহিত্য একাডেমিতে এসে খুব আরাম বোধ করছি। কারণ, এখানে সব লেখক ও সাহিত্যপ্রেমী রয়েছেন। আমার লেখালেখি মূলত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। আমার গ্রন্থসংখ্যা তেইশটি। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আমরা দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করেছি, আমাদের কোন সাপ্লাই লাইন ছিল না। আমার উপর দায়িত্ব ছিল ভারতে গিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করা, এটা খুব রিস্কি ছিল। এই চ্যালেঞ্জটা ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকারে হাঁটার মতো। দুই সপ্তাহ শেষে দেড়শো মাইল পথ অতিক্রম করে প্রথমবার অস্ত্র সংগ্রহ করি। অস্ত্রগুলো হাতে পেয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মহাখুশি হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে যেমন বিজয়ের আনন্দ ছিল, তেমনি বিপন্নতাও ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাই লিখেছি আমার বইয়ে। আমার বইগুলো বাংলা এবং ইংরেজিতে রয়েছে। আপনারা এবং আপনাদের ছেলেমেয়েরা যদি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা জানতে চান, আমার বইগুলো পড়লে জানতে পারবেন। লেখক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ সাম্প্রতিক গাজা প্রসঙ্গে বলেন, মনুষ্যত্ব, মানবতা এই দুটি শব্দ এখন আর ব্যাবহার করা যাবে না! পাশ্চাত্যে থেকেও আমরা আজ স্বাধীন না! ১৯৭১ সালে বর্বরতা দেখেছি, হিটলারের বর্বরতা দেখেছি। পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে, সবচেয়ে বর্বর প্রাণী আমরা! জাতিসংঘের একটি সাংবাদিক কর্মশালায় ২০১১ সালে গাজা ভ্রমণের কথা বর্ণনা করে লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, সারাহ নামের মেয়েটির কথা এখনো বেশ মনে আছে। সে কিছুটা আড়ষ্ট, অজ্ঞাত কোন দ্বিধায় কুঁকড়ে ছিল। একদিন লেগেছিল সেই ভাব কাটিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে। 
সারাহ বলেছিল, ‘আমি এখান থেকে বেরোতে চাই। আমি আরো পড়তে চাই। বুক ভরে শ্বাস নিতে চাই। আর হামাস নয়, শান্তি চাই।’ 
তিনি বলেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলছে প্রায় ৭৫ বছর ধরে। আমি জানি, সারাহ এখনো মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস গ্রহণের অপেক্ষায়। তাঁর জন্য, তাঁর মতো অসংখ্য ফিলিস্তিনির জন্য আশায় বুক বাঁধা ছাড়া আর কী পথ আছে! 
ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, শারীরিক অবস্থা একদম ভালো নয়, তবুও সাহিত্য একাডেমিতে এসে ভালো লাগছে। সারাজীবন যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলাম, এবং শান্তির পক্ষে স্লোগান দিয়েছি, এখনও দেবো। 
লেখক মনজুর আহমেদ বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী আমার বাল্যবন্ধু ছিলেন। ১৯৬০ সাল হতে আসাদ আমার বন্ধু। আমরা একই সংগঠনে সাহিত্য চর্চা করতাম। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যেসব উর্দু কবি বাংলা ভাষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, আসাদ তাঁদের অনেকের কবিতা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছে। তিনি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। 
কবি কাজী আতীক বলেন, প্রকৃতিতে হেমন্ত চলছে, কিন্তু হেমন্তের কবিতা লিখতে বসলে মন, কলম অন্যদিকে চলে যায়। এমন এক আদিম আঁধারে ডুবে আছি আমরা। তিনি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। 
লেখক কুলদা রায় বলেন, গল্পের মধ্যে যেমন কবিতা থাকে, কবিতার মধ্যেও গল্প থাকে। আমি গল্পকার হলেও কবিতা পড়ি, এবং আমার অনেক প্রিয় কবি আছেন। কবি শব্দ নিয়ে খেলা করেন। কবিতা হলো শব্দ দিয়ে ছবি আঁকা। তিনি উৎপল কুমার বসুর একটি কবিতা পাঠ করেন। 
সাঈদা উদিতা বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে এলে মনে হয় আমার ভাষাটা যেন এখানে উপস্থিত সবাই বুঝতে পারেন, বোঝার চেষ্টা করেন। তিনি ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশের একটি কবিতা পাঠ করেন। 
এবারের আসরে কবি আসাদ চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি করেন তাহরীনা পারভীন প্রীতি এবং কবি শামসুর রাহমানের কবিতা আবৃত্তি করেন পারভীন সুলতানা। 
আসরে স্বরচিত কবিতা, ছড়া ও লেখা পাঠ করেন নীরা কাদরী, এবিএম সালেহ উদ্দিন, মৃদুল আহমেদ, মিনহাজ আহমেদ, বেনজির শিকদার, ফারহানা হোসেন, সুরীত বড়ুয়া, রিমি রুম্মান, মনিজা রহমান, সবিতা দাস, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, লুৎফা শাহানা, সুমন শামসুদ্দিন, সুলতানা ফেরদৌসী, রাজিয়া নাজমী, জুঁই ইসলাম, সুমা রোজারিও, পলি শাহীনা প্রমুখ। আসরে উপস্থিত ছিলেন, জিনাত নবী, ফেরদৌস সাজেদীন, রেখা আহমেদ, হুসনে আরা, রানু ফেরদৌস, আদনান সৈয়দ, রাহাত কাজী শিউলি, আবু সায়ীদ রতন, শুক্লা রায়, নাসির শিকদার, ফরহাদ হোসেন, আকবর হায়দার কিরণ, শহীদ উদ্দিন, মোহাম্মদ সাঈদ, আমিরুল ইসলাম কামাল, রুপা খানম, আকলিমা রানা চৌধুরী, স্বপ্ন কুমার, ইমাম চৌধুরী, মিয়া জাকির, মাহফুজুর রহমান, আলভান চৌধুরী, আবু রায়হান প্রমুখ। 
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাসহ আগামী আসরের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন মোশাররফ হোসেন।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078