Thikana News
০৫ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
ভুঁইফোঁড় ও নামস্বর্বস্ব স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশ গমন, স্থায়ী হওয়ার প্রলোভন

আদম ব্যবসার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম 

আদম ব্যবসার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম 
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসা এক প্রকার বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আবার চালু হয়েছে ভিসা কার্যক্রম। আর এ সুযোগে আগের মতই প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে অবৈধ আদম ব্যবসায়ীরা। তারা স্টুডেন্ট ভিসার গ্যারান্টি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এমনকী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার প্রলোভন দিতে শুরু করেছে। বিদেশ যাওয়ার এই সহজ প্রলোভনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। 
সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সহজ ছিল। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও হাজার হাজার বাংলাদেশি তরুণ স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। এজন্য তারা বিভিন্ন এজেন্সিকে মোটা অংকের অর্থও দিয়েছেন। কিন্তু এদেশে আসার পর স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নিতে গিয়ে স্টুডেন্ট স্ট্যাটাস হারিয়ে অবৈধ অভিবাসী হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউন শুরু হলে চরম বিপদ নেমে আসে তাদের ওপর, যার রেশ এখনো চলছে। ওয়ার্ক পারমিট না থাকলেও অনেকে কাজ করতেন। এখন সেই কাজ হারিয়ে আর্থিক কষ্টে আছেন। করছেন মানবেতর জীবনযাপন। 
যারা স্টুডেন্ট স্ট্যাটাস ধরে রেখেছেন তারাও অবৈধভাবে কাজ করতেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু অভিবাসী বিরোধী অভিযান ও কঠোর নীতির কারণে তারা চরম দুঃশ্চিন্তা ও বিপাকে পড়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী কর্মস্থলে যেতে আতঙ্কে রয়েছেন। বিশেষ করে এক স্টেটের ভার্সিটিতে পড়ে অন্য স্টেটে থেকে কাজ করছেন এবং নির্দিষ্ট ঘণ্টার অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন, সে সকল শিক্ষার্থীরাই বেশী বিপাকে রয়েছেন। এতে এখানে থাকা শিক্ষার্থীরা অভিবাসনবিরোধী ধরপাকড়ের আশঙ্কার পাশাপাশি টিউশন ফি’র খরচ মেটাতে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছেন। 
নাম পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তাদের অনেকেই স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে শর্তকে পাশ কাটিয়ে এখানকার ব্যয় নির্বাহের জন্য কাজ করছেন। সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নে আইস এর অভিযান শুরুর পর থেকে তারা এখন কাজ করতে পারছেন না। জরিমানার ভয়ে চাকরি দিচ্ছে না বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া যারা অন্য স্টেটের ভার্সিটির শিক্ষার্থী হয়ে নিউইয়র্কে কাজ করছেন এবং বসবাস করছেন তারা এখন পুরোপুরি কাজ বন্ধ রেখেছেন ভয়ে। কারণ তারা অনলাইনে ক্লাস করার পাশাপাশি নিউইয়র্কে বিভিন্ন চেইন ফুড স্টোর, গ্রোসারিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এতে ভার্সিটির টিউশন ফি ও আবাসনসহ যাবতীয় খরচের সংস্থান হতো এ আয় থেকে। এখন কাজে যেতে না পারায় আর্থিক সংকটে চরম হতাশায় রয়েছেন। গত কয়েকদিন আগে স্টুডেন্ট শর্ত ভঙ্গের দায়ে তিন শিক্ষার্থীকে ডিপোর্টেশনের খবরে তাদের আতঙ্ক আরো প্রকট হয়েছে। এতে তাদের পড়াশোনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে খরচ হওয়ার কথা ১২-১৪ লাখ টাকা। দেশটিতে আসার পর নিয়মিত সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে হয়। অথচ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আসতে অবৈধ এজেন্সির খপ্পড়ে পড়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তিন-চার গুণ টাকা খরচ করেছেন। তাদের চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। প্রলোভন দেওয়া হয়েছে গ্রিনকার্ডেরও। অথচ তারাই এখন মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। 
নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত একজন শিক্ষার্থী বলেন, ৪০ লাখ টাকা খরচ করে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। গত কয়েক মাস ধরে আইসের অভিযান ও গ্রেপ্তার দেখে ভয়ে আছি। শুধু অবৈধ অভিবাসী না, স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত ভঙ্গের দায়ে শিক্ষার্থীরাও গ্রেপ্তার হতে পারেন এমনটা শুনছি। এরকম পরিস্থিতিতে এখানে থেকে পড়াশোনা চালানোও অসম্ভব।
বাংলাদেশ থেকে আসা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ব্যাঙের ছাতার মত অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ভিসা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর তারাও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিল। সম্প্রতি চালুর ঘোষণায় আবার সরব হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠান বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। আর এই অর্থ জোগাড় করতে পরিবারগুলোকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশেষ করে বহু পরিবার সন্তানের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সম্পত্তি বিক্রি করেছেন, এমন নজির অহরহ। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘সোনার হরিণ’ ধরতে বড় চাকরি ছেড়ে সঞ্চিত অর্থ খরচ করেছেন। এখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে চরম বিপাকে পড়েছেন। 
