বাংলাদেশে সুসংবাদের বড় আকাল। পত্রিকা, টিভি এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভালো খবর একটা চোখে পড়েনা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য নেই। ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’র মতো নতুন আরেকটা উৎপাত সমাজ জীবনকে যেমন অস্থির করে তুলেছে, তেমনি রাজনৈতিক সংকটও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্বাচন, সংস্কার, বিগত সরকারের বিচার কোনটা আগে হবে, কোনটা পরে হবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন। সবমিলিয়ে দেশের একটা হযবরল অবস্থা। দাবি, আন্দোলন আর অবরোধের জ্বালায় জনজীবন অস্থির।
অন্যদিকে পৃথিবী নামক গ্রহটাও ভালো আছে বলে মনে হয় নাা দেশে দেশে যুদ্ধ, মৃত্যু, হানাহানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছেই। সেখানেও মানুষ মরছে, স্থাপনা ধ্বংস হচ্ছে। ও দিকে ইসরাইলের চতুর্মুখী হামলায় গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত। আর কিছুদিন এভাবে চললে গাজা বলে আর কোনো জায়গার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষের অস্তিত্বও থাকবে না। এরই মাঝে ইসরায়েল-ইরাক যুদ্ধ। মরছে মানুষ। ধ্বংস হচ্ছে সভ্যতা। মধ্যপ্রাচ্য সংকট যেভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, তাতে বিশ্বজুড়েই না যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এমন অশান্ত ও অস্থির পরিবেশে যখন স্বস্তি পাওয়ার মতো কোনো খবর নেই, সেই পরিবেশে ঠিক মরুভূমিতে একটু মরুদ্যানের মতো একটা ছোট সংবাদ কিছুটা শান্তি এবং স্বস্তির জোগান দিয়ে গেল। ঠিকানার ১১ জুন সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে সেই স্বস্তির খবরটি। শিরোনাম : ‘যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে’। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত। ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত এই খাতে কর্মরতদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী কর্মী। বাংলাদেশের জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জোগান দেয় এই পোশাকশিল্প খাত। তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় একক বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে শত সংকটের মাঝেও যখন শোনা যায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের কদর বেড়েছে, সে সংবাদ তখন চৈত্রের খরদুপুরে এক পশলা বৃষ্টির মতো শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়।
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ‘গত দুই বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গড়ে ৭৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ভিয়েতনাম চীনের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। গত জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ২৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালের একই সময়ের চেয়ে আমদানি বেশি হয়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় বাংলাদেশ ভারতেরও উপরে রয়েছে।’
একটি ‘বিশেষ সময়ে’ পোশাক শিল্প খাতের আয় বেশি হওয়াই বড় কথা নয়। সারা বছর ধরেই এই আয় এবং প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাটাই বড় কথা। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা খুব জরুরি। বাংলাদেশ আন্দোলন আর জ্বালাও-পোড়াওয়ের দেশ। দাবি আদায়ের নামে কথায় কথায় সড়ক অবরোধের ফলে সময়মতো বিদেশি অর্ডার সরবরাহ করা যায় না। এতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদেশের গ্রাহকদের সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে সম্ভাবনাময় বাজার নষ্ট হয়। সেকারণে রপ্তানি শিল্প খাতকে যে করেই হোক হরতাল-অবরোধের বাইরে রাখতে হবে এবং সব সময়, সব মৌসুমে রপ্তানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আজকের সুখবর সব সময়ের জন্য সুখবর হবে। একটি দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজÑ সেটিই কামনা করে।