ধর্মীয় সংগঠনগুলো রাজনৈতিক ও আদর্শিক কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সহযোগী ছিল। সরকারের পতন ঘটাতে ব্যর্থতা ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়ে যাওয়া এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসলামি সংগঠনগুলো বিএনপি-ঘেঁষা পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে ক্রমান্বয়ে সরে আসছে।
কয়েকটি ইসলামি সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসতেও তারা অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত সপ্তাহে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রিজভী তাদেরকে বিএনপি কার্যালয়ে এক বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি, জোট শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির প্রসঙ্গ মুখ্য আলোচনার বিষয় ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু দলগুলো, বিশেষ করে ইসলামি দলগুলো এতে শরিক হয়নি। শফিউল আলম প্রধানের জাগপা, ব্যারিস্টার আন্দালিবের বিজেপি, ন্যাপসহ আরও কয়েকটি গণতান্ত্রিক দল অনাগ্রহ প্রকাশ করে পরে এ বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা বলেছে। ধর্মীয় সংগঠনসমূহ, এমনকি জামায়াতে ইসলামীও আরও পরে বৈঠকে বসার অনুরোধ জানিয়েছে। তারা বৈঠকের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেনি। তবে এ পর্যায়ে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। বিএনপির নেতারা জামায়াতের এ আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর পেছনের রহস্য উদ্্ঘাটনের চেষ্টা করছেন তারা। সরকারের সঙ্গে জামায়াতের গোপন বোঝাপড়া রয়েছে বলেই তারা মনে করেন। নির্বাচনের আগে বিএনপির সমাবেশ ভণ্ডুল করা হলেও জামায়াতকে নির্বিঘ্নে আরামবাগে সভা করতে দেওয়া, জামায়াতের নেতাকর্মীদের অপেক্ষাকৃত অনেক কম সংখ্যায় গ্রেফতার এবং তাদের অনেকেরই জামিন লাভের ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিএনপির নেতারা মনে করেন। দলীয় প্রতীক ফিরে পাওয়া আর সম্ভব না হলেও সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা, নতুন নামে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই জামায়াত নেতাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। সরকারবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষতি ও শক্তি ক্ষয় করার পক্ষে নন তারা।
চরমোনাইর পীরের সরকারবিরোধী কঠোর অবস্থানের পেছনে যতটা না রাজনৈতিক কারণ, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যক্তিগত আবেগ। দলটির আমিরকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মীরা লাঞ্ছিত করেছিল। এ ঘটনা পীর সাহেব তার জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর বলে মনে করে বিএনপির সঙ্গে সরকার পতনের আন্দোলনে শরিক হন। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় চরমোনাইর পীর সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বিএনপির সঙ্গ ত্যাগের ব্যবস্থা করার। নির্বাচনের আগে ও পরে তিন দফা বৈঠক হয়। চরমোনাইর পীরকে শেষ পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় ম্যানেজ করা হয়েছে।
খেলাফত মজলিস, মরহুম মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী আন্দোলনের একাংশ, হাটহাজারী মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষকের নেতৃত্বাধীন সংগঠনের একটি অংশসহ অপর কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনকেও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ম্যানেজ করা হয়েছে। সরকারকে হটাতে ব্যর্থ হয়ে এখন নতুন সরকারের সঙ্গে শত্রুতা করা নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনা বলেই মনে করছেন তারা। ঝুঁকি না নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় চলার নীতি আপাতত অনুসরণ করে চলবেন তারা।