Thikana News
১৮ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

তেহরান থেকে নাগরিকদের সরে যেতে বললেন ট্রাম্প

তেহরান থেকে নাগরিকদের সরে যেতে বললেন ট্রাম্প সংগৃহীত



 
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা পঞ্চম দিনে গড়ানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানি নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব রাজধানী তেহরান ছেড়ে যাওয়ার তাগাদা দিয়েছেন। ইরান পরমাণু অস্ত্র বানানার চিন্তা ছেঁটে ফেলার চুক্তি প্রত্যাখ্যান করায় এখন এ সতর্কবার্তা দিতে হচ্ছে বলেও ইঙ্গিত রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্টের।

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির কারণে কানাডায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার একদিন আগেই ট্রাম্প সোমবার দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ফিরেই তিনি মার্কিন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বসবেন বলে ফক্স নিউজের এক খবরে বলা হয়েছে।

“ইরানের উচিত ছিল আমি যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বলেছিলাম, সেখানে স্বাক্ষর করা। কী লজ্জা, কী পরিমাণ মানুষের জীবনের অপচয়। সহজ করে বলি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না। আমি বারবার এটা বলেছি। সবারই উচিত দ্রুত তেহরান ছেড়ে চলে যাওয়া,” সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প এমনটাই বলেছেন।

ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ট্রাম্পের আগেভাগে জি৭ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা ইতিবাচক। যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, তা মানতে ইসরায়েল ও ইরানকে রাজি করানোই মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রাথমিক লক্ষ্য।

“একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির ও বিস্তৃত আলোচনা শুরুর। আমার মনে হয় এটি ভালো কিছু। এখন আমাদের দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো কী করে,” সাংবাদিকদের বলেছেন ম্যাক্রোঁ।

ইরানের গণমাধ্যমগুলো মঙ্গলবার ভোররাতে তেহরানে বিস্ফোরণ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক ব্যস্ত থাকার খবর দিয়েছে। নাতাঞ্জেও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সচল ছিল বলে জানিয়েছে তারা। এখানেই ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সব পারমাণবিক স্থাপনা, তেহরান থেকে যার দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার বলে জানিয়েছে আসরিরান নিউজ ওয়েবসাইট।

হোয়াইট হাউজের এক সহযোগী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালাতে যাচ্ছে এমন গুঞ্জন সত্য নয়। একই সুর শোনা গেছে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের কণ্ঠেও। ফক্স নিউজকে তিনি বলেছেন, ট্রাম্প এখনও ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তি করতে চাইছেন। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পদ রক্ষা করবে বলেও জোরের সঙ্গে বলেন তিনি।

ইরান ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর ইসরায়েলে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় প্রথম প্রহরেও বিমান হামলার সতর্ক সঙ্কেত ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ইরানের কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত তাদের দেশে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের সিংহভাগই বেসামরিক।

ইসরায়েল ২৪ বেসামরিকের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। তাদের অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মতরিচ বলেছেন, ইরানি হামলায় সৃষ্ট ক্ষতির কারণে প্রায় ৩ হাজার ইসরায়েলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে।

ট্রাম্পের মাধ্যমে চাপ দিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে তেহরান ওমান, কাতার ও সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

যুদ্ধবিরতির বদলে তারা পরমাণু আলোচনায় নমনীয়তা দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বলেছে দুটি ইরানি ও তিনটি আঞ্চলিক সূত্র।

“যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কূটনীতি নিয়ে আন্তরিক হন এবং যুদ্ধ অবসানে আগ্রহী হন, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। ইসরায়েলকে তার আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে, আর আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ না হলে, আমাদের প্রতিক্রিয়াও অব্যাহত থাকবে,” এক্সে এমনটাই লিখেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।

সোমবার নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির হুমকি দূর করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

“এটা যদি অন্যভাবে অর্জন করা যায়, তাহলেও ভালো। কিন্তু আমরা ৬০ দিনের সুযোগ দিয়েছিলাম,” বলেছেন তিনি।

এর ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রথম দিন শুক্রবার ট্রাম্প রয়টার্সকে বলেছিলেন, তিনি ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের চুক্তিতে পৌঁছাতে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলেন, কিন্তু চুক্তি হওয়া ছাড়াই ওই সময় পেরিয়ে গেছে।

তেহরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবং পরমাণু অস্ত্র বানানোর কোনো লক্ষ্যই তাদের নেই।

নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া এবং যুদ্ধের কারণে আকাশসীমা বন্ধ থাকায় চীনের দূতাবাস তার দেশের নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব স্থলসীমান্ত দিয়ে ইসরায়েল ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।

রয়টার্স লিখেছে, সোমবার ইসরায়েল ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে তুমুল হামলা চালালে তেহরান-তেল আবিবের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বেড়ে যায়।

পরে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বিবিসিকে জানান, তার ধারণা ইসরায়েলি হামলায় নাতাঞ্জ কেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং আনুমানিক ১৫ হাজার সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস হয়েছে। তবে ইরানের ফরদো পরমাণু কেন্দ্র মোটাদাগে অক্ষতই আছে।

ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে ইরান পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হলে সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলি হামলা থেমে যাবে।

“যেমনটা আমি বলে আসছি, আমার মনে হয় একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, বা কিছু একটা হবে, কিন্তু একটা চুক্তি হবে, এবং আমি মনে করি সেখানে স্বাক্ষর না করা ইরানের জন্য বোকামি হবে,” সোমবার জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

মার্কিন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়ে জি৭ নেতাদের খসড়া বিবৃতিতে ট্রাম্প স্বাক্ষর করবেন না। ওই খসড়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স