যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আজ ১৪ মে (মঙ্গলবার) সকালে ঢাকায় আসছেন। সফরকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সহযোগিতা জোরদার করতে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ডোনাল্ড লুর এটিই প্রথম ঢাকা সফর।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মঙ্গলবার দিনের শুরুতে কলম্বো থেকে ঢাকা পৌঁছাবেন লু। তার সফরটিকে ঘিরে এরই মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই ক’দিন তার সফর নিয়ে খোলাখুলি কথা বলছেন। বিরোধী দলের নেতারা অবশ্য এ নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছেন। তারা খুব একটা উচ্ছ্বাস না দেখালেও সফরটি যে পর্যবেক্ষণে রয়েছে তা বিরোধী নেতাদের কথাবার্তায় স্পষ্ট। একটি সূত্র অবশ্য বলছে, লু’র এবারের সফরে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টিতে জোর দেবে বাংলাদেশ। মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেটি প্রত্যাহারে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে র্যাবের কার্যক্রম তথা অপারেশনে ‘ইতিবাচক’ অনেক পরিবর্তন এসেছে।
যা লু’র সফরে উপস্থাপন করে ওয়াশিংটনের অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করবে ঢাকা।
সেগুনবাগিচা বলছে, গত ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। প্রস্তাবিত সূচি মতে, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ঢাকা সফরের প্রথম দিন (আজ) রাতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দেয়া এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন (কাল) তিনি প্রথমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে ও পরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিন দিনের ঢাকা সফরের সময় ডনাল্ড লু’র নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।
লু’র সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা স্পষ্ট করেছেন। ওই চিঠির শুরুতে বাইডেন ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের পরবর্তী অধ্যায় শুরুর পর্ব’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন; যা থেকে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগ দিচ্ছে। আর অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হিসেবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা; অর্থনৈতিক উন্নয়ন; জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি; বৈশ্বিক স্বাস্থ্য; মানবিক সহায়তা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ইস্যুতে আলোচনায় ছিলেন ডোনাল্ড লু। ভোট শেষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ওয়াশিংটন জানায়, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তবে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহের কথাও জানিয়েছে দেশটি।
ঠিকানা/এসআর