কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ২৪ মে ১৮৯৯ ও মৃত্যু ২৯ আগস্ট ১৯৭৬। বিশ শতকের প্রধান বাঙালি কবি ও সংগীতকার। তাঁর মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য, তা তুলনারহিত। তিনি এক যুগান্তকারী সাহিত্যিক। নানা শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি কবি। তিনি কবি নজরুল।
তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল অকিঞ্চিৎকর পরিবেশে। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামি শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজ্যদ্রোহের অপরাধে কারাবন্দী করেছিল। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
যে নজরুল সুগঠিত দেহ, অপরিমেয় স্বাস্থ্য ও প্রাণখোলা হাসির জন্য বিখ্যাত ছিলেন, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তার সকল সক্রিয়তার অবসান হয়। ফলে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যু অবধি সুদীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রযোজনায় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বিশ শতকের বাঙালির মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে তাকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তাঁর কবিতা ও গানের জনপ্রিয়তা বাংলাভাষী পাঠকের মধ্যে তুঙ্গস্পর্শী। তাঁর মানবিকতা, ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে দ্রোহ, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা বোধ এবং নারী-পুরুষের সমতার বন্দনা গত প্রায় ১০০ বছর যাবৎ বাঙালির মানসপীঠ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে।
গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।
পৃথিবী আমাকে শূন্যতায় বাঁধতে পাওে না অস্তিত্বে মাকে আগলে রেখেছি বলে।
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা থেকে আমাদের সবার ভালো লাগা কিছু কথা। কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি সম্মান জানিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালে।
নজরুলের কবিতা, বাণী, গান, সুর কিংবা গদ্য লেখা কোনটাকে ছেড়ে কোনটাকে বেশি ভালো লাগবে, সেটা বলা খুবই কঠিন। নজরুলের গান-কবিতা যাদেরকে মোহবিষ্ট করে রাখে, তারা এ কথা স্বীকার করবেন যে কাজী নজরুল ইসলামের যে সৃষ্টিসম্ভার সেখান থেকে ভালো লাগার বিষয় তুলে আনার চেষ্টা করার অর্থই হলো অতল সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া। নজরুলবোদ্ধারা যেটা পারেননি, আমরা অতি সাধারণ ভক্ত-শ্রোতা বই তো নই! কী করে সম্ভব আমাদের পক্ষে কাজী নজরুলের লেখা থেকে প্রিয় কিছু লাইন তুলে আনা। তবু সেই দুঃসাহসটা দেখাতে মন চাইল আমার। তার একটা কারণ আছে। কাজী নজরুল ইসলামের রচনাসমগ্র নিয়ে ইদানীং একটু নড়াচড়া করার চেষ্টা করছি আমি। সব যে বুঝে পড়ছি সেই দাবি আমি করছি না এবং সামান্য অংশ মাত্র পড়ার চেষ্টা করেছি। সেখান থেকে বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের কবিতায় কবির লেখা যে চরণগুলো আমার ভালো লাগার আমেজকে নাড়া দিয়েছে, সেগুলো এখানে শেয়ার করার চেষ্টা করছি। আমার চেষ্টা থাকবে বাকি কবিতাগুলো পড়ার সময় এভাবে ফুল কুড়ানোর মতো করে কিছু কথা কুড়িয়ে আলাদা করে রাখতে।
তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগা গান বা কবিতা, যেগুলো আমারও অনেক প্রিয়, সেগুলোর বাইরে সাধারণভাবে আমাদের কাছে বহু শ্রুত নয় এমন কবিতাগুলো থেকেই সংগ্রহ করেছি আজকের প্রিয় কথার তালিকা।
কাব্যগ্রন্থ বিষের বাঁশী : কবিতাÑজাতের বজ্জাতি
জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত করছে জুয়া। ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয় তো মোয়া। জানিস নাকি ধর্ম সে যে বর্মসম সহনশীল তাই কি ভাই ভাঙতে পারে ছোঁওয়া ছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল? যে জাত-ধর্ম ঠুনকো এত, আজ না হয় কাল ভাঙবে সে ত। যাক না সে জাত জাহান্নামে রইবে মানুষ নাই পরোয়া।
কবিতা-সত্যমন্ত্র
পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর, বিধির বিধান সত্য হোক। খোদার উপর খোদকারী তোর, মানবে না আর সর্বলোক। ঘরের প্রদীপ নিভেই যদি, নিভুক না রে কিসের ভয়? আঁধারকে তোর কিসের ভয়? সত্য যদি হয় ধ্রুব তোর, কর্মে যদি না রয় ছল, ধর্ম দুগ্ধে না রয় জল, সত্যের জয় হবেই হবে। আজ নয় কাল মিলবেই ফল। জাতের চেয়ে মানুষ সত্য। অধিক সত্য প্রাণের টান। বিশ্ব পিতার সিংহ আসন, প্রাণ বেদীতেই অধিষ্ঠান।
কবিতা-বিজয় গান
ওরে ভীরু, ওরে মরা, মরার ভয়ে যাসনি তোরা! তোদেরও আজ ডাকছি মোরা ভাই।
কবিতা-পাগল পথিক
মুক্তি সে তো নিজের প্রাণে, নাই ভিখারীর প্রার্থনায়। মরার মতন মরতে, ওরে মরণ ভীতু ক’জন পায়?
কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা : কবিতাÑবিদ্রোহী
আমি চির বিদ্রোহী বীর, বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।
কাব্যগ্রন্থ দোলনচাঁপা : কবিতা-বেলা শেষে
পাখি উড়ে যায় যেন কোন মেঘ লোক হতে সন্ধ্যা দীপ জ্বালা গৃহ পাণে ঘর ডাকা পথে। আকাশের অস্ত বাতায়নে অনন্ত দিনের কোন বিরহিনী কনে। জ্বালাইয়া কনক প্রদীপ খানি উদয় পথের পানে যায় তার অশ্রু চোখ হানি। আমার যে চারিপাশে ঘরে ঘরে কত পূজা কত আয়োজন, বতাই দেখে কাঁদে আর ফিরে ফিরে চায় মোর ভালোবাসা ক্ষুধাতুর মন। অপমানে পুনঃ ফিরে আসে, ভয় হয়, ব্যাকুলতা দেখি মোর কি জানি কখন কে হাসে।
কবিতা-পথহারা
বেলা শেষের উদাস পথিক ভাবে, সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে উদাস পথিক ভাবে। পথের পথিক পথেই বসে থাকে, জানে না সে কে তাহারে চাহে, উদাস পথিক ভাবে। হঠাৎ তাহার পথের রেখা হারায়, গহন ধাঁধার আঁধার বাঁধা কারায়। পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায় আর কি পুবের পথের দেখা পাবে উদাস পথিক ভাবে।
কবিতাÑউপেক্ষিত
কান্না হাসির খেলার মোহে অনেক আমার কাটল বেলা, কখন তুমি ডাক দেবে মা, কখন আমি ভাঙব খেলা? চাই যারে মা তায় দেখি নে, বফিরে এনু তাই একলা। পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে বক্ষে বিঁধে অবহেলা। আজকে বড় শ্রান্ত আমি আশায় আশায় মিথ্যা ঘুরে। ও মা এখন বুকে ধর, মরণ আসে ঐ অদূরে। আর সহে না মাগো এখন আমায় নিয়ে হেলাফেলা, চারদিকে মা প্রবঞ্চনা, ভালোবাসার গিল্টি সোনা। আজ মণি কাল ধূলিকণা, জুয়ার হাট এই প্রেমের মেলা। খুইয়েছি সব সাধের খেলায়, বুক ভেঙেছে হেলার ঢেলা। এখন তুমি নাও মা কোলে, নয় অকূলে ভাসাই ভেলা।
কবিতা-পূবের চাতক
সকাল সাঁঝে চেয়ে থাকি পূর্ব গগনের পানে, কেন যে তা, তার আঁখি আর আমার আঁখিই জানে। উদয়ঘাটে হাসে যখন পোড়ারমুখী শশী শশীর মুখে চেয়ে ভাবি শশী তো নয় দোষী। যেদিন আমি বিদায় নিব শেষের খেয়া বেয়ে জানি না তার আঁখি সেদিন থাকবে কোথায় চেয়ে।
কবিতা-পূজারিনী
বিশ্ব যারে করে ভয় ঘৃণা অবহেলা ভিখারিনী! তারে নিয়ে একি তব অকারণ খেলা? তারে নিয়ে একি গূঢ় অভিমান? কোন অধিকারে? নাম ধরে ডাকটুকু তা’ও হানে বেদনা তোমারে? কেউ ভালোবাসে নাই? কেউ তোমা’ করেনি আদর? জন্ম ভিখারিনী তুমি? তাই এত চোখের জল, অভিমানী করুণা কাতর।
কবিতা-আশান্বিতা
আবার কখন আসব ফিরে সেই আশাতে জাগব রাত। হয়তো সে কোন নিশুত রাতে ডাকবে এসে অকস্মাৎ। পোড়া চোখের জল পুড়ায় না কেমন করে আসবে ঘুম? এনে পড়ে শুধু তোমার পাতাল গভীর মাতাল চুম। কেমন করে আসবে ঘুম?
