Thikana News
০৮ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

ছাত্রকে গুলি ও রাতে শিক্ষার্থীকে কল করার বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে যা বললেন সেই শিক্ষক

ছাত্রকে গুলি ও রাতে শিক্ষার্থীকে কল করার বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে যা বললেন সেই শিক্ষক



 
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের পিস্তলের গুলিতে এক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। ৫ মার্চ (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেডিকেল কলেজটিতে গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।  অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়।  

এরপর কমিটির সদস্যরা থানায় গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. রায়হান শরিফের সঙ্গেও কথা বলেন।  এ সময় ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীকে গুলি করেছেন বলে তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন।  তিনি দাবি করেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে তিনি এই গুলি করেছেন।

গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর নাম- আরাফাত আমিন তমাল। তিনি ওই মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তমালের বাড়ি বগুড়া জেলায়। অভিযুক্ত হলেন ওই মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরিফ। তিনি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক বলে জানা গেছে। 

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক রায়হান জানিয়েছেন যে তার কাছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, দুটোই পিস্তল।  তবে দুটি পিস্তলেরই কোনো লাইসেন্স নেই। বিভিন্ন সময় আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্যরা জানতে চান রাতে কেনো শিক্ষার্থীদের কল করা হতো।  এই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক রায়হান তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, এটা তিনি করতেন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী করার জন্য।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস ও কলেজের সামনের সড়কে অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. রায়হান শরিফের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রায়ই শ্রেণি কক্ষে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ক্লাস প্রবেশ করতেন ডা. রায়হান। রাত হলেই ছাত্রীদের মুঠোফোনে ভিডিও কল ও এসএমএস দিতেন তিনি। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দিয়ে চা-মুড়ি এনে খেতেন। বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করার ভয় দেখাতেন।

এর আগে ৪ মার্চ (সোমবার) বিকেলে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যায় তাকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত ডা. রায়হান শরীফ কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক।  পরে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 

মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ডা. রায়হান শরিফ বিভিন্ন সময়ে ছাত্রছাত্রীদের কুপ্রস্তাব ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসতো।  ডা. রায়হান শরিফ কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক হওয়ার স্বত্ত্বেও তার নিজস্ব ক্ষমতা দেখিয়ে ফরেনসিক বিভাগে তিনি ক্লাস নিয়ে থাকেন। ক্লাস চলাকালীন সময় ছাড়াও প্রায় সময়ই তিনি পিস্তল নিয়ে চলাফেরা করতেন এবং পূর্বের ক্ষোভ থেকে আজ বিকেলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে পিস্তল নিয়ে হঠাৎ  ক্লাসের সময় শিক্ষক রায়হান আরাফাত আমিন তমালের ডান পায়ে গুলি করেন।  

এদিকে এই ঘটনার পর ওই দিন রাতেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন।  মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, আমার ছেলে আরাফাত আমিন তমাল (২২), শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জ-এ ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে বর্তমানে ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত আছে। অন্য ৩য় বর্ষের আইটেম পরীক্ষা শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের একাডেমি ভবনের ৪র্থ তলায় ডা. সামাউন নূরের কক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। এসময় আমার ছেলের বন্ধু আক্তারুজ্জামান বিকেল ৪টার দিকে ফোন করে বলে, আপনি দ্রুত সিরাজগঞ্জ চলে আসেন। আমার ছেলে আরাফাত আমিন তমাল হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমি তাৎক্ষণিক বগুড়া থেকে রওনা হয়ে সিরাজগঞ্জ এসে আমার ছেলেকে সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে সংকটাপন্ন অবস্থায় দেখি। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার ছেলে আরাফাত আমিন তমালের ক্লাসমেটসহ তার অনেক সহপাঠী জানান, আসামি কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের লেকচারার। তিনি সর্বদা শিক্ষকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। তিনি সবসময় ব্যাগে অস্ত্র ও ছোরা নিয়ে ক্লাসে এসে অস্ত্র টেবিলের ওপর রেখে ক্লাসে লেকচার দিতেন। ছাত্রছাত্রীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্লাসে না আসতে বললে তিনি তাদের ভয়ভীতি ও গুলি করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আজ পরীক্ষা চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে আসামি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের অহেতুক বকাবকি করেন। বকাবকির একপর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বের করে আমার ছেলেকে হত্যার করার উদ্দেশ্যে গুলি করলে গুলিটি আমার ছেলের ডান পায়ের উরুর উপরের অংশ লেগে গুরুতর জখম করে।

তিনি মামলায় আরও উল্লেখ করেন, সহপাঠীরা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে চাইলে আসামি অস্ত্র উঁচু করে সবাইকে ভয় দেখিয়ে বলে, তোরা যদি ওকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস তাহলে তোদের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলব। তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা চলাকালে আমার ছেলের বন্ধুরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে সিরাজগঞ্জ থানা পুলিশ, ডিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামিকে অস্ত্রশস্ত্রসহ থানায় নিয়ে যায়।

ঠিকানা/ছালিক 

কমেন্ট বক্স