Thikana News
৩০ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫


হ্যালোইন

হ্যালোইন



 
ঝরাপাতার গান যে এত মনোমুগ্ধকর, তা এখনকার বাতাসে তাকালেই বোঝা যায়। গাছে গাছে কত রঙের খেলা। এমনি রঙিন সময়ে বাড়তি সুন্দর যোগ হয় হ্যালোইন উৎসবকে ঘিরে। ভৌতিক আমেজেও যে ভালো লাগা আছে, তা প্রকাশ পায় যখন দেখি প্রত্যেক আমেরিকানের বাড়ির আঙিনা পামকিন আর নানা ধরনের ভূতের সাজসজ্জায়। একটা ক্লিনিকের দরজায় দেখলাম ভূতের সাজে ডাক্তার। মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে উৎসব মানে রং, উৎসব মানে ঢং। সবচেয়ে বড় কথা উৎসব মানে আনন্দ।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর হ্যালোইন উৎসব উদ্্যাপিত হয়, যা মূলত প্রাচীন সেল্টিক উৎসব ‘সামহেইন’ থেকে উদ্ভূত। এই উৎসবে মানুষ ভুতুড়ে পোশাক পরে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিষ্টি সংগ্রহ করে (ট্রিক-অর-ট্রিট) এবং বিভিন্ন ধরনের মজাদার ও রহস্যময় আয়োজনে অংশ নেয়।

আমেরিকান উপনিবেশবাদীরা প্রাথমিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হ্যালোইন আনার জন্য দায়ী। বেশির ভাগ উপনিবেশবাদী ছিলেন পিউরিটান এবং তারা মূলত ইংল্যান্ড থেকে এসেছিলেন। তারা ঐতিহ্যগতভাবে সেল্টদের বসবাসের সময় সামহেইন অক্টোবর, শীতের হালকা হিমেল হাওয়ায় ছেলে-বুড়ো সবাই অধীর অপেক্ষায় আছে কখন দিনের আলো শেষ হয়, সুয্যিমামা তার কাজ শেষে অস্ত যাবে। একটু অন্ধকার নেমে আসতেই সারা ইউরোপ আর আমেরিকায় শুরু হয়ে যায় ভূতের নৃত্য। পৃথিবীতে যত ভূত-প্রেত আছে, সবাই যেন এই রাতেই চলে আসে লোকালয়ে। বিভিন্ন রংবেরঙের ভুতুড়ে পোশাকে সজ্জিত এই জ্যান্ত ভূতদের ট্রিট দিতে সকলেই যেন অস্থির। এটিই ইউরোপ, আমেরিকার জনপ্রিয় হ্যালোইন উৎসব।
জাঁকজমকপূর্ণ পশ্চিমাদের জনপ্রিয় হ্যালোইন উৎসব : যুগ যুগ ধরে আমেরিকা ও ইউরোপের অধিবাসীরা ৩১ অক্টোবর রাতে হ্যালোইন উৎসব উদ্যাপন করে আসছে। অক্টোবর মাসজুড়ে এই অনুষ্ঠানের আমেজ লেগে থাকে ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে। এই উৎসবকে ঘিরে তাদের মাতামাতির শেষ নেই।

‘হ্যালোইন’ শব্দটির উৎপত্তি : মূলত ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্ট ধর্ম থেকে ‘হ্যালোইন’ বা ‘হ্যালোউইন’ শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। শব্দটি স্কটিশ ভাষার শব্দ ‘অল হ্যালোজ ইভ’ থেকে এসেছ। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে ‘হ্যালোজ ইভ’ শব্দটি একসময় ‘হ্যালোইন’-এ রূপান্তরিত হয়।

উৎসবের উৎপত্তির ইতিহাস : প্রায় দুই হাজার বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করত কেল্টিক জাতি। নভেম্বরের প্রথম দিনটি তাদের নববর্ষ বা ‘সাহ-উইন’ হিসেবে পালিত হতো। এই দিনটিকে তারা গ্রীষ্মের শেষ এবং অন্ধকারের বা শীতের শুরু মনে করত। তারা মনে করত, নতুন বছর শুরুর পূর্ব রাতটি পৃথিবীর জীবিত এবং মৃতের অবস্থানটি একটু ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। পৃথিবী ও মৃত ব্যক্তিদের জগৎ এক বিন্দুতে এসে মিলিত হয়। তখন মৃত ব্যক্তি ও তাদের আত্মা পৃথিবীতে ফিরে আসে। তারা যাতে ফসলের ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য মৃত আত্মাদের খুশি করতে সাউইন উৎসব পালন করত তারা।
প্রাচীনকালে মৃত আত্মাদের খুশি করতে পালিত হতো সাউইন উৎসব : মৃত আত্মাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য কেল্টরা নানা রকম খাদ্য ও ওয়াইন উপঢৌকন হিসেবে দরজার বাইরে রেখে দিত। আত্মার খারাপ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য বিভিন্ন রকম মুখোশ, পশুর খুলি ও চামড়া দিয়ে ভুতুড়ে সাজসজ্জায় নিজেদের সজ্জিত করত। আত্মার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য রংবেরঙের পোশাকে নিজেদের সজ্জিত করা থেকে ঘরকেও এভাবে সাজাত।

খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩ শতকে অধিকাংশ কেল্টিক অঞ্চল রোমান সম্রাটের অধীনে চলে আসে। তখন কেল্টিকদের সাউইন উৎসবের সঙ্গে রোমানদের একটি উৎসব যৌথভাবে পালন করা শুরু হয়। সাউইনের প্রাধান্য অবশ্য একটু বেশিই ছিল। অক্টোবরে পালিত হতো কেল্টিকদের সাউইন উৎসব। আর নভেম্বরের প্রথম দিনে পালিত হতো রোমানদের পোমোনা উৎসব।
হ্যালোইন উৎসবের চেয়ে এখন অনেক বেশি ব্যবসায়িক কিংবা বাণিজ্যিক। বড়দিনের পর সবচেয়ে বেশি আয় হয় এই ‘হ্যালোইন উৎসব’ থেকে, যেটাকে ঘিরে ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিবছর শত শত বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়ে থাকে। বাজারে দেখা যায় হ্যালোইন কস্টিউমের দোকান। কোথাও ডাইনি, কোথাও জলদস্যু, ভ্যাম্পায়ার, স্পাইডারম্যান, জম্বি এবং ব্যাটম্যানের বিভিন্ন পোশাকের বিক্রি বেড়ে যায় এই উপলক্ষে।

হ্যালোইন উৎসবকে কেন্দ্র করে দোকানসমূহে কেনাবেচা : সর্বজনীন উৎসব হিসেবে হ্যালোইন উৎসব বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। দিন দিন এর বিস্তৃতি বাড়ছে। এই উৎসবকে ঘিরে সারা বিশ্বে এই যে মাতামাতি, তার মধ্যে বাণিজ্য যেমন রয়েছে, তারই মধ্যে শিশু-কিশোরদের নিষ্পাপ আমোদও রয়েছে। বর্তমানে দিনটি ঘটা করে পালন করে ইউনিসেফও।
 

কমেন্ট বক্স