আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গত দুই বছরে কম করেও চারবার প্রকাশ্যে বলেছেন, সংগঠনগতভাবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আইনগত নিষিদ্ধ হচ্ছে না জামায়াত প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। বাস্তবে আইন মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কাজে হাতই দেয়নি। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন সামনে রেখে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পথে যাবে না। এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে জামায়াতকে সংগঠনগতভাবে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা তাহলে সরকারি মহল থেকেই দেওয়া হয়েছে কেন? আসলে জামায়াতকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কার্যকর থ্রেট হিসেবেই এ কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হয়। জানা যায়, জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গে বিদ্যমান সমঝোতা থেকে দূরে সরিয়ে এনে নির্বাচনমুখী করাই সরকারের উদ্দেশ্য। আদালত কর্তৃক জামায়াতের নির্বাচনী প্রতীক দাঁড়িপাল্লা খারিজ করার পর এ প্রতীক জামায়াতকে ফিরিয়ে দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সমমনা নেজামে ইসলাম বা অন্য কোনো ইসলামি দলের প্রতীক নিয়ে তাদের সঙ্গে বৃহত্তর সমঝোতায় নির্বাচন করতে হবে জামায়াতকে।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে বিদেশি প্রভাবশালী মহলের চাপ রয়েছে। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে এ ব্যাপারে মার্কিন সরকারের আগ্রহের কথা সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়। সংগঠনগতভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে দলটির অনেক নেতাকর্মী, সংগঠক জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলতে পারে। নতুন নতুন বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নিষিদ্ধঘোষিত কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন সংগঠিত করে এদের বিভিন্ন পর্যায়ে। নেতৃত্বে রয়েছেন জামায়াতের সঙ্গে ইতিপূর্বে সম্পৃক্ত নেতারা। জামায়াত নেতৃত্বের অজ্ঞাতে তারা বিভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলেছেন এমন মনে করার বিশ্বাসযোগ্য কারণ নেই। এটাই জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করার একটা বড় কারণ বলে জানা যায়। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে সরকার ও সরকারি দলের মধ্যে মতদ্বৈধতা বরাবরই। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ও তার নেতারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা নেন। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বহু মানুষকে হত্যা করে জামায়াত, ইসলামী ছাত্রশিবির। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। সরকার আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে অপরাধী জামায়াত নেতাদের বিচার ও শাস্তি বিধান করে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। কিন্তু সংগঠনগতভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারেনি আইনগত জটিলতায়। বিদ্যমান আইনে সে বিধান নেই। এ জন্য আইনগত সংশোধনী আনতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইনমন্ত্রী সে কথাও বারবার বলে আসছেন। আর ভেতরে ভেতরে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। বিএনপি সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, জামায়াত যাতে তাদের ভাষায় সরকারের ফাঁদে পা না দিয়ে নির্বাচনমুখী না হয়। জামায়াত ও অপরাপর ইসলামি সংগঠনগুলোকে হাতে রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর করা ও সরকারকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করাই তাদের উদ্দেশ্য।
 
                           
                           
                            
                       
    
 
 


 ঠিকানা রিপোর্ট 
                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
