প্রতিটি শিশুই কোনো না কোনো পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। যে ঘরে জন্মগ্রহণ করে সে আস্তে আস্তে বড় হয়। হাঁটতে শেখে, লেখাপড়া করে একটার পর একটা ধাপ অতিক্রম করতে থাকে শিশুটি। এই শিশু যে ঘরে জন্মগ্রহণ করে, যাদের মাঝে বড় হয়, সেটাই তার পরিবার। আর পরিবারের লোকজনই তার কাছে আপনজন। এ পরিবারের লোকজন তাকে সব সময় আগলে রাখে। তার বিপদ-আপদের সময় তাকে একলা করে রাখে না। এই পরিবারের লোকজন একে অপরকে যত্ন করে, তাই তারা কেউ কাউকে অবহেলা করে না।
যখন একটি মানুষ একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, তখন তার সেই পরিবারের প্রতি দায়িত্ব এসে যায়। তারপর এই দায়িত্ব ও কর্তব্য তাকে পালন করতে হয়। পরিবারের মানুষগুলোর ইচ্ছা-অনিচ্ছা নির্ভর করে তারই ওপর। পরিবারের একজন আরেকজনকে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে রাখে, যাতে কেউ তাদের ক্ষতি করতে না পারে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলোই ধরণির আসল রূপ দেখতে পায়। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ভালো খাবার খাওয়া এবং বিশ্রাম করার চেয়ে ভালো আর কিছুই নেই।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যক্তি পরিবার থেকে স্বীকৃতি পায় এবং পরিবার থেকেই সবকিছু শিখতে পারে। পরিবার সকল মানুষকে একত্রিত করে এবং সকলেই একে অপরকে সুখে-দুঃখে সমর্থন করে। পরিবার ছাড়া আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ। পরিবার হলো একজন ব্যক্তির শক্তি, যা তাকে সমস্ত সমস্যা মোকাবিলা করার সাহস দেয়। যার একটি ভালো পরিবার আছে, সে পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখে জীবনযাপন করে। পরিবারকে আগে ভালোবাসতে শেখো! তবেই বাকি পৃথিবীর লোকেরা তোমায় ভালোবাসবে। পৃথিবীর কাছে তুমি শুধু একজন। কিন্তু তোমার পরিবারের কাছে তুমি পুরো পৃথিবী।
পরিবারের সঙ্গে থাকলে দুঃখ অর্ধেক হয়ে যায় এবং সুখ দ্বিগুণ হয়ে যায়। যে পরিবার একসঙ্গে বসে খায়, সে পরিবারে সর্বদা সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি থাকে। যে ব্যক্তির অন্তরে তার পরিবারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা থাকে, সেই ব্যক্তি অবশ্যই সফল। পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ হয়। কিন্তু কখনো একে অপরের হাত ছাড়ে না। প্রত্যেক মানুষের কাছে পরিবারই তাদের প্রথম ভালোবাসা। মানুষ সারা বিশ্বের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে পারে! কিন্তু সে তার পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে এক দিনও বাঁচতে পারে না।
যারা শুধু টাকাকেই তাদের পরিবার মনে করে, সে জীবনে কখনো সংসারের সুখ পেতে পারে না। একটি পরিবার তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন তার কেন্দ্রে থাকেন একজন মাতৃরূপী কেউ, যিনি সবাইকে আগলে রাখেন। অর্থ উপার্জনের সার্থকতা তখনই আসে, যখন আপনার উপার্জিত অর্থ পরিবারের কাজে আসে। আমাদের ভালো অভ্যাস এবং ভালো মূল্যবোধ পরিবারকে একসঙ্গে রাখে এবং এটি ঘরটিকে স্বর্গের মতো করে তোলে। রুটি-রোজগার করা বড় কথা নয়, কিন্তু পরিবারের সঙ্গে বসে একসঙ্গে রুটি খাওয়া সবচেয়ে বড় ব্যাপার।