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসা কার্যক্রম ফের চালুর ঘোষণায় আবারো ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। তবে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে অবৈধ আদম ব্যবসার কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন এজন্সির ওপর নজর রাখছে। ঢাকার কয়েকটি প্রসেসিং সেন্টারে অভিযান চালিয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও ভিসা নীতি কঠোর করেছে। এখন থেকে ভিসার জন্য আবেদনকারীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য ওপেন রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পলিটিকোর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য আবেদনকারী সকল বিদেশি শিক্ষার্থীর সোশাল মিডিয়া যাচাইয়ের কথা বিবেচনা করছে। সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে দেখে কোনো ধরনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব আছে কি না, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান কিংবা দেশটির প্রতিষ্ঠার মূলনীতির প্রতি।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নির্দেশনার আওতায় পড়বে এফ ভিসা। যেটি মূলত শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এম ভিসা ও জি ভিসাও (কারিগরি শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য) এর প্রভাবের মধ্যে পড়বে। যেসব আবেদনকারী নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রোফাইল প্রাইভেট রাখবেন, তাদের গোপন কিছু লুকানোর চেষ্টা করছেন বলে সন্দেহ করা হতে পারে।
বাংলাদেশের শ্রমবাজার দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে এক শ্রেণির ট্রাভেল এজেন্সি নামধারী প্রতারকচক্র সাধারণ মানুষকে বিদেশগমনের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দিচ্ছে। বৈধ কাগজপত্র ও রিক্রুটিং লাইসেন্স ছাড়াই এই চক্র বিদেশে পাঠানোর নামে যুব সমাজকে সর্বস্বান্ত করছে।
জানা গেছে, দেশজুড়ে অসংখ্য অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সি ও ‘স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং’ প্রতিষ্ঠান নিয়মবহির্ভূতভাবে তরুণদের বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো রিক্রুটিং লাইসেন্স নেই। অথচ মিষ্টি কথার জালে জড়িয়ে সাধারণ পরিবারগুলোর শেষ সম্বল কেড়ে নিচ্ছে তারা। 
দেশের বেকার যুবকদের টার্গেট করে এ চক্র মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে বিদেশ পাঠানোর নামে বিপদে ফেলে দেয়। সাধারণত এই প্রতারকরা নামী-দামি এলাকায় অত্যাধুনিক অফিস ভাড়া নেয় এবং উচ্চবেতন, সহজ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করে।
এই চক্রের অন্যতম একটি ধাপ হলো  স্টুডেন্ট ভিসা’ বা স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং’ নামের আরেকটি প্রতারণার ফাঁদ। কিছু অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি শিক্ষার্থীদের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। শিক্ষার্থীরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়।
বিদেশে গমনেচ্ছুদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় ট্যুরিস্ট বা ভিজিট ভিসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে। দালালরা লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে, “অল্প খরচে ইউরোপ, আমেরিকা বা জাপানে যাওয়ার সুযোগ বলে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু এই ভিসাগুলোতে কাজ করার সুযোগ নেই, ফলে কর্মসংস্থানের পরিবর্তে প্রতারণার শিকার হয় তরুণরা।
গত ২ বছরে মন্ত্রণালয়ে দালালচক্রের বিরুদ্ধে সহস্রাধিক অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। ২০২৩ সালে মালয়েশিয়া, লিবিয়া ও ইউরোপে ফাঁদে পড়া ৫ শতাধিক বাংলাদেশির ফেরত আসার খবর মিলেছে।প্রতারকদের ফাঁদে পা দিলে পরিণতি ভয়াবহ হয়। অনেকেই বিদেশে পৌঁছানোর পর কাজ না পেয়ে বিপদে পড়ে যায়। কিছু ভুক্তভোগী জেল-জরিমানার মুখোমুখি হয়। কেউ কেউ অবৈধ পথে প্রবেশের কারণে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করে থাকে। অনেকে সব টাকা হারিয়ে পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়।
বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি এই পন্থায় লিবিয়া, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, লেবানন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসহ বিভিন্ন দেশে মানুষ পাঠাচ্ছে। এজেন্সিগুলো এখন ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউরোপে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে নতুন করে প্রতারণা করছে।

কমেন্ট বক্স