Thikana News
২২ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

সরকারের পতন ঘটিয়েই ঘরে ফিরব : মির্জা ফখরুল

সরকারের পতন ঘটিয়েই ঘরে ফিরব : মির্জা ফখরুল ছবি সংগৃহীত
রাজশাহীতে তারুণ্যের রোডমার্চে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই দেশ ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার প্রধান দায়িত্ব আপনাদের (সাধারণ মানুষের)। আমাদের তিন সহযোগী সংগঠন যে আন্দোলন শুরু করেছে, সেটি সারা দেশে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা আগামী ১৮ তারিখে আমাদের পরবর্তী আন্দোলনের ঘোষণা দিব। আমরা রাজপথে নেমেছি, এখান থেকে ফিরে যাব না। এই সরকারের পতন ঘটিয়েই আমরা ফিরে যাব।’

১৭ সেপ্টেম্বর রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চ চত্বরে রাজশাহী বিভাগের ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের রাজশাহী বিভাগের আয়োজনে ‘তারুণ্যের এই রোডমার্চ’ অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার নির্বাচন নিয়ে আবার পাতানো খেলা খেলতে চায়। আমরা আর পাতানো খেলা খেলতে দিব না। আমাদের সব নেতাদের জেলে পুরে দিচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই তাদের (আওয়ামী লীগের) মনমতো করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন। তাই ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন একটি সংগ্রাম শুরু করেছে। সেই সংগ্রামকে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে মানুষকে জাগিয়ে তোলা এবং মানুষকে এক দফার আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা।’

তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আসবে কি আসবে না তার প্রশ্ন। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারব কি না জাতির সামনে আজকে সেই প্রশ্ন। আওয়ামী লীগের এই সরকার অন্যায়, অবৈধ ও বেআইনিভাবে ১৭ বছর ধরে জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে। আমাদের সমস্ত অর্জনকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা ১৯৭১ সালে গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম, তাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা ’৯০ সালে স্বৈরাচারকে বিদায় করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলাম, সেটাকেও তারা আজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের যে স্তম্ভগুলো আছে, আদালত, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পার্লামেন্ট সবকিছুকে তারা নষ্ট করেছে। এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সবচেয়ে ভয়ংকর যেটি করেছে, এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের নয়নের মণি, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে ১০ বছর সাজা দিয়ে তাকে আটক করে রেখেছে এবং আজ তিনি অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

মির্জা ফখরুল চারঘাটের ওসির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এলাকায় থানার ওসি বলেছেন তাকে নির্বাচন করার জন্য সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে, মন্ত্রীর নির্বাচন করার জন্য। মন্ত্রী যা বলবে আমি তাই শুনব। সারা দেশেই এই পরিকল্পনা। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের মানুষ সেই পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দিবে। মানুষ জেগে উঠেছে।’

এর আগে বেলা ১১টায় বগুড়া চারমাথায় বিএনপির পূর্বঘোষিত তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন উদ্বোধন করেন দলটির মহাসচিব। এরপর শুরু হয় রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা। বগুড়া থেকে শুরু হওয়া এই রোডমার্চ সান্তাহার, নওগাঁ হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটারের এ রোডমার্চের নেতৃত্ব দেন বিএনপির মহাসচিব। গাড়িবহর থেকে হাত নেড়ে উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা জানান তিনি। পথিমধ্যে নওগাঁ সদরে এবং নওগাঁর মান্দা উপজেলায় যাত্রাবিরতি করে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারুণ্যের রোডমার্চ রাজশাহী শহরের লালনশাহ মুক্তমঞ্চের সামনে পদ্মার তীরে এসে অবস্থান নেয়। সেখানে আগে থেকেই করে রাখা মঞ্চে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে বিশেষ অতিথি থেকে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সমাবেশে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে আমাদের যে আন্দোলন সেই আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। এই আন্দোলনের সফলতা আর বেশি সময় নাই। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্বৈরাচার, অবৈধ, অনির্বাচিত শেখ হাসিনাকে বিদায় দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশের মানুষ ভোট চোরকে ধরার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোট চোরদের সময় শেষ, জনগণের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ ভোট চোরদের একজন একজন করে তালিকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজশাহীতে যারা ভোট চুরির সাথে বিগত দিনে যারা জড়িত ছিল আর আগামী দিনে ভোট চুরির সাথে জড়িত হতে যাচ্ছে, আপনারা তাদের তালিকা করবেন। সরকারি কর্মকর্তা হোক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হোক, বিচার বিভাগের সদস্য হোক, লুটেরা ব্যবসায়ী হোক - এদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এরা হচ্ছে একটি ‘রেজিম’। বাংলাদেশ কিন্তু আওয়ামী লীগ শাসন করছে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাতে নাই। দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, দলবাজ সরকারি কর্মকর্তা, দুর্নীতিবাজ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা এবং দলবাজ কিছু বিচারকের হাতে বাংলাদেশের শাসন চলে গেছে। এরা সবাই মিলে একটি ‘রেজিম’ করেছে। সুতরাং এই লড়াই হচ্ছে এই ‘রেজিমের’ বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ দল অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগে কোনো দল এখন নাই। সুতরাং আওয়ামী লীগ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নাই। আমাদের চিন্তা হচ্ছে, এই রেজিমকে কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। এই রেজিমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কোনো রেজিমের ক্ষমতায় থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সবচেয়ে সুখবর হচ্ছে, আমাদের নেতাকর্মীরা প্রাণের বিনিময়ে আগামী নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হতে বাধ্য করবে।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, জেলার সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার প্রমুখ।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স