যেখানে সূর্যরশ্মি আছে, সেখানে আলো আছে, আর যেখানে ভালোবাসার ভাষা আছে, সেখানে পরিবার আছে। তোমার বাইরের জগতের প্রভাব যেন কখনোই তোমার পরিবারের সদস্যদের ওপর না আসে! তবেই তুমি জীবনে সুখী থাকতে পারবে। পরিবার হলো সেই জায়গা; যেখানে সুখ আছে, মজা আছে এবং অনেক শিথিলতা আছে। পরিবার আমাদের শক্তি! তাই পরিবারকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। যেকোনো মানুষের আসল শক্তি হলো তার পরিবার। ভালোবাসা এবং স্নেহের আরেকটি নাম পরিবার। যেকোনো শিশুর চরিত্র পরিবারেই তৈরি হয়।
একমাত্র পরিবারই এমন জায়গা, যেখানে তুমি তোমার মনের কথা খুলে বলতে পারবে কোনো ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই। বাকি সবার সামনে তোমায় একটু হলেও বুঝেশুনে কথা বলতে হবে। একটি ভালো পরিবার একজন ব্যক্তিকে শক্তি ও সাহস দেয় এবং তার সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একতা হলো একটি সুখী পরিবারের মূল ভিত্তি! তাই পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, কেউ কখনো কারও হাত ছাড়বে না। তবেই জীবনে সুখী হতে পারবে। পরিবার হলো জীবনের প্রতিরক্ষামূলক ঢাল! যেখানে একজন ব্যক্তি শান্তি অনুভব করে। তোমার পরিবার বেছে নেওয়ার ক্ষমতা তোমার নেই, ওরা ভগবান প্রদত্ত। ঠিক যেমনভাবে তুমি তাদের কাছে ভগবান প্রদত্ত। আপনার পরিবারকে ভালোবাসুন! তাদের সময় দিন এবং একে অপরের সেবা করুন।
এই পৃথিবীতে খুব কম মানুষই আছে, যারা পরিবারের সঙ্গে একবেলা খাবার খায় না। পরিবার একটি জাতি তৈরি করে এবং জাতি বিশ্ব তৈরি করে। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, পরিবার সব সময় আপনার সঙ্গে একই আচরণ করে। পরিবার হলো জীবনের শক্ত ভিত্তি। ভালোবাসার অপর নাম পরিবার। আপনার পরিবারকে সময় দিন। এতে ভালোবাসা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক মজবুত হয়। আমাদের পরিবার আমাদের পথপ্রদর্শক। পরিবার আমাদের উচ্চতায় পৌঁছাতে অনুপ্রাণিত করে এবং যখনই আমরা হোঁচট খাই, তখন আমাদের সমর্থন করে। পরিবার ছাড়া প্রতিটি মানুষ এই পৃথিবীতে একা। পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হলো পরিবার।
একটি সুখী পরিবারে প্রত্যেক সদস্য পরস্পরের পরিপূরক হয়। আর অসুখী পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের মূল্য দিতে জানে না। যেকোনো বিপদে শুধু তোমার পরিবারই তোমার পাশে থাকে। যেকোনো শিশুর প্রথম স্কুল হলো তার পরিবার। ভালোবাসার অপর নাম পরিবার। যখন সারা পৃথিবী তোমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তখন কয়েকজন থাকবে, যারা তোমার সঙ্গ ছাড়বে না। তোমার সব বিপদে তোমায় সাহস জোগাবে। তারা হলো তোমার পরিবারের সদস্য। কে কতটা ধনী, তা আপাতভাবে হয়তো তার ধন-সম্পত্তির পরিমাণ দেখে বোঝা যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে-ই ধনী, যার কাছে পরিবারের ভালোবাসার সম্পদ আছে। যে পরিবারের মধ্যকার ঐক্য থাকে, সেই পরিবার সর্বক্ষেত্রে সুখী ও সমৃদ্ধ হয়।
