সামনের দিনে জনগণ ইতিহাস সৃষ্টি করবে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ‘জনগণ এবং সেনাবাহিনীই’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় আগামী নির্বাচনে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে কতটা আশাবাদী—সাংবাদিকদের এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশের বর্তমান কাঠামো অনুসারে আমাদের ওভারনাইট পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ এ মুহূর্তে নেই। কিন্তু তাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে একটা জায়গা রাখতে হবে। তার সঙ্গে থাকবে অন্য বাহিনী। বিজিবি, আনসারসহ যাদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সেনাবাহিনী। তারা খুব সম্ভবত এক লাখ সদস্য নিয়োজিত করার জন্য একটা পরিকল্পনা করছে সরকারের অনুমতি নিয়ে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, জনগণই এবার সবচেয়ে স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে চায়, এটা তাদের প্রত্যাশা। সুতরাং যখন জনগণের প্রত্যাশা এরকম হবে যে, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, সুন্দর, একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করা নিজেদের ভোটাধিকার উৎসবের মতো করে প্রদান করা সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে। এখানে প্রার্থীর মানসিকতা ও ভোটারদের মানসিকতাই মুখ্য হবে। আমরা আশা করি, সামনের দিনে জনগণ এই ইতিহাস সৃষ্টি করবে। সবাই মিলে যদি আমরা নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ ও বিশ্বব্যাপী যাতে গ্রহণযোগ্যতা পায় সেরকম নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেই জায়গায় আমার মনে হয় না অন্য কোনো শঙ্কা থাকবে। তা ছাড়া এখন সার্ভিলেন্স হিসেবে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবে এবং সাংবাদিকদের যে ভূমিকা থাকবে, সেটা প্রণিধানযোগ্য।
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল ঐক্যবদ্ধভাবে, সবার মতামতের ভিত্তিতে। নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত ১২টি আইন, বিধি, বিভিন্ন রকমের নীতিমালা আছে। আরও কিছু নীতিমালা আছে আমি দেখেছি যেমন, পর্যবেক্ষক নিয়োগসহ মোট ১৭টি, আরপিও, ভোটার তালিকা প্রণয়ন আইন। এখানে ২৪১টি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এর বাইরে আমরা দলের পক্ষ থেকে অনেক সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো কিছু আইনের খুঁটিনাটি পরিবর্তন, কোথাও কয়েকটি শব্দ, কোথাও কয়েকটি লাইন পরিবর্তন। এগুলো মেজর কিছু নয়। এসব নির্বাচনের আগেই সংস্কার হয়ে যেতে পারে এবং হচ্ছেও তাই। ওখানে সংবিধান পরিবর্তন করতে হচ্ছে না। আশা করি সেই সংস্কারগুলো হয়ে যাবে। আর নির্বাচন পরিচালনার জন্য যেসব আইনকানুন, বিধি-বিধান আপগ্রেড করা দরকার সেটা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। আরপিওর ভেতরে বিভিন্ন রকমের কথা রয়েছে। যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে কী বোঝাবে। তার মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সংজ্ঞাটা বাদ দেওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছি সেটা ইনক্লুড করতে হবে, তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিতে হবে ইত্যাদি। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত দু-একটা সংস্কারের ক্ষেত্রে বিএনপি ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা মনে করি, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আর কোনো রকমের জটিলতা সৃষ্টি না হয় এবং নিরপেক্ষ স্বাধীন ও কার্যকর একটা নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় সেজন্যই এই প্রস্তাব। এই প্রস্তাবে কারও কোনো দ্বিমত নেই। ডিলিমিটেশনের ক্ষেত্রে একটা সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে আমরা সম্মত হয়েছি যে, প্রতি ১০ বছর পর অথবা প্রতি আদমশুমারি পর যেটা আগে ঘটবে সেই সময়ে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটির মধ্য দিয়ে নির্বাচনী সংসদীয় এলাকা পুনর্নির্ধারিত হবে। সেটা পরে, এবার প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ডিলিমেট হচ্ছে।
বিএনপি মধ্যপন্থার দল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের দক্ষিণপন্থাও না, উত্তরপন্থাও না। আমরা বাংলাদেশের পন্থা, আমরা মধ্যপন্থিতে বিশ্বাস করি। সেজন্য বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল-শক্তি এবং সব জনগণের প্রতিনিধিত্বকে নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের সঙ্গে কথা বলছি। কারণ আমরা একটা গণমানুষের দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে মনে করি এবং সেই হিসেবে সব দলের নেতাদের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা করতে চাই।
ঠিকানা/এএস