বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে অচিরেই দেশে ফিরছেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি এমনটাই চিন্তা করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যে লন্ডন ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন তিনি। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকেরাও একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। লিভার ট্রান্সপ্লান্টের বিষয়ে এত দিন যে আলোচনা হচ্ছিল, সেটি আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। তবে লিভার-কিডনিসহ শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে চিকিৎসকেরা ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসা-পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।
এদিকে লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় হাসিখুশি সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া। পুত্রবধূদের পরিচর্যায় তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ। নাতনিদের সঙ্গে খুনসুটিতে সময় পার করছেন। এমনটাই জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৭ জানুয়ারি) এশার নামাজের পর বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন মসজিদে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক দোয়া মাহফিল শেষে তিনি এ কথা বলেন। এমএ মালেক বলেন, খালেদা জিয়া অনেক ভালো আছেন। তিনি বাসায় ফিরে খুব হাসিখুশি আছেন। রোববার নেত্রীর সঙ্গে আমাদের নেতা তারেক রহমানসহ একসঙ্গে ডিনার করেছি। আমার মনে হয়, তিনি ৬০ পার্সেন্ট সুস্থ হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশি দুটি টিম মিলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছে। হাসপাতালের চেয়ে বাসায় বেটার ট্রিটমেন্ট হচ্ছে। রোববারও দেখলাম ডা. জুবাইদা রহমান বসে খাওয়াচ্ছেন। পাশে তারেক রহমান বসা। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া তার পুত্রবধূদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। বাসায় যাওয়ার মানে হচ্ছে, তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। উনি অচিরেই দেশে যাবেন। দেশের জনগণ ওনাকে দেখতে চান।
বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানিয়েছেন, বেগম জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়ে লন্ডনে আলোচনা চলছে। কবে নাগাদ ফিরতে পারেন সেটি ঠিক না হলেও সপ্তাহখানেক পরে তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠার পরও তার সঙ্গে যাওয়া মেডিকেল বোর্ডের সদস্যসহ অন্যরাও সেখানে অবস্থান করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, একসঙ্গেই তারা দেশে ফিরবেন। কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে দোহা হয়ে লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। জানা গেছে, আমিরের পাঠানো অ্যাম্বুলেন্সেই তিনি লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরতে পারেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানিয়েছেন, স্বৈরাচারের বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কেটে যায়নি। আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন পক্ষের মধ্যেও কিছুটা অনৈক্যের সুর ফুটে উঠেছে। এ অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়াই রাজনীতির মাঠে ঐক্যের প্রতীক। এখনো তার যেকোনো বার্তা সব পক্ষই সাদরে গ্রহণ করে। যে কারণে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে অংশ না নিলেও দেশে তার উপস্থিতি সব সময়ই তাৎপর্যপূর্ণ।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘লন্ডন ক্লিনিক ম্যাডামকে ছুটি দিয়েছে। এখন উনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় উঠেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আপাতত বাসায়ই বেগম জিয়া লন্ডন ক্লিনিকের অধ্যাপক জন প্যাট্টিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকবেন। আমরা যারা ম্যাডামের চিকিৎসক আছি, তারাও এ কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকব। ইউকের যে নিয়ম আছে, সেই নিয়ম মেনেই বাসায় ওনার চিকিৎসা চলবে। সেভাবেই বাসায় সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
জাহিদ জানান, জন প্যাট্টিক কেনেডিসহ সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স হসপিটালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বিএনপির চেয়ারপারসনের সব রিপোর্ট পর্যালোচনা করেই তাকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। তবে শর্ত রয়েছে, তিনি লন্ডন ক্লিনিকের জন প্যাট্টিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকবেন।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ জানুয়ারি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন। দীর্ঘ ১৭ দিন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে বর্তমানে লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় রয়েছেন।