ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় তিনজনকে বাসায় ডেকে পেটালেন প্রতিমন্ত্রী জাকির

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:৫৫ , অনলাইন ভার্সন
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য দেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সরকারি বাসভবনে মারধরের শিকার হয়েছেন তিন ব্যক্তি। তাদের একজন মো. আবু সুফিয়ান বিশ্বাস বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও খুলনা জেলা শাখার আহ্বায়ক। এ ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর বাসার অফিস সহায়ক মো. মমিন আবু সুফিয়ানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে  রমনা থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ সূত্রে জানা যায়, আবু সুফিয়ান নিজেও জেল পুলিশের একজন সদস্য। তিনি খুলনা জেলায় কর্মরত।

চাকরিপ্রার্থীরা অভিযোগ করেন, চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের থেকে ৯৪ লাখ টাকা নেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়রা। তার ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের উপস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে লিটন ও ড্রাইভার মোমিনের কাছে এই টাকা দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রীই তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে বলেছিলেন। এ বাবদ আরও বড় অঙ্কের টাকা দেওয়ার কথা ছিল। বাকি টাকা চাকরির পর দেওয়ার রফা হয়। আর এ কাজের সমন্বয় করেছিলেন আবু সুফিয়ান।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অগ্রিম টাকা দেওয়ার পরও চাকরি না হওয়ায় প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেখা করেন আবু সুফিয়ানসহ অন্যরা। এ সময় মন্ত্রী তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত পাননি ভুক্তভোগীরা। ফলে গত মে মাসে ৪৮ জনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন আবু সুফিয়ান। এতে ক্ষুব্ধ হন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

সম্প্রতি ঘোষিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি জাকির হোসেন। এতে প্রতিমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ওপর। ৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তাদের টাকা ফেরত নেওয়ার কথা বলে মন্ত্রীর বাসায় ডাকেন ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোল। কল্লোলের কথামতো সকাল ১১টায় মন্ত্রীর মিন্টো রোডের ১১ নম্বর বাসায় যান আবু সুফিয়ান, নাছির হাওলাদার ও জাহিদ হাসান নামের তিনজন।

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, আবু সুফিয়ানসহ ওই তিনজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের রুমে ঢোকার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওপর থেকে ওই রুম চলে আসেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় কর্মচারী ও বাসার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাত থেকে আটজন ওই রুমে প্রবেশ করে দরজা আটকে তিনজনকে পেটাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ছোটাছুটি করে রুমের দরজা খুলে ফেলেন তারা। তিনজনের মধ্যে নাছির হাওলাদার ও জাহিদ হাসান প্রধান ফটক দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। আবু সুফিয়ান পার্শ্ববর্তী দেয়াল টপকে ডিবি কার্যালয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েন। পরে ডিবি কার্যালয়ের নিরাপত্তায় থাকা সদস্যরা তাকে আটক করেন বলে জানা গেছে।

এদিকে এ ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর বাসার অফিস সহায়ক মো. মমিন রমনা থানায় আবু সুফিয়ানসহ অজ্ঞাত তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে সেটা জিডি বা মামলা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতিমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সকাল ১১টার দিকে আসামি মো. আবু সুফিয়ানসহ অজ্ঞাত তিন ব্যক্তি গেটে জোরে ধাক্কা দিলে নিরাপত্তাকর্মী মো. রাসেল পকেট গেট খুলে পরিচয় জানতে চান। এ সময় তারা জোরপূর্বক বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে এবং রাসেলের ইউনিফর্মের কলার ধরে কিল-ঘুষি দিতে শুরু করে। এমনকি হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আবু সুফিয়ান বলেন, মন্ত্রীকে খবর দে, আমাকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। এ সময় রাসেলের ডাকে বাসার অন্য কর্মীরা ছুটে এলে আবু সুফিয়ান ডিবি পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ভেতর ঢুকে পড়েন। বর্তমানে আবু সুফিয়ান ডিবি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আটক রয়েছেন।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও জেনেছি। তবে তা ডিবি অফিস দেখভাল করছে। যদি আমাদের কাছে এ-সংক্রান্ত অভিযোগ আসে, তাহলে তা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। এ অবস্থায় কে বা কারা প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে চিল্লাচিল্লি করেছে। তারা কাকে টাকা দিয়েছে, সে প্রমাণও নেই। স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তার স্বার্থে ধস্তাধস্তি হয়ে থাকতে পারে। আমরা জেনেছি, এ ঘটনায় এক ব্যক্তি পুলিশ হেফাজতে আছে।’

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আবু সুফিয়ান আমাদের যুগ্ম মহাসচিব। আর বাকি যে দুজনের কথা বলছেন, তারা আমাদের সদস্য নন। তবে ওই দুজনের একজন আমাদের সংগঠনের চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাপারটি জানিয়েছেন। আমিও সেখান থেকে জেনেছি। তবে এ ঘটনাটি একান্তই তাদের ব্যক্তিগত, এটা আমাদের সংগঠনের কোনো ব্যাপার নয়।’

ঠিকানা/এনআই
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078