Thikana News
২২ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

মিয়ানমারের হাজার হাজার সৈন্য কেন বাহিনী ছাড়ছে

মিয়ানমারের হাজার হাজার সৈন্য কেন বাহিনী ছাড়ছে ছবি : সংগৃহীত
ক্ষমতা দখলের তিন বছর পর নিয়ন্ত্রণ কাদের ওপর আছে- এমন প্রশ্নে হিমশিম খাচ্ছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। গত কয়েক মাসে একের পর এক লজ্জাজনক পরাজয়ের পর সেনা নেতৃত্ব মিন অং হ্লাইংও সমালোচনার মুখে পড়ছেন। সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখল করে নেওয়া অস্ত্রের ছবি, ক্লান্ত সেনারা গণহারে আত্মসমর্পণ করছেন, আকাশ থেকে নামিয়ে ফেলা হচ্ছে সামরিক প্লেন। নজিরবিহীনভাবে প্রায় ২৪ হাজার সেনা নিয়ে শান প্রদেশে আত্মসমর্পণ করেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কমান্ডাররা।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, মিয়ানমারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকাজুড়ে সংঘাত চলছে। উত্তরে চীন এবং পশ্চিমে ভারত সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হাতছাড়া হয়েছে জান্তা সরকারের। সামরিক বাহিনীর সমর্থকরাও এখন সোস্যাল মিডিয়ায় সেনা নেতৃত্বের সমালোচনা করছেন। চলতি মাসের শুরুতে উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ নেতা পাউক সায়ারডাও এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মিন অং হ্লাইংয়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন। মান্দালয় অঞ্চলের এমন এক শহরে তিনি এই বিক্ষোভ করেছেন, যেখানে ব্যাপক সেনা উপস্থিতি রয়েছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে জান্তা বাহিনী। তখন থেকে বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে সামরিক সরকার। এই বিরোধীদের মধ্যে রয়েছেন জান্তার সহিংসতা ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া গণতন্ত্রপন্থি বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং দীর্ঘসময় ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বিদ্রোহীরা।

বিদ্রোহীদের এই তৎপরতার মধ্যে গত ২৭ অক্টোবর থেকে নাটকীয়ভাবে জান্তা বাহিনীর ওপর চাপ বেড়েছে। সেদিন মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে ক্ষুদ্র্র জাতিগোষ্ঠীর

বিদ্রোহীদের একটি জোট। এ হামলায় তারা সহায়তা পেয়েছিল সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে থাকা গোষ্ঠীর কাছ থেকেও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত সাফল্য পেতে থাকা ব্রাদারহুড জোটে থাকা গ্রুপগুলোর নিজস্ব আঞ্চলিক উচ্চাকাক্সক্ষাও রয়েছে। গণতন্ত্রপন্থি হিসেবে জোটভুক্ত হলেও উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে বিরোধ তৈরির আশঙ্কাও করছেন বিশ্লেষকরা।

স্টিমসন সেন্টারের পূর্ব এশিয়া প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক ও সিনিয়র ফেলো ইয়ান সান বলেন, জান্তার ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে চীন ব্রাদারহুড জোটের অভিযানকে কৌশলগতভাবে অনুমোদন করেছে। তিনি বলেন, জান্তাকে শাস্তি দিতে চেয়েছে চীন। তবে তারা এটাও স্পষ্ট করেছে যে, তারা স্থিতিশীলতা ফেরার নিশ্চয়তা চায়।

মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের গঠন করা জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজে) দাবি করেছে, দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে জান্তাবিরোধীরা। তবে সংঘাতকবলিত দেশটিতে কোন জায়গা কার নিয়ন্ত্রণে আছে, তা স্বাধীনভাবে নির্ণয় করা কঠিন।

তাগাং ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের (টিআইপিএস) নির্বাহী পরিচালক ইয়ে মিয়াও হেইন বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে জান্তা বাহিনী। তিনি বলেন, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী এখন সশস্ত্র প্রতিরোধের নানা ধরনের হামলার মুখে পড়ছে। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন পর্যায়েও হতাশা বাড়ছে।

তবে এতকিছুর পরও ইয়ে মিয়াও হেইন মনে করেন, জান্তা প্রধানের পদ থেকে মিন অং হ্লাইংকে অপসারণ করা হবে না। আবার কেউ কেউ মনে করেন, নেতৃত্ব বদল হলে বিকল্প যিনি আসবেন তিনি হয়তো আরও বেশি সহিংস হতে পারেন।

এ ছাড়া, মাসের পর মাস নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া জান্তা সরকারের সেনারাও ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বার্মার সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা থেকে নতুন সেনা নিয়োগ দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।

জান্তা বাহিনী ছেড়ে পালানো এক সেনা বলেন, সবাই পালাতে চায়। সেনারা হয়তো এখনো সেনাবাহিনীকে ভালোবাসে। কিন্তু তারা এর নেতাকে আর কোনোভাবে পছন্দ করেন না।

ঠিকানা/ছালিক 

কমেন্ট বক্স