Thikana News
০৩ নভেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫





 

রাজনীতিতে রহস্যময় হাওয়া

রাজনীতিতে রহস্যময় হাওয়া





 
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে রহস্যময় হাওয়া তৈরি হয়েছে। নির্বাচন এক মাসের কম সময় থাকলেও এখনো দেশের বড় অংশে ভোট উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিএনপিসহ ভোটে যায়নি অন্তত ৬৪টি রাজনৈতিক দল। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না, তা নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। দফায় দফায় বৈঠক করেও আসন বণ্টন নিয়ে নিজেদের  মধ্যে সমঝোতায় আসতে পারেনি আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরা। বিদেশিরা আপাতত চুপ আছে বলে মনে হলেও তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে অর্থনীতির সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। গার্মেন্ট ও মানবাধিকার নিয়ে দেশে বড় চাপ তৈরি হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতিতে পর্দার আড়ালে নানা অজানা শঙ্কার খবর উড়ছে।
এদিকে জাতীয় পার্টি আসন্ন নির্বাচনে থাকবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও জাতীয় পার্টি এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছুই বলেনি। বরং তারা এখন পর্যন্ত বলছে, নির্বাচনে থাকবে। তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, যেকোনো দলের নির্বাচনে থাকা না থাকা রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত। তারা সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এরই মধ্যে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন, জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট না করতে। আবার জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাও করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও।
এ অবস্থায় এটা সুস্পষ্ট, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে এখনো দ্বিধার মধ্যে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনে না থাকে, তাহলে বাংলাদেশে প্রধান চারটি রাজনৈতিক দলের তিনটিই নির্বাচন থেকে দূরে থাকবে। জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচন থেকে সরে যায়, তাহলে এই নির্বাচনের তাৎপর্য কী হবে, জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবেÑএ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলাপ-আলোচনা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, এখন নির্বাচন নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন জমিয়ে দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি মনে করছে, যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আওয়ামী লীগ বসিয়ে না দেয়, সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সারা দেশে ভরাডুবি ঘটবে। তিন-চারটি আসন ছাড়া তাদের জিতে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি মনে করছে, অসম্মানজনক পরাজয়ের চেয়ে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই বেশি বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এই বিবেচনা থেকে তারা নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখতে পারে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত যদি জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, তাহলে এটি একতরফা নির্বাচন হবে এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পরিণত হবে। এ রকম নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। সে ক্ষেত্রে হয়তো সরকার সাংবিধানিক ধারার জন্য একটি নির্বাচন করবে। কিন্তু এরপর তাকে আবার রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে আরেকটি নির্বাচনের পথে হাঁটতে হবে। তবে বিভিন্ন মহল মনে করছেন, জাতীয় পার্টি ছাড়াও বহু রাজনৈতিক দল যেমন তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। কাজেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ না করলে শেষ বিচারে তাদেরই ক্ষতি হবে সরকারের চেয়ে। নির্বাচনে না গেলে জাতীয় পার্টি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়তে পারে।
অন্যদিকে টানা তিন নির্বাচনে নির্দিষ্ট কিছু আসনে শরিকদের ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেসব আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ভর করে নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়েছিল জোটসঙ্গীরা। দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি না বাড়ায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শরিকদের চাওয়া অনুযায়ী আসনে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। প্রধান দলের এই অনড় অবস্থানে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে জোটসঙ্গীদের। তবে তারা এখনো প্রকাশ্যে কিছু বলছে না।
রাজনীতিতে চোখ রাখা নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, কূটনৈতিক প্রেসক্রিপশনে বিএনপিসহ অন্যান্য সরকারবিরোধী দল আগামী ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাবে। বিশেষ করে, অবরোধ থেকে তারা পিছু হটবে না। এর মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে নির্বাচনী ৩০০ আসনেও তারা কর্মসূচি দেবে। আগামী ১৭-১৮ ডিসেম্বর থেকে কর্মসূচিতে নতুনত্ব আসতে পারে। এরপর তারা জামায়াতসহ ইসলামী দল, বাম-ডান সবাইকে নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে। তবে তার আগে আত্মগোপনে থাকা নেতারা প্রকাশ্যে আসতে পারেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। সরকার যদি বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করেও, তবু বিএনপি সুনির্দিষ্ট ছক থেকে পিছু হটবে না। তাদের ভাষ্য, বিদেশিদের চাপ অব্যাহত থাকবে। তারা কখন চূড়ান্ত আন্দোলনে একসঙ্গে সব দলকে নিয়ে মাঠে নামবে, তার বড় ধরনের বার্তা পাবে। হাইকমান্ডের ভাষ্য, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ টিকতে পারবে না। সরকারকে নির্বাচনের আগে-পরে বিদায় নিতে হবে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, গার্মেন্ট ও মানবাধিকার বিষয় নিয়ে দেশে বড় চাপ তৈরি হতে পারে। ভোটের আগে-পরে যুক্তরাষ্ট্র তার সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মেলাতে পারে অন্যান্য বন্ধুদেশ। ২০১৪-১৮ সালের মতো এবার ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনী ট্রেন পার হতে পারবে না। অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন না হলে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে রাজনীতিতে ঝড় বয়ে যাবে। যার প্রতিটি ছায়া দেশের সব নাগরিকের ওপরও পড়তে পারে। যে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে, তা মোকাবিলা করার জন্য এখনো দুটো পথ খোলা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। 
সরকার যদি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে তিন মাস ভোট পিছিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্যে পুনঃ তফসিল দেয়, তাহলে আগাম ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করা যাবে। না হলে বিরোধীরা সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে মাঠে নামতে পারে। অর্থনীতিতে যে ঝড় আসবে, তাতে দেশের ব্যবসায়ীরা পথে বসে যেতে পারেন। 
অর্থনীতিতে ক্ষতিকর দেশের তালিকায়ও বাংলাদেশ পড়ে যেতে পারে। এসব কিছুর মধ্যে রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর যে সুনামি বয়ে যাবে, তার হাওয়া দেশের সব সেক্টরে পড়তে পারে বলেও তাদের ধারণা। 

কমেন্ট বক্স