দুনিয়ার বাকি সবাই একদিকে আর তোমার পরিবার আরেকদিকে। তোমার পরিবার তোমার সুখে-দুঃখে তোমার সবচেয়ে বড় শক্তি। তাই পরিবারের মধ্যে সর্বদা শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করো এবং পরিবারের ওপর কখনো কোনো বিপদের আঁচ আসতে দিয়ো না। পরিবার ছাড়া জীবনের কোনো মানে নেই। সুখী পরিবার স্বর্গের আগের ধাপ। সব পরিবারেই কিছু ব্যক্তিগত নিজস্ব সমস্যা থাকে। কিন্তু সেই সমস্যা সামলেও যারা একসঙ্গে থাকতে পারে, তারা পরিবারের মর্যাদা জানে। একজন মানুষের কখনোই তার পরিবারকে নিজের স্বার্থের জন্য অবহেলা করা উচিত নয়। পরিবারকে আমরা একটা অক্টোপাসের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। যার দৃঢ় বাহুপাশ থেকে মুক্ত হওয়া অসম্ভব। পরিবারের শক্তি সেনাবাহিনীর শক্তির মতো, একে অপরের প্রতি আনুগত্যের মধ্যে নিহিত।
পরিবার মানেই কাউকে পেছনে ভুলে না যাওয়া। আপনার সত্য পরিবারকে যুক্ত করার মতো, বন্ধন রক্তের নয়। একে অপরের জীবনে শ্রদ্ধা ও আনন্দের। পরিবার হলো দিকনির্দেশক, যা আমাদের পরিচালিত করে। এটা হলো দুর্দান্ত উচ্চতায় পৌঁছানোর অনুপ্রেরণা এবং আমাদের সান্ত্বনা, যখন আমরা মাঝে মাঝে ব্যর্থ হই। একটিমাত্র পুষ্পিত সুগন্ধ বৃক্ষে যেমন সমস্ত বন সুবাসিত হয়, তেমনি একটি সুপুত্রের দ্বারা সমস্ত কুল ধন্য হয়। একটি কুবৃক্ষের কোটরের আগুন থেকে যেমন সমস্ত বন ভস্মীভূত হয়, তেমনি একটি কুপুত্রের দ্বারাও বংশ দগ্ধ হয়।
যখন তোমার শুধু হৃৎস্পন্দন ঠিক আছে বাকি সব অচল, তখনো স্বপ্ন দেখার পর্যাপ্ত সময় রয়েছে। বিশ্বের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পরিবার এবং প্রেম। আপনি একটি সুবৃহৎ পরিবারের অংশ হলে যেকোনো ফ্যামিলি ফাংশনে আপনার একটাই কাজ, ফটো তোলার সময় দাঁত বের করে হাসা। মধ্যবিত্ত মানুষেরা অন্যকে মূল্যায়ন করতে জানে, যা ধনীরা খুব কমই জানে। পরিবার শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, পরিবারই সবকিছু। নির্ভয়ে মা-বাবাকে তোমাদের সব সমস্যা বুঝিয়ে বলো, তাদের থেকে ভালো সাজেশন কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।
যাদের মন স্থির, মৃত্যু তাদের কাছে আরও একটা রোমাঞ্চকর অভিযান। কাজ আর কাজ, তবে সেটা পরিবার ও জীবনের জন্য করে থাকি। এটাই আসলে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের প্রত্যেক মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। তাই একজন আরেকজনের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে পড়ে। এভাবেই একজন পরিবারের মানুষ আরেকজনের ওপর ছায়ার মতো থাকে। একজনের বিপদ-আপদে আরেকজন পাশে দাঁড়ায়। দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে পরিবার। ভয়, যন্ত্রণা, অনিশ্চয়তা নিয়েই শুরু করো, কিন্তু থেমে থেকো না।
প্রকৃতি আমাদের কিছু দুর্দান্ত ব্যাপার উপহার দিয়েছে। পরিবার হলো তারই মধ্যে অন্যতম। এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক নিজের বাবা, যে ছেলে গোটা ছাত্রজীবন তার বাবার সঙ্গে বসে রাতের খাবার খাবে, সে কোনো দিনই নীতি থেকে বিচ্যুত হবে না। আমরা বড় হতে এত বেশি ব্যস্ত থাকি যে কখনো কখনো এটাই ভুলে যাই যে আমাদের বাবা-মায়েরাও বৃদ্ধ হচ্ছেন, এত দিন তারা তোমাকে আগলে রেখেছেন, এবার তোমার পালা। আমাদের বাবা-মায়েরা আমাদের শক্তি জোগায়, আমাদের দেওয়া কষ্ট কখনো কখনো তাদের ভেঙে চুরমার করে দেয়, তবু তারা মুখ বুজে থাকে আমাদের মুখের দিকে চেয়ে।
লেখক : কলামিস্ট
                           
                           
                            
                       
    
 
 


 ড. রফিকুল ইসলাম 
                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
