যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। হোয়াইট হাউসে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এই ঘোষণা দেন।
২২ জুলাই (মঙ্গলবার) সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছেন, নতুন এই শুল্ক একটি বৃহত্তর চুক্তির অংশ, যেখানে ফিলিপাইন মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেবে ও দুই দেশ সামরিকভাবে সহযোগিতা করবে।
ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও লিখেছেন, এটি একটি চমৎকার সফর ছিল, আমরা আমাদের বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছি। তবে এই চুক্তি সম্পর্কে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি ট্রাম্প।
এই পরিকল্পনা ফিলিপাইনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। যদি এটি কার্যকর হয়, তবে ফিলিপাইনের ওপর আরোপিত শুল্ক ট্রাম্পের এপ্রিলের প্রথম ব্যাপক বৈশ্বিক শুল্ক ঘোষণার সময় হুমকির চেয়েও বেশি হবে।
ট্রাম্প বলেছেন, শুল্ক আরোপের তার লক্ষ্য হলো যেসব নীতিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যায্য মনে করেন, সেগুলো বাদ দিতে দেশগুলোকে উৎসাহিত করা। তার এই পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য আলোচনার সূচনা করেছে।
এরপর থেকে ট্রাম্প কয়েকটি চুক্তির ঘোষণা করেছেন, যার মধ্যে যুক্তরাজ্য, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চুক্তিও রয়েছে। তবে, এই চুক্তিগুলোতে এখনো উচ্চ শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে, মূল সমস্যাগুলো উভয় পক্ষ দ্বারা অমীমাংসিত বা নিশ্চিত হয়নি।
নতুন শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প এখন ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন ও উচ্চ শুল্কের হুমকি দিচ্ছেন। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাসহ আমেরিকার সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাণিজ্য অংশীদার অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। একটি চুক্তির আশা কমে আসায় ইউরোপীয় কর্মকর্তারা সম্ভাব্য পাল্টা পদক্ষেপের পরিকল্পনা নিয়ে ক্রমশ একত্রিত হচ্ছেন।
২২ জুলাই (মঙ্গলবার) কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, জটিল আলোচনা চলছে, তবে ট্রাম্পের আগামী সপ্তাহের সময়সীমার মধ্যে একটি চুক্তি হবে কিনা তা নিয়ে তিনি কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। অন্টারিওতে প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দেখব। আমেরিকানদের উদ্দেশ্য অনেক, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পরিবর্তিত হয়... তবে এটা স্পষ্ট যে কানাডীয় সরকার একটি খারাপ চুক্তি মেনে নেবে না।
শুল্কের অর্থনৈতিক প্রভাব
ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনাগুলো যখন তিনি প্রথম এপ্রিলে ঘোষণা করেছিলেন, তখন ব্যাপক আর্থিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। তার পরিকল্পনায় ১৯০০ সালের শুরুর দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছিল।
পরবর্তীতে, ট্রাম্প পরিকল্পনার কিছু কঠোর পদক্ষেপ স্থগিত করেন, তবে বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক ও নির্দিষ্ট কিছু পণ্য যেমন গাড়ি, তামা, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর উচ্চ শুল্ক বহাল রাখেন।
তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাজার শান্ত হওয়ায় ও মার্কিন অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকায় ট্রাম্প আবারও উচ্চ শুল্কের পরিকল্পনায় ফিরে এসেছেন। তিনি বিভিন্ন দেশকে চিঠি পাঠিয়ে নতুন শুল্কের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন, যা তিনি বলেছেন ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এই মাসের শুরুতে ফিলিপাইনের নেতাদের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি দেশটির পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন, যা এপ্রিলে ছির ১৭ শতাংশ।
ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের একটি তুলনামূলকভাবে ছোট বাণিজ্য অংশীদার। গত বছর দেশটি আমেরিকায় প্রায় এক হাজার ৪২০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ছিল গাড়ির যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, বস্ত্র ও নারকেল তেল।
এদিকে কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন শুল্কের খরচ বাড়ছে। মঙ্গলবার জেনারেল মোটরস জানিয়েছে, শুল্কের কারণে তিন মাসে তাদের ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ হয়েছে। এর আগে জিপ গাড়ির নির্মাতা স্টেলান্টিস জানিয়েছিল, এই পদক্ষেপের কারণে তাদের ৩০ কোটি ইউরো (প্রায় ৩৪ দশমিক ৯২ কোটি ডলার) খরচ হয়েছে।
ঠিকানা/এসআর