আগামী ২৯, ৩০ ও ৩১ আগস্ট, লেবার ডে উইকেন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের বড় দুটি শহরে বসছে ৩৯তম ফোবানা সম্মেলন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফরম এই ফোবানা সম্মেলনে এ বছর প্রবাসীদের পক্ষে বেশকিছু অভিন্ন দাবি জোরেশোরে উঠতে পারে, তা হলো- বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের আসন সংরক্ষণ এবং ভোটার হিসাবে নিবন্ধন করা। ফোবানায় একাধিক সেমিনারে এই দুটি বিষয় সন্নিবেশিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।
আগামী ২৯, ৩০ ও ৩১ আগস্ট, যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার লেবার ডে উইকেন্ডে জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টায় অভিজাত গ্যাস সাউথ কনভেনশন সেন্টারে বসবে ফোবানার ৩৯তম আসর। এজন্য চলছে জোরালো প্রস্তুতি। প্রায় শতাধিক সংগঠন এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। যাদের অংশগ্রহণে থাকবে নানান অনুষ্ঠান।
আটলান্টা ফোবানা অর্থবহ ও সার্থক করে তুলতে নানামুখী কার্যক্রম চলছে। ফোবানা সম্মেলন শুধু বিনোদন নির্ভর না হয় এজন্য এবারের ফোবানায় বেশকিছু সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন থাকবে, যেখানে প্রবাসী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানান বিষয় প্রাধান্য পাবে।
এ বিষয়ে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি আবীর আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঠিকানাকে জানান, ফোবানা নর্থ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফরম। আমরা সবসময় এ সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাই। এবারের আটলান্টা সম্মেলনের বড় দিক হচ্ছে- শতাধিক সংগঠন ফোবানায় নিবন্ধন করেছেন। ফলে লোকসমাগম ভালো হবে। এ কারণে ফোবানা সম্মেলনকে প্রাণবন্ত করে তুলতে স্টিয়ারিং কমিটি ও হোস্ট সংগঠন কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম, যেখানে প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উত্থাপন করা হবে। এসব দাবির মধ্যে থাকবে- জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের জন্য আসন সংরক্ষণ এবং প্রবাসীদের এনআইডি ও ভোটাধিকার। এছাড়া বাংলাদেশে প্রবাসীদের নিরাপত্তা প্রদান ও এয়ারপোর্টে হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তুলে ধরা হবে সেমিনারে।
আবীর আলমগীর বলেন, প্রবাসীদের এসব দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোনো সরকারই প্রবাসীদের দাবি পূরণে ভূমিকা রাখতে পারছে না। যেহেতু ফোবানা বড় প্ল্যাটফরম, তাই এসব দাবি উঠলেই তা সহজেই সরকারের দৃষ্টিগোচর হবে। প্রবাসী গণমান্য ব্যক্তিদের অনেকেই এসব সেমিনারে অংশ নেবেন বলে জানান আবীর আলমগীর।
এদিকে ফোবানা আরেকটি অংশের সম্মেলন হতে যাচ্ছে একই সময়ে, অর্থাৎ আগামী ২৯, ৩০ ও ৩১ আগস্ট নিউইয়র্কের সীমান্তবর্তী শহর নায়াগ্রায় হোটেল শেরাটনে। এই আসরটিও বড় হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তারা বলছেন, যেহেতু ৩৯তম ফোবানার আয়োজন ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটি, তাই এবারের আয়োজনটি জমজমাট ও বর্ণাঢ্য হবে।
ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সচিব কাজী আজম ঠিকানাকে জানান, ফোবানার মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি, বাংলাদেশী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং এর প্রচার ও প্রসার, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নানা ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন রচনা করা। ফোবানা সৃষ্টির পর থেকে আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে আসছি। তবে এবারের সম্মেলনে প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়টি আমরা সভা- সেমিনারে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
তিনি জানান, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের আসন সংরক্ষণ এবং ভোটার হিসাবে নিবন্ধন সময়ের দাবি। দীর্ঘদিনের এই দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরতে এবারে ফোবানায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের চেয়ারম্যান (অ্যাডমিন) ও মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু তারা নিজ দেশে অবহেলিত। নানাভাবে দেশের জন্য ভূমিকা রেখেও ন্যুনতম মর্যাদা পান না। বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য ভূমিকা রেখেও দেশে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয় না। আইন করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। তাই এবারের ফোবানা সম্মেলনে অধিকাংশ সভা-সেমিনারে এবিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করা হবে।
কাজী আজম জানান, নায়াগ্রায় অনুষ্ঠেয় ফোবানা সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে আসছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষপর্যায়ে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এ কারণে ফোবানা সম্মেলনে প্রবাসীদের নানান দাবি তুলে ধরা হবে।
কাজী আজম জানান, এবারের সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতি, সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন রচনার জোর প্রয়াস থাকবে। তিনি জানান, ২৩ জুলাই বুধবার নিউইয়র্কে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে প্রবাসীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সেমিনার আয়োজনসহ ফোবানার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হবে।