নিউইয়র্কে হেইট ক্রাইমের ঘটনা নতুন কিছু নয়। দিন দিন এই অপরাধ বেড়েই চলেছে। এই অপরাধের শিকার হচ্ছেন অনেক নারী-পুরুষ। হেইট ক্রাইমের শিকার হয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অবহিত করছেন। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করার জন্য কমিউনিটির মানুষেরা যেমন সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছেন, তেমনি সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও কাজ করছেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও হেইট ক্রাইম বন্ধ করার জন্য কাজ করছেন। তার পরও এটি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্প্রতি সাবওয়েতে হিজাব পরা এক মুসলিম নারীর ওপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদালতে বিচার চলছে। নাভেদ দুরনি নামের ওই হামলাকারী দোষী সাব্যস্ত হলে তার ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি হামলা করার আগে ওই নারীর মাথায় হিজাব দেখে জানতে চান, তিনি মুসলিম কি না। মুসলিম জানার পরই তিনি আক্রমণ করেন। তাকে বেদম কিল-ঘুষি মারেন। এতে ওই নারীর নাকের হাড়ে ফ্র্যাকচার, অরবিটাল হাড়ে ফ্র্যাকচার দেখা দেয়। এরপর স্থানীয় একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা করা হয়। পরে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস থেকে জানানো হয়, হেইট ক্রাইম করার অভিযোগে জ্যামাইকার এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাবওয়েতে মুসলিম নারীর ওপর হামলা করার কথা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন আসামি। জ্যামাইকার ১০৬ অ্যাভিনিউয়ের ৩৪ বছর বয়সী দুরনির বিরুদ্ধে হেইট ক্রাইম হিসেবে প্রথম ডিগ্রিতে হামলা, অ্যাসাল্ট হিসেবে প্রথম ডিগ্রিতে হামলার দুটি অভিযোগ, দ্বিতীয় ডিগ্রিতে হামলার দুটি অভিযোগ, প্রথম ডিগ্রিতে তীব্র হয়রানি এবং দ্বিতীয় ডিগ্রিতে তীব্র হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি শীর্ষ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। গত ১৯ জুন বিচারক মাইকেল কাটজ আসামিকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন এবং ২৩ জুন তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেলিন্ডা কাটজ বলেন, নাভেদ দুরনির বিরুদ্ধে ১৮ জুন ভোরে ই-ট্রেনে একজন মুসলিম মহিলাকে বারবার ঘুষি ও লাথি মারার অভিযোগে প্রথম ডিগ্রিতে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ এবং তদন্ত অনুসারে ১৮ জুন আনুমানিক ভোর ৪টার দিকে কুইন্স বুলেভার্ড এবং ৭৫তম অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে একজন মহিলা কুইন্সগামী ই-ট্রেনে চড়ছিলেন, তখন আসামি নাভেদ দুরনি তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কোথা থেকে এসেছেন এবং তিনি কি মুসলিম। মহিলাটি দুরনিকে বলেন যে তিনি একজন মুসলিম এবং আসামি তারপর তাকে একাধিকবার চড় ও ঘুষি মারেন এবং তার ভারী কাজের বুট দিয়ে মহিলার মুখে লাথি মারেন। এরপর দুরনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক ব্লক দূরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
মেলিন্ডা কাটজ আরও বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় বা বৈষম্যের শিকার যেকোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ধর্মান্ধতা, ঘৃণা এবং সহিংসতার জন্য অপরাধীদের করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে।