যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের ইসরাইয়েল বিরোধী বিক্ষোভে গ্যাড়াকলে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার গলার কাঁটা হয়ে পড়েছে এই বিক্ষোভ। কয়েক মাস ধরে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীরা তাকে ‘ জেনোসাইড জো’ বা ‘গণহত্যা জো’বলে অভিহিত করছেন। এদিকে বিক্ষোভের পিছনে থাকা কিছু গ্রুপ অস্বাভাবিক উৎস থেকে সমর্থন পাচ্ছে।
আর্থিক সহায়তা দেওয়া দাতাদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক সার্কেলের কিছু বড় নাম রয়েছে। এরা হলেন- জর্জ সোরোস, রকফেলার ও প্রিটজকার।
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের সমর্থনকারী দটি সংগঠন হলো ইহুদি ভয়েস ফর পিস এবং ইফনটনাউ। উভয়ই গ্রুপই টাইডস ফাউন্ডেশন সমর্থিত। এই ফাউন্ডেশনটি ডেমোক্র্যাটিক মেগাডোনার জর্জ সোরোসের তৈরি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন সমর্থিত ছিল। এটি সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করে এমন অসংখ্য ছোট অলাভজনক উদ্যোগকে সমর্থন করে।
এ ব্যাপারে সোরোস মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বলেছে, আগে টাইডস ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য গ্রুপকে তারা অর্থায়ন করেছে, কিন্তু এখন আর টাইডসে তার সক্রিয় অনুদান নেই। এটি এখন আর ইহুদি ভয়েস ফর পিস বা ইফনটনাউ সমর্থন করে না।
আরেকজন প্রখ্যাত ডেমোক্র্যাটিক দাতা হলেন ডেভিড রকফেলার জুনিয়র। তিনি রকফেলার ব্রাদার্স ফান্ডের বোর্ডে বসেন। তার জনহিতৈষী সমর্থনে প্রতিবাদ আন্দোলনকে অর্থায়নে সাহায্য করেছে। ব্রাদার্স ফান্ড ২০২২ সালে টাইডস ফাউন্ডেশনকে ৩ লাখ ডলার দিয়েছে। অলাভজনক ট্যাক্স ফর্ম অনুযায়ী, টাইডস গত পাঁচ বছরে প্রায় ৫ লাখ ডলার দিয়েছে ইহুদি ভয়েস ফর পিসকে, যা স্পষ্টভাবে নিজেকে জায়নবাদ বিরোধী হিসেবে বর্ণনা করে।
হায়াত হোটেল এম্পায়ারের উত্তরাধিকারী - সুসান ও নিক প্রিটজকার এবং বাইডেনের সমর্থক ও বিভিন্ন ডেমোক্র্যাটিক ক্যাম্পেইনে অর্থায়ন করা একটি ফাউন্ডেশন ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভে জড়িত কয়েকটি গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে। এসব দাতা ২০২০ সালের প্রচারে বাইডেনকে ৩ লাখ ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছে। কয়েক মাস আগে বাইডেন ভিক্টরি ফান্ডে ৬,৬০০ ডলার দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী প্রতিবাদের কৌশল আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন দখল, ইহুদি বিদ্বেষী মন্তব্য করা এবং তাদের পিছনে থাকা গ্রুপগুলো এখন অন্য দাতাদের কাছ থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে।
এদিকে গণহত্যাবিরোধী কাজকে সমর্থন করে এলি উইজেল ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের সভাপতি করেন ডেমোক্র্যাটিক দাতা এলিশা উইজেল। তিনি বলেন, ‘কেন রকফেলার ফান্ড ইহুদি ভয়েস ফর পিসকে উল্লেখযোগ্য অনুদান দিচ্ছে, যেটি হামাসের পরিবর্তে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার জন্য দায়ী করেছে?’
ইহুদি ভয়েস ফর পিস বাইডেনকে গনহত্যার সমর্থক বলে আখ্যায়িত করে আসছে। এই গ্রুপটি ৭ অক্টোবরের হামলা ও সহিংসতার উৎস ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও বর্ণবাদ বলে দাবি করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এই নিপীড়নে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তরুণদের সমর্থন পুনরুদ্ধার করার জন্য সংগ্রাম করছেন। কিন্তু ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভের কারণে জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছেন তিনি।
গাজায় বহু সংখ্যক বেসামরিক মানুষ হতাহতের মধ্যে ইসরায়েল বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এই বিক্ষোভ আরও তীব্র হচ্ছে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির যারা বিক্ষোভ করছেন তারা মূলত বাইডেনের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছেন।
ইতিমধ্যে বাইডেন বলেছেন, ‘সম্পত্তি ধ্বংস করা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়, এটি আইনের বিরোধী। ভাঙচুর, অনুপ্রবেশ, জানালা ভাঙা, ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া, ক্লাস এবং গ্র্যাজুয়েশন বাতিল করা, এর কোনটাই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়।’
নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বাইডেনের উদ্বেগ বাড়ছে। গ্রীষ্ম এবং শরৎকালে বিক্ষোভ চলতে থাকলে বাইডেনের দায় আরও স্পষ্ট হতে পারে।
দ্য ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স প্যালেস্টাইনপন্থী মিছিলে অংশ নিয়ে ‘জেনোসাইড জো’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। লিব্রা ফাউন্ডেশন সমর্থিত আরেকটি গ্রুপ ব্ল্যাক অর্গানাইজিং ফর লিডারশিপ অ্যান্ড ডিগনিটি তার ওয়েবসাইটে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ প্রচার করে।