ইউরোপ-আমেরিকায় বাংলাদেশের চিংড়ির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ির চাহিদার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী ভারত ছাড়াও ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ অন্যান্য রফতানিকারক দেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্ধিত চাহিদা ধরে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ। ধস না নামলেও এ খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ জন্য বাংলাদেশের উৎপাদনকারী, রফতানিকারকেরা কোনোভাবেই দায়ী নন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বাংলাদেশের চিংড়ির বাজার ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র ও রফতানিকারকেরা জানান, গার্মেন্টসের পরই হিমায়িত চিংড়ির রফতানি আয়। দুই বছর আগেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে চিংড়ির স্থান ছিল দ্বিতীয়, গার্মেন্টসের পরেই। এখন সেই স্থান অষ্টমে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরে চিংড়ির উৎপাদন হয়েছিল সাড়ে ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের বছর উৎপাদন হয়েছিল ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। তার পরও চিংড়ি রফতানি ও রফতানি আয় বেড়েছে।
জানা যায়, বাগেরহাট, খুলনা জেলাই প্রধানত চিংড়ি উৎপাদনকারী এলাকা। এখানে চিংড়ি ঘের রয়েছে ৯০ হাজারের বেশি। বাগেরহাট জেলায়ই সর্বাধিক সংখ্যক ঘের রয়েছে। এই জেলায় চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ৮০ হাজার। এসব ঘেরে গলদা ও বাগদার চাষ হয়। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে অভিযোগ ওঠায় এবং শ্রমিকদের মজুরি কম দেওয়াসহ ঘেরের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ ওঠায় কয়েক বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। কিন্তু বাংলাদেশি উৎপাদনকারী ও রফতানিকারকেরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সে অবস্থা কাটিয়ে ওঠেন। উন্নত মানসম্পন্ন ব্যবস্থায় এবং বাংলাদেশের চিংড়ি অধিকতর সুস্বাদু হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ক্রেতারা বাংলাদেশের দিকেই অধিক হারে ঝোঁকেন। এর ফলে ভারতসহ অন্যান্য দেশের প্রতিহিংসার শিকার হয় বাংলাদেশ।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে চিংড়ির রফতানি ২২ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। বৈদেশিক মুদ্রার আয় হয়েছে যথাক্রমে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ও ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। বছর শেষে রফতানি আয়ের পরিমাণ ২৬ থেকে ২৭ কোটি মার্কিন ডলার, সর্বোচ্চ ৩০ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। চিংড়ির বিক্রয়মূল্য অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়াই এর কারণ। ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের চিংড়ির প্রতি প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশের চিংড়ি তাদের অধিকাংশের প্রথম অগ্রাধিকার। সেই ইউরোপ-আমেরিকায়ই চিংড়ির চাহিদা অনেক কমে গেছে। এর কারণ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিলাসী মানুষসহ সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে আয় কমে গেছে এবং সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির ধকল সামলানো অনেকের পক্ষেই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিংড়ির প্রতি আকর্ষণও কমে গেছে। যার নৈতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে।