Thikana News
০৪ নভেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫





 
শ্রমিক–ভাড়াটিয়া–অভিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই নিউইয়র্কে

মামদানির পক্ষে নতুন জোট ‘পিপলস মেজরিটি’

মামদানির পক্ষে নতুন জোট ‘পিপলস মেজরিটি’ ছবি সংগৃহীত





 
নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ের লক্ষ্যে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জোহরান মামদানির পক্ষে শ্রমিক ইউনিয়ন, ভাড়াটিয়া সংগঠন ও অভিবাসী অধিকার গোষ্ঠীগুলো মিলে ‘পিপলস মেজরিটি’ নামে নতুন একটি জোট গঠন করেছে। রোববার (২ নভেম্বর) সানসেট পার্কে আয়োজিত জোটের উদ্বোধনী সমাবেশে সংগঠনগুলোর নেতারা জানান, প্রাইমারি নির্বাচনে অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে ১৩ পয়েন্টে হারাতে মাঠে যে দল কাজ করেছিল, এবার তারাই একযোগে চূড়ান্ত নির্বাচনেও মামদানির বিজয় নিশ্চিত করতে চায়। শুধু তা-ই নয়, ক্ষমতায় গিয়েও মামদানির ‘অ্যাফোর্ডেবিলিটি’ অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে চাপ অব্যাহত রাখবে জোটটি। ১২টি শ্রমিক সংগঠন, ভাড়াটিয়া ও অভিবাসী অধিকারভিত্তিক নেটওয়ার্ক এবং ডিএসএসহ (DSA) বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম মিলে এই জোট গঠিত। তাদের দাবি, জোটটি সরাসরি লক্ষাধিক কর্মজীবী নিউইয়র্কারের প্রতিনিধিত্ব করছে।

সমাবেশে অংশ নেন নির্বাচিত প্রতিনিধি অ্যাসেম্বলি মেম্বার মার্সেলা মিতাইয়ানেস ও সিটি কাউন্সিল মেম্বার আলেক্সা আভিলেস। আয়োজকদের ভাষ্য, স্ন্যাপ (SNAP) সুবিধায় ফেডারেল কাটছাঁট, ভাড়া বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা এবং আইসিইর (ICE) বাড়তি ধরপাকড়—এই তিনটি চাপের মুখে শহরের কর্মজীবী ও অভিবাসী পরিবারগুলো সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সমাবেশ শেষে স্বেচ্ছাসেবকেরা সানসেট পার্কের ‘সুইং’ এলাকাগুলোর ভোটারদের ঘরে ঘরে প্রচারণা চালান। এসব এলাকায় জুনের প্রাইমারিতেও মামদানি স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন।

মঞ্চ থেকে মামদানির মূল প্রতিশ্রুতিগুলো পুনর্ব্যক্ত করা হয়। এগুলো হলো ধনীদের ওপর কর বাড়ানো, চার বছরের জন্য ভাড়া স্থগিত (রেন্ট ফ্রিজ), দ্রুত ও বিনামূল্যে বাসসেবা এবং সর্বজনীন শিশুসেবা (ইউনিভার্সাল চাইল্ডকেয়ার)।

চায়নাটাউনের সংগঠন সিএএএভির (CAAAV) সংগঠক জুলি শু বলেন, ‘অর্থনীতির রাজধানী এই শহরে কর্মজীবী ও অভিবাসী নিউইয়র্কাররা বিলিয়নিয়ার ও মুনাফাখোরদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চায় । সুপার প্যাকের টাকায় নয়, সংগঠিত মানুষের শক্তিতেই এই লড়াইয়ে জেতা সম্ভব।’

নিউইয়র্ক সিটি ডিএসএর সহসভাপতি গ্রেস মাউসার মন্তব্য করেন, ‘সিটি হলে কর্মজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর জোরালো করতে আমরা মামদানির পক্ষে ম্যান্ডেট চাই।’