কবিতা-পিছু ডাক
সখি! আমার আশাই দুরাশা আজ তোমার বিধির বর, আজ মোর সমাধির বুকে তোমার উঠবে বাসর ঘর। বিদায় সখি, খেলা শেষ এই বেলা শেষের খনে, এখন তুমি নতুন মানুষ নতুন গৃহকোণে।
কবিতা-কবি রানী
তুমি আমায় ভালোবাস তাই তো আমি কবি, আমার এ রূপ-সে যে তোমার ভালোবাসার ছবি। তুমি ভালোবাস বলে ভালোবাসি সবি।
কাব্যগ্রন্থ ছায়ানট : কবিতা-চৈতী হাওয়া
শূন্য ছিল নিতল দীঘির শীতল কালো জল, তুমি কেন ফুটলে সেথা ব্যথার নীলোৎপল? আঁধার দীঘির রাঙলে মুখ, নিটোল ঢেউ এর ভাঙলে বুক
কোন পূজারী নিল ছিঁড়ে? ছিন্ন তোমার দল ঢেকেছে আজ কোন দেবতার কোন সে পাষানতল।
কবিতা-অবেলায়
বৃথাই ওগো কেঁদে আমার কাটল যামিনী, অবেলাতেই পড়ল ঝরে কোলের কামিনী। ও সে শিথীল কামিনী। খেলার জীবন কাটিয়ে হেলায়। দিন না যেতেই সন্ধ্যে বেলায়, মলিন হেসে চড়ল ভেলায় মরণ গামিনী। আহা! একটু আগে তোমার দ্বারে কেন নামিনি? আমার অভিমানিনী।
কবিতা-লক্ষ্মীছাড়া
আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন, শেষে সেই আমারে কাঁদায়, যারে করি আপনারি জন। আমি তবু কেন সজল চোখে ঘরের পানে চাই। নিজেই কি তা জানি আমি ভাই? আর কেউ হবে না আপন যখন সব হারিয়ে চলতে হবে, পথটি আমার নির্জন। আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন।
কবিতা-বিদায় বেলায়
হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না, ওগো যাবে যাও, বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না। হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা; আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না।
কী চিরন্তনী অনুভব। সেকাল-একাল ভবিষ্যতেও, অসাধারণ অতুলনীয় অনন্য এই গুণীর কদর কই? জাতিগত উত্থানের জন্য বড় বেশি প্রয়োজন নজরুলকে হৃদয়ে ধারণ করা। যারা করছেন আপনাদের প্রচেষ্টায় অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা, কে দেয় থুতু ও-গায়ে? হয়ত তোমায় স-ন্য দিয়াছে সীতা-সম সতী মায়ে। না-ই হ’লে সতী, তবু তো তোমরা মাতা-ভগিনীরই জাতি; তোমাদের ছেলে আমাদেরই মতো, তারা আমাদের জ্ঞাতি; আমাদেরই মতো খ্যাতি যশ মান তারাও লভিতে পারে, তাহাদের সাধনা হানা দিতে পারে সদর স্বর্গ-দ্বারে। স্বর্গবেশ্যা ঘৃতাচী-পুত্র হ’ল মহাবীর দ্রোণ, কুমারীর ছেলে বিশ্ব-পূজ্য কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন।
কানীন-পুত্র কর্ণ হইল দান-বীর মহারথী স্বর্গ হইতে পতিতা গঙ্গা শিবেরে পেলেন পতি, শান-নু রাজা নিবেদিল প্রেম পুনঃ সেই গঙ্গায়Ñতাঁদেরি পুত্র অমর ভীষ্ম, কৃষ্ণ প্রণমে যায়! মুনি হ’ল শুনি সত্যকাম সে জারজ জবালা-শিশু, বিস্ময়কর জন্ম যাঁহার-মহাপ্রেমিক সে যিশু! কেহ নহে হেথা পাপ-পঙ্কিল, কেহ সে ঘৃণ্য নহে, ফুটিছে অযুত বিমল কমল কামনা-কালীয়-দহে! শোনো মানুষের বাণী, জন্মের পর মানব জাতির থাকে না ক’ কোনো গ্লানি! পাপ করিয়াছি বলিয়া কি নাই পুণ্যেরও অধিকার? শত পাপ করি’ হয়নি ক্ষুন্ন দেবত্ব দেবতার। অহল্যা যদি মুক্তি লভে, মা, মেরী হ’তে পারে দেবী, তোমরাও কেন হবে না পূজ্যা বিমল সত্য সেবি’? তব সন্তানে জারজ বলিয়া কোন্ গোঁড়া পাড়ে গালি, তাহাদের আমি এই দু’টো কথা জিজ্ঞাসা করি খালি-দেবতা গো জিজ্ঞাসি-দেড় শত কোটি সন্তান এই বিশ্বের অধিবাসী-কয়জন পিতা-মাতা ইহাদের হ’য়ে নিষ্কাম ব্রতী, পুত্রকন্যা কামনা করিল? কয়জন সৎ-সতী? ক’জন করিল তপস্যা ভাই সন্তান-লাভ তরে? কার পাপে কোটি দুধের বাচ্চা আঁতুড়ে জন্মে’ মরে? সেরেফ্ পশুর ক্ষুধা নিয়ে হেথা মিলে নরনারী যত, সেই কামনার সন্তান মোরা! তবুও গর্ব কত! শুন ধর্মের চাঁই-জারজ কামজ সন্তানে দেখি কোনো সে প্রভেদ নাই! অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ-পুত্র হয়, অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়।
বিদ্রোহী কবি নজরুলের লেখা আমার অসম্ভব ভালো লাগা একটি কবিতা ‘বারাঙ্গনা’।



ড. রফিকুল ইসলাম


