নিউইয়র্কে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি, পার্কচেস্টার জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কমিউনিটিতে সকলের ‘নানা’ হিসাবে পরিচিত আবদুল বাছির খান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না...রাজিউন)। গত ২০ এপ্রিল দুপুর ১২ টা ১০ মিনিটে লং আইল্যান্ডের একটি নার্সিং হোমে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অসুস্থ হয়ে তিনি সেখানে বেশ কিছুদিন যাবৎ ভর্তি ছিলেন। বাছির খানের মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে গত ২০ এপ্রিল বিকাল ৫টায় মরহুমের লাশ পার্কচেস্টার জামে মসজিদে আনা হয়। পরদিন (২১ এপ্রিল) বাদ জোহর পার্কচেস্টার মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী অংশ নেন। জানাজা পূর্বে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সভাপতি বদরুল খান এবং মরহুমের পরিবারের সদস্য বক্তব্য রাখেন। ২২ এপ্রিল লং আইল্যান্ডের ওয়াশিংটন মেমোরিয়ালে তাকে দাফন করা হয়েছে। 
উল্লেখ্য, আবদুল বাছির খান মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে পাড়ি জমান বিলেতে। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ব্রিটেনে বসবাসের পর ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়ে বাছির খান যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এখানে আসার পর নিউইয়র্কেই কেটেছে তাঁর প্রবাস জীবনের ৫৫ বছর। গ্রহণ করেছেন আমেরিকান পাসপোর্ট। বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল বাছির খানের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বাছির খান ছিলেন একাধারে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
জানা গেছে, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ জীবনে অজাতশত্রু, সদা হাস্যোজ্জ্বল আবদুল বাছির খান সবসময় বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভেও অংশগ্রহণ করেন তিনি। ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে রাজপথে মিছিল করেছেন, সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন সমাবেশে।
যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে বাংলাদেশের স্বপক্ষে কিংবা কমিউনিটির বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে মিছিল-মিটিং-সামাজিক কর্মকাণ্ডে সোচ্চার ছিলেন তিনি। প্রবাসী বাংলাদেশের কোনো অনুষ্ঠানের খবর পেলেই ছুটে যেতেন সেখানে। প্রবাসের অনেক সংগঠনেরই প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন এই বাছির খান। কোনো কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহু বছর ধরে।
সংগঠন প্রিয় আবদুল বাছির খান যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ সমিতির সঙ্গে যুক্ত সেই প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই। প্রবাসের অন্যতম বৃহত্তম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের তিনি ছিলেন সহ-সভাপতি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নবীগঞ্জবাসীর একমাত্র সংগঠন নবীগঞ্জ উপজেলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইউএসএ’র কার্যকরী কমিটিতে ছিলেন ১৯৯৬ সাল থেকে। তাছাড়া বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কসের তিনি প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য। ব্রঙ্কস বাংলা স্কুলের শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন দীর্ঘদিন। ব্রঙ্কসের কলম্বাসখ্যাত বাছির খান ১৯৯৬ সালে অবসর গ্রহণের পর থেকে পার্কচেস্টারে বসবাস করতেন। গত দু’বছর ধরে তিনি তার মেয়ের সাথে লং আইল্যান্ডে বসবাস করছিলেন।
এদিকে আবদুল বাছির খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি বদরুল খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকম হাকিম এক বিবৃতিতে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। 
এছাড়াও বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কস নিউইয়র্ক ইনকের সভাপতি মোহাম্মদ সামাদ মিয়া জাকারিয়া, সাধারণ সম্পাদক ইমরান আলী টিপু সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবদুল বাছির খানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। 
এদিকে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কস নিউইয়র্ক, ইনকের উদ্যোগে গত ২২ এপ্রিল সোমবার বাদ মাগরিব পার্কচেস্টার জামে মসজিদে অবদুল বাছির খানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। 
                           
                           
                            
                       
    
 
 


 ঠিকানা রিপোর্ট 
                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
