ইরানের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে ২৫ জুলাই তারিখটি গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হবে। এই দিন, একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে উপসাগরীয় দেশটি। এর আগে কেবল আটটি দেশ এ যোগ্যতা অর্জন করেছে।
শুক্রবার রাশিয়ার সয়ুজ লঞ্চারের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ স্যাটেলাইট নাহিদ-২ মহাকাশে পাঠায় ইরান।
পুরোপুরি ইরানে নির্মিত এই প্রপালশন মডিউলে উচ্চ-ক্ষমতার হট গ্যাস থ্রাস্টার, কম্পোজিট ফিউয়েল ট্যাংক, উচ্চ-চাপের ভালভ এবং নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইরানি দৈনিক তেহরান টাইমস।
ইরানিয়ান স্পেস এজেন্সি বা আইএসএ কর্মকর্তাদের মতে, নাহিদ-২ স্যাটেলাইটটি নিজস্ব প্রপালশন সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত, যা কক্ষপথের উচ্চতা সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত সামঞ্জস্য করতে পারে এবং অরবিটাল ডিকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি স্যাটেলাইটটি রাশিয়ার একটি কসমোড্রোম থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
একশ ১০ কেজি ভরের স্যাটেলাইটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঁচশ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবীকে আবর্তন করবে। এর জীবনকাল ধরা হয়েছে দুই বছর।
এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকে মহাকাশে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য ইরানের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে স্যাটেলাইট যোগাযোগ এবং পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্যাটেলাইটগুচ্ছ গঠনের ক্ষেত্রে।
ইরানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলছে, “নাহিদ-২ জাতীয় স্যাটেলাইট যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, দেশীয় এলইও নক্ষত্রমণ্ডলী গঠন এবং ভবিষ্যতের উচ্চ কক্ষপথ মিশনের প্রস্তুতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
আইএসএ প্রধান হাসান সালারিয়ে এই বছরের শুরুর দিকে বলেছিলেন, ইরান ২০২৫ সালে একাধিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে জাফর-১, পায়াম ও নাহিদ-২।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নাহিদ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের নকশা এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। ইরানের পরিকল্পনায় রয়েছে ভবিষ্যতে নিজস্ব লঞ্চ ভেহিকল ব্যবহার করে সেগুলো উৎক্ষেপণ করা।
নাহিদ-২ সফলভাবে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ইরান স্বতন্ত্রভাবে টেলিযোগাযোগ স্যাটেলাইটের নকশা, উৎপাদন ও পরিচালনা করতে সক্ষম এমন কয়েকটি দেশের তালিকায় নিজের নাম লেখাল।
তেহরান এ অর্জনকে জাতীয় বৈজ্ঞানিক স্থিতিস্থাপকতা এবং কৌশলগত অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে।
আমেরিকার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিক নিউজউইক এক প্রতিবেদনে লিখেছে, পারমাণবিক আলোচনা আবার শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মহাকাশ কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় পশ্চিমা শক্তিগুলো ইরানের অ্যারোস্পেস অগ্রগতিকে আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষত যেগুলো রাশিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
ঠিকানা/এসআর