ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন

চীন ও ভারতের মধ্যে সতর্ক ভারসাম্য চায় বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারী ২০২৪, ১২:৫৮ , অনলাইন ভার্সন
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তার এই সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছে চীন ও ভারত। উভয় এশীয় শক্তিই তাদের প্রভাব বলয় প্রসারিত করার জন্য ছোট দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গঠনে আগ্রহী। তবে পশ্চিমের মিত্ররা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে ভারত ও চীনের সঙ্গে তার স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফলভাবে বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার সুবিধা পাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটিতে অর্থায়ন করছে।‘‘ব্যালেন্সার’’ হিসেবে ঢাকার সাফল্যের এটি আরেকটি প্রতিফলন।’

বাংলাদেশে প্রবেশ করছে চীন:
গত বছর বাংলাদেশ কক্সবাজারে শেখ হাসিনার নামে ১২০ কোটি ডলার ব্যয়ে সাবমেরিন ঘাঁটি উদ্বোধন করে। ঘাঁটিটি চীনা সহায়তায় নির্মিত হয়েছিল এবং ভারতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল যে, চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) গোপনে ভারতের প্রভাববলয়ে প্রবেশের চেষ্টা করছে।

২০২৩ সালের মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক প্রতিবেদনেও সতর্ক করে বলা হয়েছে, চীন পিএলএ সামরিক লজিস্টিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশকে বিবেচনা করছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিমাণ এখন প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সাল থেকে চীনের বৈশ্বিক অবকাঠামো বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সদস্যও বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী নিয়ে চীনের অর্থায়নে নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা নয়াদিল্লির সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।’

বাংলাদেশ সরকার নদীর উল্লেখযোগ্য অংশে ড্রেজিং ও বাঁধ নির্মাণের জন্য চীনের একটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে। তিস্তা রিভার কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টুরেশন প্রজেক্টের অর্থায়ন ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘চীন যদি বেশি ‘বাড়াবাড়ি’ করে, বিশেষ করে তিস্তা প্রকল্পের যে কোনো অগ্রগতির ক্ষেত্রে, এর ফলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।’

প্রায় এক দশক ধরে আলোচনার পরও বাংলাদেশ ও ভারত পানিবণ্টন চুক্তি সই ব্যর্থ হয়েছে। এরপর চীনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে (তিস্তা প্রকল্পের)। ২০১১ সালে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিরোধিতার কারণে একটি সম্ভাব্য চুক্তি স্থগিত করে ভারত।

ভারতের শিলিগুঁড়ি করিডোরকে বলা হয় চিকেন নেক। এই করিডোরটি প্রস্তাবিত ওই তিস্তা প্রকল্পের কাছে। ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সংকীর্ণ একটি অংশের মাধ্যমে ভারতের অন্য ভূখণ্ডের সঙ্গে এই করিডোর উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সংযুক্ত করেছে। ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে এর রয়েছে স্পর্শকাতরতা।

ভারতের আশঙ্কা, বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়ন কাজের আড়ালে করিডোরের কাছে চীন তাদের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

হোসেন বলেন, ‘এসব ঘটনা অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে প্রভাব ফেলতে পারে।’

বাংলাদেশ কি পশ্চিমা দেশগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবে?
বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের পর গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণের আশঙ্কায় পশ্চিমা দেশগুলোতে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সমালোচিত হয়। হাসিনার বিজয় ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে 'অবাধ ও সুষ্ঠু' হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। ৯ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বিএনপিকে অজ্ঞাত 'বিদেশি প্রভুদের' পক্ষে কাজ করার অভিযোগ করেন।

২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের কথা রয়েছে। এই রূপান্তরের পরে, ইউরোপীয় বাজারে বর্তমান শুল্ক এবং কোটা-মুক্ত রপ্তানি সুবিধা বাদ দেওয়ার আগে তিন বছর সময় পাবে।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সুবিধা ধরে রাখতে বাংলাদেশ অন্য বিকল্প খুঁজতে পারে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকার জন্য আমরা যে সুবিধা পাচ্ছি, তা বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ যদি একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা অর্থনৈতিক জোটে প্রবেশ করে, তাহলে তারা সহজেই ওই জোটের বাজারে প্রবেশ করতে পারে।’

বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের জন্য পরিচিত। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বুধবার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ইইউর সঙ্গে মাহমুদের ‘দৃঢ় সম্পর্ক’ এবং ইউরোপ সম্পর্কে তার ‘গভীর বোঝাপড়ার’ প্রশংসা করেন।

হোয়াইটলি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ইইউ'র মধ্যকার সম্পর্ক নতুন অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির (পিসিএ) মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, এই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তিটি শিগগিরই আলোচনা করা হবে এবং এটি বিদ্যমান চুক্তির চেয়ে অনেক বেশি ‘রাজনৈতিক’ হবে।

বিশ্লেষক কুগেলম্যান বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ কোনো দল বেছে নিতে বাধ্য হবে না এবং পরাশক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে। তিনি বলেন, এটি এমন একটি দেশ যারা ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতার কাছে নতি স্বীকার করার পরিবর্তে ভারসাম্য বজায় রাখার শক্তিশালী ক্ষমতা দেখিয়েছে। শেখ হাসিনা উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্ব, ভারত ও চীন, পশ্চিমা ও অপাশ্চাত্য প্রভৃতি বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষভাবে পারদর্শী।

ঠিকানা/ছালিক
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041