এই জোটে আছে CIR–SEIU, ডাক্তারদের সংগঠন ডক্টরস কাউন্সিল SEIU, ড্রাম বিটস (DRUM Beats), IATSE 161, জিউস ফর রেশিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস (JFREJ), নিউইয়র্ক কমিউনিটিজ ফর চেঞ্জ, পেশাজীবী স্টাফ কংগ্রেস/সিইউএনওয়াই (PSC/CUNY), টিমস্টারস লোকাল ৮০৪, এনওয়াইএস টেন্যান্ট ব্লক, জিউইশ ভয়েস ফর পিস অ্যাকশন এবং ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স ৯এ–সহ আরও কয়েকটি সংগঠন।

২০২৪ সালের অক্টোবরে জন্ম নেওয়া এই জোটের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, ভাড়াটিয়া, শিক্ষক, হোমকেয়ার কর্মী, নার্স, রাইডশেয়ার চালক, ডেলিভারি-রেস্টুরেন্ট-কনস্ট্রাকশন কর্মী, স্ট্রিট ভেন্ডারসহ নানা পেশাজীবীর মানুষ। সদস্যদের বেশির ভাগ বাংলাদেশ, চীন, কলম্বিয়া, ডমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, গায়ানা, হাইতিসহ ২০টির বেশি ভাষাভিত্তিক কমিউনিটি থেকে আসা।

স্বাস্থ্য খাতে কাজ করা ডাক্তারদের সংগঠন ডক্টরস কাউন্সিল SEIU–এর ড. জসমিত সান্ধু বলেন, ‘অ্যাফোর্ডেবিলিটি সংকট সরাসরি আমাদের রোগীদের স্বাস্থ্যের ওপর আঘাত করছে। মেডিকেডে ফেডারেল আক্রমণের প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আমাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাই আমরা মামদানিকে বিজয়ী করতে কাজ করছি ।’

ভাড়াটিয়া জোট এনওয়াইএস টেন্যান্ট ব্লকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুমাথি কুমার বলেন, ‘নিউইয়র্কে সংখ্যাগরিষ্ঠই ভাড়াটিয়া। প্রাইমারিতে রিয়েল এস্টেট আমাদের থামাতে পারেনি, মঙ্গলবার চূড়ান্ত নির্বাচনেও পারবে না। তবে লড়াই এখানেই শেষ নয়—কারণ নীতিমালায় বাধা আসবে, আমরা সংগঠিত থেকে সেই বাধা মোকাবিলা করব।’

লিটল পাকিস্তানে ড্রাম বিটসের সাঈদা বেগম বলেন, ‘স্ন্যাপ কাট মানে শিশুদের মুখ থেকে খাবার কেড়ে নেওয়া। একজন কর্মজীবী অভিবাসী ও মা হিসেবে আমি এই আঘাতকে ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করি। আর মামদানিই পারবেন এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ।’

ইহুদি অধিকারভিত্তিক সংগঠন জেএফআরইজের নির্বাহী পরিচালক অড্রি স্যাসন জানান, ‘ঐক্যের নিউইয়র্ক গড়তে আমরা বহু বছর ধরে সংগঠিত। মামদানির প্ল্যাটফর্ম ন্যায়, সহমর্মিতা ও দুর্বলদের পাশে দাঁড়ানোর মূল্যবোধকে বাস্তব রূপ দেয়।’

জিউইশ ভয়েস ফর পিস অ্যাকশনের রাজনৈতিক পরিচালক বেথ মিলার বলেন, ‘এই নির্বাচনে মামদানির জয়ের মধ্য দিয়ে ইসলামোফোবিয়া ও বর্ণবিদ্বেষের মাধ্যমে নিউইয়র্ক শহরকে বিভক্ত করার রাজনীতি ব্যর্থ হবে। বহুজাতি, বহুধর্ম, বহুভাষিক মানুষের নিউইয়র্ক গঠিত হবে।’

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স